আমি জানি না তাঁর মৃত্যু নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যায় কিনা। তবুও লিখলাম। চলে গেলেন প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর এক আত্মীয় জানান, ‘সোমবার রাত ২টার দিকে ঘুমের মধ্যে ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। ভোর ৪টার দিকে খালুকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।’ সকল সংবাদ মাধ্যমে এই খবর খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে। সাথে ছিল তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন কাহিনী। ১৯৪২ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর স্ত্রী সেলিনা নওরোজ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক; বড় সন্তান (মেয়ে) কারিশমা ফারহিন চৌধুরী পেশায় পুরকৌশলী এবং ছোট সন্তান (ছেলে) কাশিফ রেজা চৌধুরী ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি করেছেন। দুইজনই থাকেন বিদেশে।
জানা গেলো না, গভীর রাতে তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁর পাশে কেউ ছিল কিনা! ঘরে কি তিনি একাই থাকতেন? “রাত ২টার দিকে ঘুমের মধ্যে ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়।” এই বিষয়টি কে প্রথম জানতে পারলেন, কিভাবে? ঘরের দরজা বন্ধ থাকতো, না খোলা? না, তাঁর মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো সন্দেহ করছি না। শুধু বলতে চাই, তাঁর মতো এতো গুণ সম্পন্ন বড় মাপের মানুষ আমাদের দেশে প্রতি বছর জন্মায় না। ধারনা করি, বৈধ টাকারও অভাব ছিল না। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সময় দ্রুত হাসপাতালে নেযার কেউ ছিল না।
প্রয়োজনের সময় সন্তান ও টাকা কোনো কাজেই এলো না। আর দেশ হারালো শতাব্দীর অন্যতম সেরা একজন মানুষকে। মৃত্যুকালে প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দৈনন্দিন জীবনে নিয়ম মেনেই চলতেন তিনি। কোনো মিটিং না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুপুরে বাসায় আসেন। খাবার খেয়ে একটু ঘুমান। এরপর আবার যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর মিটিং বা সেমিনার থাকলে তার জন্য আগেই নেন প্রস্তুতি। কাজের ফাঁকে পত্রিকা পড়েন। সন্ধ্যার পরে কোনো মিটিং বা দাওয়াত না থাকলে বাসায় চলে আসেন। বসে যান সকালের পত্রিকাগুলো নিয়ে। দিনে সাত আটটা পত্রিকা পড়া হয় তাঁর। এর মধ্যে টিভিতে রাতের খবর শোনেন। রাতের খাবার খেয়ে আবার কাজ নিয়ে বসেন। নিজের পড়ার ঘরে ই-মেইল দেখেন। দিনের যে কাজগুলো বাকি থাকে, সেগুলো শেষ করেন। এরপর স্কাইপে নাতির সঙ্গে কথা বলেন। ওর জন্য মাঝে মধ্যে রাত ১২টা পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়।