আকাশপথ
চন্দনা রায় চক্রবর্তী
হারানো প্রাপ্তি কলামে যে বিকেল খোয়া গেছে, সহজপাঠের শর্তহীন ঢেউঢোবা সেই বিকেল, আর কিছু গদ্য কবিতার অনির্দিষ্ট চরণ তার মাঝে সদালাপী মেঘেদের আঙিনায় বিছিয়ে ছিল নিবিড় এক আকাশপথ। গোধূলির কনে দেখা আলোয় অনন্ত সে পথের ভারসাম্য বিন্দুতেই আবিষ্কার করলাম জীবন চৌহদ্দির পরিসীমা। এর পরেই কি সেই নিষিদ্ধ গোলার্ধ যেখানে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না? জানিনা। সে প্রশ্নের উত্তর যারা দিতে পারতো, তারা উত্তর দিতে অনিচ্ছুক। এ পথের ঠিকানাও সবাই পায় না। একটা গোটা জীবন অনাবিল বক্ররেখায় বয়ে যায় সে পথের সন্ধানে। অন্যমনস্ক বিকেলের রাঙা আলোয় যখন চোখের সামনে রহস্যময় সেই মেঘউড়ান পথের হদিস খুলে গেল, প্রথমটা নিজের চোখের সাক্ষীও বিশ্বাস করিনি। আঙুল দিয়ে দু’চোখ ভাল করে কোচলে, আবার চেয়ে দেখলাম। দিনের শেষ প্রহরে, মুড়ে আসা ফুলের পাপড়ির অন্তিম ভঙ্গিমায় সে পথ বয়ে গেছে জীবনের অন্তহীন উদাসীনতা দিকে। বুকের ভেতরটা নিমেষে শূণ্যতার স্বরলিপি হয়ে হু হু করে উঠলো। তীব্র একটা জীবনবোধ দিগন্তরেখার দিক থেকে সমুদ্রের অনন্ত নীলাভ ছুঁয়ে আয়ুরেখার বহমানতার দিকে প্রসারিত হল। দিকচক্রবালের একদিকে আবহমান শূণ্যতার বুকে সোহাগী সমুদ্র, আর একদিকে আনীল আকাশ, তার গায়ে মৃত্যুর এই ভাবলেশহীন পথের হদিস। জীবনের তেপান্তর পর্ব পার হতে গিয়ে কতবার বাসা বদলালো, বদলালো প্রিয় মানুষের মুখ। গ্রহান্তরের ওই মায়াবী পথের দিকে অবিরাম চেয়ে থাকতে থাকতে এক সময় সেই সব অতীত মানুষের মুছে যাওয়া ডাকঘরের ঠিকানা জানতে পারলাম। উপলব্ধি করলাম সমস্ত পৃথিবী, শূণ্যতারূপী বিশালাকার এক বৃত্ত, তার একদিকে একলা আমি জীবাত্মা, অন্য দিকে সেই সব প্রিয় মানুষেরা। মাঝখানে ধোঁয়া ধোঁয়া আবেগের নদী মেঘলা। সবটুকু ইচ্ছেশক্তি জোড়া লাগিয়ে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করতেই, আমার পড়ার টেবিল, কবিতার খাতা, মোবাইলের কি-প্যাড সবটা ঘুরপাক খেয়ে মেঘকুয়াশার নদী হয়ে গেল, আর আমি, আমার সমগ্র অবচেতন সত্ত্বায় ডুবে যেতে লাগলাম , আর তারপর ক্র… ম…শ ডুবে যেতেই লাগলাম….