করোনা টেস্টের নামে স্কয়ার ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে কী হচ্ছে, পড়ুন, খোদ একজন ডাক্তারের জবানিতে: এমত অবস্থায় সহকারী প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি।
এই অবস্থায় এতো বড় রম্যরচনা করতে বসবো আমার ব্রেইন ভাবেনি,শরীর সায় দেবে কি না জানি না। আমি “সাদিয়া আফরিন” নিতান্তই হতভাগ্য একজন ডাক্তার।
অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০%,বিপি ৮০/৫০ নিয়ে আর ১০০০সিসি নরমাল স্যালাইন শেষ করে শরীর যখন বিছানায় উঠে বসতেও রাজী না,তখন যেতে হয়েছে কভিড টেস্ট এর জন্য।
দ্বিতীয় দফায় সরকারি তে সিরিয়াল জোগাড় করতে পারিনি।বাবা মা আর দুশ্চিন্তা সহ্য করতে না পেরে ৪০০০ টাকা হাতে ছোট ভাইকে পাঠিয়েছি বেসরকারি তে সিরিয়াল দিতে।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল,ঢাকা।
ভাই ফোন করে জানালো সিরিয়াল মানার কোন বালাই নাই।তাড়াতাড়ি যেতে,৫টার মধ্যে গেলে টেস্ট হবে,নাহলে না। রক্ত দিতে হবে কিনা এই ভয়ে আগেই ভাইকে শুনতে বলেছি কি কি স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়…রিসেপশনিস্ট জানিয়েছে শুধু ন্যাজাল ও থ্রোট সোয়াব দিতে হবে,রক্ত দিতে হবে না।
হাতে ক্যানুলা,বড় এপ্রোন,মাস্ক,গ্লভস পরে হাঁপিয়ে যাওয়া আমি হাসব্যান্ড সহ রিক্সা থেকে নামতে ভাই স্লিপ হাতে ধরিয়ে বললো ৫০০ টাকা কম পড়েছে।
আমি জানি টেস্ট ৩৫০০ করে (সরকারি আদেশ ও মানি রিসিপ্ট সংযুক্ত)।৪০০০ এ ৫০০ টাকা উদ্বৃত্ত না থেকে উল্টা আরও ৫০০টাকা কেনো দিতে হবে আমার বোধগম্য হলো না।
স্লিপ হাতে দেখি নামের বানান ভুল “সাদিয়া আফরোজ” (স্লিপ সংযুক্ত), ডেংগু টেস্ট ৫০০ আর সার্ভিস চার্জ ৫০০ ধরে বিল হয়েছে ৪৫০০।
উল্লেখ্য আমার ভাই স্লিপ করার আগে কভিড টেস্ট এর দাম জিজ্ঞেস করে শুনে নিয়েছে ৩৫০০ টাকা,আর স্লিপ হাতে নিয়ে দেখে টাকা ৪৫০০ লেখা।নামের বানান ঠিক করতে বললে,তারা জানিয়েছে না করলেও অসুবিধা নাই।আর ঠিক করা যাবে না।
দোতলায় উঠে রিসেপশনে স্লিপ দেখিয়ে বললাম-
“নামের বানান ঠিক করেন আর আমি শুধু কভিড ১৯ টেস্ট করাবো,৫০০ টাকা ফেরত দেন”
এই কথা বলাতে তারা উত্তর করলো এই টেস্ট ৪৫০০ করেই। আমি বললাম,”সরকারি নোটিশ করা দাম ৩৫০০,বেশী দিয়ে কেনো করাবো!” শুনে মহাশয় অন্য দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো।মিনিট দুয়েক দাড় করিয়ে রেখে জানালো “এটা সরকারি হাসপাতাল না।এখানে এইটাই দাম।” আমি বললাম,”আমাকে আপনি সরকারি হাসপাতাল শিখাবেন!?দাম সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ঠিক করে দেওয়া আর আমি ডেংগু টেস্ট না করাতে চাইলে প্যাকেজ বলে চালিয়ে জোর করে করাবেন আপনি?!!”
