“প্রাণখোঁজা দৃশ্য”-অর্জুন থিয়েটারওয়ালা

0
605
অর্জুন

প্রাণখোঁজা দৃশ্যঅর্জুন থিয়েটারওয়ালা

‘আপনারা ডাক্তাররা তো একটা লাইফ টাইমে নর্মাল মানুষের থেকে অনেক বেশি মৃত্যু দেখেন, কেমন লাগে এখন?’ জিগ্যেস করলাম ওঁকে। পরশু তিনিই আমার বুক থেকে ৫০০ এমএল, মানে পুরো হাফ লিটার ফ্লুইড বের করেছেন। তখন ওঁর সঙ্গে স্বামী অভেদানন্দ ও ডাক্তার নীলরতন সরকারের মধ্যে হওয়া সেই বিখ্যাত সংলাপটার গল্প করছিলাম। উনি হাসতে হাসতে আমার পিঠের বাঁদিকে শেষ পাঁজরের খাঁজে নিডল ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। আর আমি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের এই শীতে দরদর করে ঘামছিলাম। একবারই শুধু কাপুরুষজনোচিতভাবে ওঁকে বলেছিলাম, ‘ফ্যানটা একটু চালিয়ে দেবেন নাকি?’ উনি আঁতকে বলেছিলেন, ‘অ্যাঁ? আরে হয়ে এসছে। আর আধ ঘন্টা।’ পাঁজরে একটা নিডল ঢুকিয়ে জল বের করতে করতে ‘হয়ে এসছে’র মানে ‘আধ ঘন্টা’ শুনে আমি আর কিছু বলিনি। কপাল থেকে আঙুল দিয়ে ঘাম মুছে বিছানায় ফেলেছিলাম, শুধু। আজ, করিডোর দিয়ে দুজনে বেরুতে বেরুতে আনমনেই মৃত্যু নিয়ে কথাটা জিগ্যেস করলাম ওঁকে। বললেন, ‘প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত জানেন। এখন মেনে নিয়েছি। এই একটু আগে, আপনার ঠিক উলটো দিকের বেডের পেশেন্টটি চলে গেলেন। অনেক চেষ্টা করলাম। প্রথমে একটা ওষুধ দিলাম। তারপর টানা কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন মানে সিপিআর করে গেলাম। হল না। আবার কখনো কখনো এতে বেঁচেও যায়।’ বললাম, ‘হ্যাঁ দেখছিলাম আপনি সমানে পাম্প করে যাচ্ছেন, মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে চোখে ফেলে রেটিনা মুভমেন্ট হচ্ছে কিনা দেখছেন। আর দেখছিলাম, সেদিনের আমার মতো ঘামছিলেন, আজ।’ গলার স্টেথোস্কোপ গোটাতে গোটাতে শেষ বিকেলে ক্লান্ত ম্লান হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ কাজটা পরিশ্রমসাধ্য। কঠিনও।’ চারপাশে রোরুদ্যমান ও বিলাপরত পরিজন, সব কোলাহল থেকে নিজেকে সরিয়ে, জগতে আর সব কিছুকে মিথ্যে করে অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে ওঁর সেই প্রাণখোঁজা দৃশ্য, আমি ভুলব না।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“নিজের প্রতি “-সুবর্ণা গোস্বামী’র কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“প্রভুত্বকারী নয়” কবি সুপ্তি জামান’এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে