“আক্ষেপ”
খন্দকার মাহাবুবুর রহমান
যেমন জলপ্রপাত থেকে অবিরত জল পড়ে,
হেমন্ত শিশিরের মতো
তেমনি আমার হৃদয়ে জল ঝরছে;
আমার সকল কথা অকপটে বলে যাব।
আমার সময় ছিল খল প্রকৃতির,
এতদিন জলপাই গাছের শিকড়ে-
জমা ছিল আমার সকল বিরহ ব্যথা।
এখন বেতের ফলের মতো আমার
বিষন্ন,দুটি চোখের ভাষা বোঝেনা না কেউ।
এখনও আমার দেহ থেকে
বাঘের থাবার ক্ষতটা মুছে যায়নি,
আমার সময় ছিল খল প্রকৃতির
এখন কবিতার কাছে পুনর্জীবন চাই
আমার ভাগ্যের নিষ্ঠুরতা সে বোঝে না
তিনি হাসে, কখনও করে মৃত তিরস্কার।
আমার সকল কথা অকপটে বলে যাবো,
সেজুঁতি ছিল মাকাল ফলের মতন!
তখন সবুজ দিঘির মতো পরিপূর্ণ ছিল
জলের প্রপাত ছিল, নদী ছিল,
জলাশয় ছিল, আজ আর নেই।
যেমন মায়ের চোখে অনিমেষে চেয়ে থাকে
শৈশব মরে যায় – নদী,মাটি,শস্যের মতো-
মরে গেছে লক্ষ সেজুঁতির সন্ধানী চোখ,
আমার সময় ছিল খল প্রকৃতির
এখন আমি সংযত।
আমার সময় ছিল শিকারির শ্রেষ্ঠ সময়।
এখন বৃষ্টি এলেই কানে আসে আতর্নাদ
নদীর কূল ভাঙার শত সেজুঁতির ঘর ভাঙার।
আমার সময় হাওয়ায় মাটির গন্ধ ছিল,
প্রকাণ্ড যৌবন ছিল,বকুলের বাগান ছিল।
আজ জারুল ফুটলেই-
শেফালিরা ঝরে যায় বোবা কান্না বুকে চেপে।
এখনও আমার শৈশব দোলে ওঠে,
বাওয়ালীর নৌকার মত।
পৃথিবীর পরিবর্তনের সাথে জন্ম নিয়েছে,
একজন সিরাজউদ্দৌলার পরিবর্তে লক্ষ্য মির্জাফর
একজন ভাসানীর পরিবর্তে অসংখ্য ফেরেকবাজ
একজন বাংলা বাঘের পরিবর্তে অসংখ্য মেষ- শাবক,
একজন চন্ডীদাস‘এর পরিবর্তে অসংখ্য পদ্যকার
একজন রমনির পরিবর্তে অসংখ্য বিহন্নলা
একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে অসংখ্য রাজাকার
প্রাকৃতিক অগ্রগতি এভাবেই কি এগিয়ে চলেছে ?
হয়তো চলবে অনন্তকাল…