৫ মিনিটের গল্প – আশরাফ জুয়েল 

0
250

৫ মিনিটের গল্প- আশরাফ জুয়েল

রাত আটটা। আপনি মালিবাগ মোড় থেকে শ্যামলী যাবেন। অনেকক্ষণ যাবৎ একটা সি এন জি-র জন্য অপেক্ষা করছেন, কেউ যেতে রাজি হচ্ছে না। অথচ ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে আপনাকে শ্যামলী পৌঁছাতেই হবে। আপনার বসের মেয়ের বিয়ের দাওয়াত।

এক পর্যায়ে আপনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন এবং এক
সি এন জি ওয়ালাকে শ্যামলী না যেতে চাওয়ার জন্য বকাবকি করতে থাকলেন। আশপাশে আপনার সমর্থনে অনেক মানুষ জমা হয়ে গেছে ততক্ষণে। আপনার পক্ষে কথা বলাতে আপনার পকেটে আরেকটু সাহস জমা হয়েছে। এবার আপনি সেই প্রায় বৃদ্ধ সি এন জি ওয়ালাকে ড্রাইভিং সিট থেকে টেনে নামিয়ে আনলেন। ভিড়ের বৃত্ত ঠেলে কেউ একজন বলে উঠলো, কানাশুকা বরাবর টাইনা একটা থাপ্পড় দেন শালা শুয়োরের বাচ্চারে। এবার সাহস উপছে পড়ল আপনার পকেটে এবং আপনার কণ্ঠের উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। গলার কলার ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে আপনি ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়েও দিলেন, যেহেতু আপনার সাপোর্টার বেশী আর সি এন জি চালক বৃদ্ধ। তিনি আপনাকে বারবার বলছিলেন, স্যার আমার সময় শেষ, আমারে এহনই গাড়ি গ্যারেজে জমা দিতে অইব।

এই সব গণ্ডগোল দেখে ট্রাক ড্রাইভার থেকে ঘুষ খাওয়া শেষ করে অকুস্থলে এলেন কর্তব্যরত অফিসার, ভাবলেন এবার নির্যাতিত জণগনের একটু সেবা করা প্রয়োজন।

তিনি একটা ট্যাক্সি ডেকে তাতে আপনাকে উঠিয়ে দিলেন এবং ঐ সি এন জি চালককে আরো কয়েকটি কিল ঘুষি মারলেন। চালক বৃদ্ধ এবং দূর্বল, তাই তিনি কোন প্রতিবাদ করতে অপারগ। দূর্বলতা গরীবের না সারা রোগ।

আপনি ট্যাক্সিক্যাবে উঠে দাওয়াত খেতে যাবার পোশাক আশাক ঠিক ঠাক করে ফেললেন, ধস্তাধস্তিতে টাই এর নটটা নেমে এসেছিল, সেটা ঠিক করে নিলেন। ড্রাইভারকে গান ছাড়তে বলে ভাবতে থাকলেন হারামীটার একটা উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। এসিও ছাড়তে বললেন। মেজাজটা একটু ফুরফুরে লাগছে আপনার।

আপনি চলে যাবার পর সেই অফিসার সি এন জি চালকের গাড়ীর কাগজপত্র নিজের কব্জায় নিলেন। মামলা না দেবার শর্তে প্রায় ঘন্টা দুয়েক বসিয়ে রাখলেন এবং ছেড়ে দেবার সময় সি এন জি চালকের সে দিনের সমস্ত ইনকাম নিজের পকেটে পুরে নিলেন।

সারাদিনের ইনকাম হারিয়ে সেই বৃদ্ধ ড্রাইভারের চোখে বারবার ভেসে উঠতে থাকল আপনার আর তার বিধবা মেয়ের দুই বাচ্চার মুখ। আপনার জন্য ঘৃণা আর বাচ্চাদের জন্য করুণা। আজ তাদের জন্য দুধ কেনা হবে না, মালিকের টাকা জমা দেয়াও হবে না আজ। টাকা জমা না দিতে পারলে আগামীকাল গাড়ী পাওয়া মুশকিল হবে।

আপনি ততক্ষণে শ্যামলীর কাছাকাছি। ক্যাব বিজয় সরণী থেকে ডানে মোড় নিল। কিছুদূর এগিয়ে গিয়েই ট্যাক্সিক্যাব একটু শ্লো হলো, দুইদিক থেকে দুইজন ক্যাবে উঠে আপনার গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলল,” শুয়োরের বাচ্চা একটু চেঁচাবি তো ফাইড়া ফালামু। ল ক্রেডিট কার্ড বাইর কর।”

তিনটি কার্ডের সর্বোচ্চ শুষে নিয়ে আপনাকে শিশুমেলার সামনে ফেলে চলে গেলো ওরা। যাবার আগে আপনার ডান পায়ে ছুরি মেরে গেল।

আপনি বুঝতে পারছেন ঝাপসা রক্তের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন আপনি। পকেটে হাত দিলেন মোবাইল বের করার জন্য। কিন্তু পকেটে মোবাইল নেই। আপনার মনে পড়ল রাস্তায় ফেলে দেবার আগে ওরা মোবাইল দুইটা রেখে দিয়েছিল। অসহায় আপনি। এখান থেকে পঙ্গু হাসপাতাল বা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কতো কাছে। আপনি পথচারীদের কাছে সাহায্য চাইলেন। দুই একজন আপনার দিকে তাকিয়ে দ্রুত আপনাকে ত্যাগ করল, কেউ এগিয়ে এলো না। আপনার দৃষ্টি অন্ধকারময়। গভীরতর কুয়াশার দিকে ঢলে পড়তে পড়তে আপনার কল্পনায় ভেসে উঠতে থাকল সেই ট্যাক্সি চালকের কথা।
হঠাৎ আপনার মনে হলো রিকশাওয়ালার মত কেউ একজন এগিয়ে আসছে আপনার দিকে। এর পরের ঘটনার আর কিছুই মনে থাকবে না আপনার।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবাগাতিপাড়া তমালতলায় নৈশপ্রহরীদের বেঁধে ১০ দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি
পরবর্তী নিবন্ধএ্যাড. সোহেল রানা’র ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে