“নারীর স্তন:”- জাকির তালুকদার

0
400
জাকির-এনকে

নারীর স্তন: জাকির তালুকদার

যখন আমি ডাক্তার, নারীর স্তন তখন আমার কাছে মানবদেহের একটি অংশই কেবল।
এক যুবতীকে বলেছিলাম, তুমি নিজের স্তন যতবার দেখেছ, তার চাইতে বেশি নারীর স্তন আমাকে দেখতে হয়েছে ডাক্তারি করতে এসে।
রোগী দেখার জন্য যতটুকু মনোযোগ লাগে তারচেয়ে একটুও বেশি মনোযোগ পায়নি স্তন। অন্য কোনো অনুভূতি তো দূরের কথা। কারণ সেই সময় স্তন আমার কাছে জাস্ট একটি অ্যানাটমি। মাংসপেশি, ফ্যাটি টিস্যু, ব্লাড ভেসেল এবং গ্ল্যান্ডের সংমিশ্রণ। রোগ শনাক্ত করার জন্য আমাকে কেবল দেখতে হয়েছে অ্যানাটমি কোথাও একটু অন্যরকম হয়ে গেছে কি না। যেভাবে আমি রোগীর পালস দেখি, চোখের পাতা নিচের দিকে টেনে রক্তশূন্যতা দেখি, গোড়ালির ওপরে চাপ দিয়ে পানি জমেছে কি না দেখি, সেভাবেই স্তনও দেখি।
সেই আমি যখন প্রেমিক, যখন প্রিয় নারীর সাথে থাকি, তার দুই স্তনের উপত্যকায় মুখ ডুবিয়ে আমার ভালোবাসা জানাই, জানাই সে আমার আশ্রয়। আমি স্তনমন্থন করে আদর জানাই, সে-ও স্তনমন্থনের মাধ্যমে আদর গ্রহণ করে। স্তন তখন আমার কাছে নিছক অ্যানাটমি নয়, ভাবেরও বাহন। সেটি সুন্দর। সুন্দরতম।

কিন্তু সামাজিকভাবে নারীর স্তন নারী ও পুরুষ– উভয়ের কাছেই অন্যরকম কিছু। কারো কাছে বিকৃত লালসা, কারো কাছে বিড়ম্বনা।

অনেক দূরে যাওয়ার দরকার নেই। বান্দরবানের ম্রো পাড়াতেই নারীরা তাদের পিতা, ভাই, শ্বশুর– কারো সামনেই স্তন ঢেকে রাখার কোনো প্রয়োজন বোধ করে না। তাদের চোখে নারীর স্তন কোনো লজ্জা-অঙ্গ হয়ে ওঠেনি এখনো। কিন্তু কোনো বাঙালি ম্রো পাড়াতে ঢুকলেই নারীরা ঝটপট ঘরের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। বেরিয়ে আসে ব্লাউজ গায়ে দিয়ে। কারণ বাঙালিদের চোখ। চোখের ভাষা। যে ভাষার মধ্যে খেলা করে লোভ-কামনা-লালসা।

তথাকথিত সভ্য দেশগুলোর মতো আমাদের অর্ধসভ্য দেশেও নারীর স্তন কামনার সাথে সংযুক্ত হয়ে গেছে। বেশিরভাগ পুরুষ কোনো নারীর কাপড়ে ঢাকা স্তনও পরিমাপ করতে চায় যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায়। পুরুষের এই মনোভঙ্গিকে নিপুণভাবে ব্যবসার কাজে লাগায় বাণিজ্যিক সিনেমা, গানের অ্যালবাম, নাটকের সিরিয়াল, পত্র-পত্রিকা, এমনকী বইয়ের প্রচ্ছদও। লুটে নেয় টাকা। সেই টাকার সামান্য অংশ পায় সেই নারীও যে পর্দায় ও লেন্সে নিপুণভাবে উপস্থাপন করতে পারে নিজের ক্লিভেজ, অর্ধস্তন, তিন-চতুর্থাংশ স্তন, স্তনবৃন্ত, কাঁধ, পেট, উরু। মুখে বলে শিল্প। আসলে সবই সফট পর্ণো। পর্ণো-পণ্য।

পরিস্থিতি এমন যে, কোনো পুরুষ যদি অসাবধানে থাকা নারীর স্তনাংশ দেখতে পায় তাহলে ভাবে যে সে নতুন একটি দুনিয়া দেখল। এই চোখের খিধের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় রুচি-ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা-সামাজিকতা। এইভাবে তাকিয়ে থাকা বা ভিড়ের মধ্যে কোনো নারীর শরীর স্পর্শ করা যে যৌনবিকৃতি তা ভুলে যায় সেইসব কাপুরুষ-ঊনপুরুষের দল।
আর যেসব নারী নিজেদের স্তনাংশ দেখিয়ে বা স্তন প্রকট করার পোশাক পরে প্রকাশ্যে আসে, পুরুষের দৃষ্টির তোয়াক্কা না করার নাম করে আসলে পুরুষের লোভী দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, তারাও হয়তো জানে না এটি নারী স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখে না। তারাও জানে না এটিও একটি যৌনবিকৃতি। তার নাম এক্সিবিশনিজম।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“পাঠকেষু”- সমরজিৎ সিংহ’র কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“সুজলা সুফলা”- আসাদ জামানের কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে