হাত-পা বিহীন গুরুদাসপুরের মিজানুরের হাল না ছাড়ার গল্প

0
256

একটি পা ও হাত নেই, তবুও জীবন যুদ্ধে হার
মানেননি প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান!

গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি.
একটি পা ও একটি হাত নেই। ঘোড়ার গাড়িতে অন্যের জমি থেকে ধান বহণ করে সংসার চালায় প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান(৫০)। ৩৩ বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ও বাম পা কাটা পরে। শত চেষ্টায়ও পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাননি তিনি। তবুও থেমে নেই তার জীবন। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে চলছে তার জীবন-জীবিকা।
এক সময় ভাঙ্গুরা উপজেলায় তিনি ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। এখন তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী গ্রামে ঘোড়ার গাড়িতে ধান বহন করে জীবন-জিবীকা নির্বাহ করছেন। স্ত্রী ও তিন ছেলে এবং একটি প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় একটি ছুপড়ি ঘর করে বসবাস করছেন প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান।

জীবন যুদ্ধে হার না মা মিজানুর রহমান জানান তার জীবন যুদ্ধের গল্প। মিজানুর রহমান বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়ি গ্রামে। আমার বয়স যখন ১৭ বছর তখন একটি বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বাম হাত ও বাম পা কাটা পরে। আমার বাবা মৃত জব্বর আলী ফকির ছিলেন একজন অতি দরিদ্র কৃষক। অভাবের কারনে আমার সঠিক চিকিৎসাও করতে পারেনি তখন। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার জীবন যুদ্ধ। বর্তমানে আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াদুল ইসলাম(১১) আমার কাজে সহযোগিতা করে। মেঝো ছেলে রাজিকুল ইসলাম(৭) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় ও ছোট ছেলে রাজিবের বয়স ১ বছর এবং ৪ বছরের মেয়ে আজমিরা প্রতিবন্ধী।

ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে আয় ২৫০- ৩০০ টাকা। কোন কোন দিন কাজ থাকে না। শেষ সম্বল বলতে আমার তিনটি ঘোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারী ভাবে কোনরকম সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে আমি পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি কিন্তু সরকারী ভাবে আমাকে সহযোগিতা করা হলে আমার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারবো। প্রতিবন্ধীত্ব আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারও কাছে হাত না পেতে নিজের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। সেই থেকে এগিয়ে চলার অদম্য শক্তি নিয়ে এখনও ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।

প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানকে আশ্রয় দেওয়া মোঃ নজু আলী বলেন, মিজানুর রহমানকে তার জায়গায় আশ্রয় দিয়েছেন মানবিক দিক থেকে। কেননা আমাদের সমাজে এখনও অনেক মানুষ সুস্থ্য থাকার পরও সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান তা করেননি। তিনি পঙ্গুত্বকে হার মানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন জানালেন, আপনার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের বিষয়টি জানতে পারলাম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও তার পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করবো।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধসাংবাদিকরাই শুধু পাবলিকলিই আত্মসমালোচনা করে,আসুন আশাবাদী হই- আমীন আল রশীদ
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে নাটোরে মহিলা এমপি ঈদ সামগ্রিক বিতরণ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে