Home Blog Page 706

বনফুল কলমি

 কবি এ.কে.আজাদ লিখেছেন “কলমিলতা কলমিলতা-বিলের জলে ভাসো, মেঘ কাটলো চাঁদ উঠলো-একটুখানি হাসো”। কিন্তু বলাইচাঁদ মুখ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের মতই অযত্নে ও অলক্ষ্যে জন্ম নেয় একটি কলমি ফুল। কলমি Ipomoea acuatica মূলত জংগলি লতা হিসাবে পরিচিত।

কলমি আলাদা করে ফুলের মর্যাদা তেমন একটা দেয়া হয় না তার কারণ শাক হিসাবে আমাদের দেশে খাদ্য তালিকায় এর ব্যবহার। আমাদের আসে-পাশে অনায়াসেই এক রকম অবহেলার মধ্যে জন্মে এই ফুল সৌন্দর্য ও চমৎকারিত্বের সৌধরূপে প্রস্ফুটিত হয়েছে। বাংলার বিল-ঝিলসহ ছোট বড় বিভিন্ন জলাশয়ে বিশেষ করে বদ্ধ জলাশয়ে এই লতাগাছ বেশি জন্মে। তবে অযত্নের মধ্যে জন্মে কলমির স্নিগ্ধতায় প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার ঘটায়।

জীবন্ত এই ফুলটি বেঁচে থাকার সজীব দৃষ্টান্ত হিসাবে আমাদের সামনে প্রতিয়মান হয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রসরতা প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। প্রযুক্তির সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অগ্রসরতাও নেহাত কম নয়। তাই বিল-ঝিল ভরাট করে তৈরি হচ্ছে আবাসস্থল, ইটভাটা, ইন্ড্রাসট্রিস যার ফলে ভরাট হচ্ছে জলাশয় তাই হয়তো অনেকাংশেই কমছে কলমি। নদীমাতৃক এই দেশে যেখানে-সেখানেই আগে কলমি ফুল দেখা যেত।

এই ফুলের রূপ এতটাই আকর্ষণীয় যে পল্লী কবি জসীম উদ্দীন নিজেও কলমির স্নিগ্ধতায় বিমোহিত হয়েছেন। কবির রাখালী কাব্যে রূপসী বাংলার এক রূপসী নারীর রূপ বর্ণনায় কলমি ফুলকে উপমা হিসাবে ব্যবহার করেছেন। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্নভাবে কলমি ফুলের উল্লেখ লক্ষণীয়। ঐতিহাসিক নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় জলাশয়ে এখনও চোখে পড়ে কলমি ফুল। যার সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।

তবে প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান সময়ে হয়তো কলমি ফুল নিয়ে ভাবনা-চিন্তা তথা লেখা অতিসাধারণ কিছু মনে হতে পারে। তবে সত্যটা হল চিরযৌবনা এই কলমি ফুল খুব সাধারণ হয়েও অসাধারণ একটা কিছু হিসাবে নিজেকে হাজির করেছে আমাদের সামনে। -আলোকচিত্রটি নাটোরের সিংড়া উপজেলায় অবস্থিত চলনবিল অঞ্চল থেকে আজ সকালে তোলা।