কখনো ছুটির অপেক্ষায় থাকি
কবি শাহিনা খাতুন
মানব জীবনের অংকুরিত রূপ
হতে পারে পুস্পাকার
অথবা ফসলাকার
ধারাবাহিকভাবে সবকিছু ফেলে চলে যেতে হয়।
যে মাত্রায় তুমি থাকো
অবিন্যস্ত অবিচল
আমি তাকে ছুঁতে পারিনি এখনো,
সূর্য চাঁদ মংগল বুধ শুক্র
এরা আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে আছে শক্ত করে।
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে তাচ্ছিল্য করেন
ফকির লালন মিলিয়ে যান
আর আমি রাধি খাই ঘুমাই
নথির গতির দিকে চেয়ে থাকি,
কখনো কপালে টিপ পরে বিভূতি খুঁজি
কখনো ছুটির অপেক্ষায় থাকি।
যখন সন্ধ্যা নামে
যখন দিগন্তস্থিত নানা রঙ
আমার চোখে আলোর বিন্দু হয়ে যায়
আমি ভ্রমণের অপেক্ষায় থাকি
আকাশগংগা এন্ড্রোমিডা
অথবা কোন সুপার ক্লাস্টারের পথে পথে
তোমায় দেখবো বলে।
আমার অক্ষমতার শেষ দিন যদি আসে
অথবা আমার মিলনের শেষ দিন যদি আসে
যদি মুখোমুখি হতে পারি কোনদিন
তখনই বলবো তোমায় ভালবাসি।
১৩/১১/২০২১
আমি বালক হয়ে যাই
কবি শাহিনা খাতুন
এক অসীম ধ্বনি ঘুরে বেড়ায়
আমার চারপাশে
আমার সুরবোধ, আমার মঁজরী
অপ্রস্তুত বলে হারিয়ে যায় আবার
অজ্ঞানতার ঘূর্ণাবর্তে।
স্থান কাল পাত্র নিরূদ্দিষ্ট হয়,
আমি বালক হয়ে যাই।
নতুন অংকুরোদগম
নতুন পাতা, নতুন ফুল
নতুন সুশোভামণ্ডল
কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
অরূণ পক্ষধর ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়
আবার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়,
সুতপা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকে
এক অসীম নিনাদের প্রতীক্ষায়।
আঁধার ঘুঁচিয়ে চলে নিরন্তর
কবি শাহিনা খাতুন
তোমাদের স্মৃতিচিহ্ন
আমার দেয়ালে ঘুরে বেড়ায়
কি গভীরভাবে বেঁচে আছো!
সেকথা অনেকেই জানে
উলুবনে মুক্তো ছড়াতে নেই বলে
যে যার মতে নিরব থাকে।
কেউ কেউ অহেতুক ঘেউ ঘেউ করে
তারাও জানে বড় বেশি মূঢ় সময় বয়ে যায়।
তদুপরি আগুনে পুড়তে পারো,
মহাজনদের সরব চলা
মহাজনদের নিরব চলা
যদি কেউ নাও জানে
এখনো আঁধার ঘুঁচিয়ে চলে নিরন্তর।
নদী যখন সই
কবি শাহিনা খাতুন
যদি টের পাও নদীর জীবন
যদি টের পাও ঢেউয়ের চলন
হেঁটে চলে যাও তীর ধরে একবার,
আস্তে আস্তে নাম ধরে ডাক দিও
বুড়িগঙ্গা পদ্মা মেঘনা যমুনা অথবা তুরাগ
গঙ্গা কাবেরী অথবা ধলেশ্বরী
হোক সে যে কোন নদী
তোমায় করবে বরণ।
চুপিচুপি কথা কইবে তোমার সনে
সখা হয়ে যাবে মনের গলিতে চলবে সে নিরবধি।
মন খারাপের কালে
জল ছুঁয়ে কথা বলে দেখো একবার
পরম মমতায় শীতল হবে দেহখানি তোমার।
মনটারে তুমি রেখে এসো তার কাছে,
নদীর সুখে নদীর দুঃখে সাথে যদি থাকো তুমি
দেখবে নদীও দিয়েছে উজাড় করে অমৃত সুধাখানি।
ব্লাকহোল
কবি শাহিনা খাতুন
আনন্দময় সংক্ষিপ্ত সময় খুঁজে নিতে
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রান্তরে
ঘুরে বেড়াও,
অতপর গোল গোল পরমাণু হয়ে
খুঁজতে থাকো তোমাকে,
দেখবে এক প্রকাণ্ড ব্লাকহোলের চারপাশে
তুমি শুধু প্রসারিত হচ্ছো।
তোমার বাসনাগুলো ব্রহ্মাণ্ডের
অসীম শূন্যতায় হারিয়ে গেছে
এখন তুমি দাঁড়িয়ে আছো
কারও মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায়।
৮/১১/২০২১ মিরপুর
যদি আর ফিরেও আসি
কবি শাহিনা খাতুন
কার্তিকের শেষ প্রায়
মধ্য দুপুর
বৃক্ষপত্রগুলো আরও সতেজ হয়েছে
যেনো ঝরে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে,
নির্মানাধীন মেট্রোরেলের নীচে
সংসার তাহার।
বাঁশপাতা খামে চিঠি লিখে দিয়েছি
অক্ষরগুলোকে গুড়ো গুড়ো করে
ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি,
আর কখনো যেয়োনা এপথে
শুকনো শিউলি ফুল
মধ্য দুপুরে যদি ডাকে
যদি বলে আমাকে একটু নির্জনতা দাও
প্রখর সূর্যতাপের বদলে একটু শীতলতা দাও
যদি আর ফিরেও আসি
আমায় তখন নতুন নামে ডেকো
ভুলে যাওয়ার জন্য জন্মেছি বলে
আমায় ডাকবেনা কেন?