সে বলে তাদের ওখানে এই সিস্টেমই,শুধু কভিড টেস্ট নিয়ম নাই।এরপর আমাকে ঝাড়ি মেরে বলে স্লিপ কাটার সময় আমি কোথায় ছিলাম?স্লিপ একবার কাটা হয়ে গেলে আর কিছু করার নাই।টাকা ফেরত হবে না।
আমার হাসব্যান্ড এপ্রোন পরা আমাকে দেখিয়ে বললো,”আমরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ দুইজনই ডাক্তার,আমরা জানি এই টেস্ট এর দাম কোথায়,কতো।আমি এই দামে এই টেস্ট করাবো না,আপনি টাকা ফেরত দেন।” টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব না জানিয়ে তারা ম্যানেজমেন্ট এ কথা বলতে বলে।
সেই মুহূর্তে রাগে,দুঃখে রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে আমি বললাম,”দেখি আপনার ম্যানেজমেন্ট ডাকেন।”
তখন ভিতর থেকে তাদেরই একজন বের হলে তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম,”রক্ত না নিয়ে শুধু সোয়াব দিয়ে কিসের ডেংগু টেস্ট করেন আপনারা!”
তখন তারা জানালো আমাদের ইনফরমেশন গ্যাপ হয়েছে, রক্তও নেওয়া হবে।আর অন্য কেউ বুঝে উঠার আগেই সমোঝোতা স্বরূপ তড়িঘড়ি টাকা ফেরত দিয়ে বাকীদের রোষানল থেকে মাফ পেতে চায় আর টেস্ট না করেই ফিরে আসতে হয় আমাকে।এবং আমি একজন ডাক্তার!
এভাবে আগে পরে কতোজনকে তারা ঠকিয়েছে ওই শরীরে আমার আর জানা হয় নাই।
সেই খনি থেকে বের হয়ে গেলাম আরেক হারামের কারবার দেখতে।
এবার স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড,ঢাকা।
ভিতরে যেয়ে নোটিস দেখলাম সকাল ৯-১০.৩০ এর মধ্যে টেস্ট করানো হয়।রিসেপশনিস্ট এর কাছে দাম জানতে পারলাম সেইম সিন্ডিকেট,৪৫০০ টাকা।কারণ জানতে চাইলে আংগুল দিয়ে দেখালো..
“ঐ যে দেখতে পাচ্ছেন ফ্লু কর্ণার,সেখানে যে ডাক্তার বসে (দেখে আমি শিওর আমার চেয়ে জুনিয়র হবে) তার ফি ১০০০ টাকা।”
আমি বললাম,”আমি নিজেই ডাক্তার। আমার শুধু টেস্ট করালে হবে।আগে ডাক্তার দেখাবো না।রিপোর্ট পেয়ে প্রয়োজনে পরে দেখাবো।”
তারা বললো এই নিয়ম নাই।টেস্ট করতে চাইলে ডাক্তার না দেখালে টেস্ট হবে না,ফ্লু কর্ণার এর ডাক্তার না দেখাতে চাইলে, চেম্বারে কনসালটেন্ট হলেও দেখাতে হবে,মানে ১০০০ টাকা তারা নিয়েই ছাড়বে,তা যে সূত্রেই হোক না কেনো।
আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে,দিনে ২৫ টা স্যাম্পল নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার বাবদ প্রতি রোগীতে যদি তারা ১০০০ করে ধরে তাহলে সেই ডাক্তারের দিনের ফি জমা পড়ে ২৫০০০ টাকা।তার প্রাপ্য থেকে ডাক্তার কি ২৫০০ টাকা দিনে পায়?একজনের ফি ও যদি ধরি ১০০০ করে কি পায়?
আর ডিউটি ডাক্তার ছাটাই চলছে,বেতন-বোনাস বন্ধ টাকা নাই দেখিয়ে!
দিন শেষে দোষ হয় ডাক্তারের!
কসাই হয় ডাক্তার?
আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্য ৩৫০০ টাকা নিয়ে যেয়েও অনিয়ম মেনে নিতে না পেরে আজ টেস্ট না করেই আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে।আর মরে গেলেও ওই ডাকাতদের কাছে টেস্ট করতে আমি যাবো না।
ডাক্তার উপস্থিত না থাকলে ভোক্তা আইনে অনেক নিয়ম পালন হতে দেখেছি।এখন এই প্রমান দেখিয়ে আমি ডাক্তার ভোক্তা হিসেবে কি আইনের প্রয়োগ পেতে পারি জানতে চাই।নাকি ডাক্তার বলে এই অধিকার আমার নাই!???
সেশন: ১০-১১
লেকচারার, ফিজিওলজি।
সূত্র- আমীন আল রশীদ ভাইয়ের ফেসবুক ওয়াল থেকে।