অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব
বিশেষ প্রতিবেদক : নাটোরের তৈরি স্বর্ণ অলংকারের সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশে। ফলে দিনে দিনে বেড়েছে স্বর্ণালংকারের চাহিদা। আর সেই চাহিদা পূরণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে কারিগররা এসে এখানে স্বর্ণ অলংকার তৈরীর কাজে লাগে। তাদের মধ্যে অনেকেই আঙুল ফুলে হয়ে গেছে কলাগাছ।
লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি, বসতভিটা, গাড়ি, বাড়ি কিনছেন। মালিক বনে গেছে শত কোটি টাকার। তবে সেই লুকানো অর্থের ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে তারা অবৈধভাবে বন্ধকী বাণিজ্যও চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
এ যেন স্বর্ণ ব্যবসায় রাজস্ব ফাঁকির এক মহোৎসব। রং-বেরংয়ের বাহারী জুয়েলার্সের শোরুম। চলছে রমরমা বাণিজ্য। ডিলিং লাইসেন্স থাকার কথা থাকলেও তা নেই অধিকাংশ দোকানের। শুধুমাত্র ট্রেড লাইন্সের জোরেই তারা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমান রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি সোনা লেনদেনের হিসাব না থাকায় ভ্যাট ট্রাক্সও হারাচ্ছে সরকার। উপজেলা গুলোতেও রয়েছে শত শত জুয়েলার্স। অথচ অধিকাংশ দোকানেরই নেই ডিলিং লাইসেন্স। শুধু ডিলিং লাইসেন্সই নয়, নেই এসিড লাইসেন্সও।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অনেকে এড়িয়ে যান তারা, দেন বিভিন্ন অযুহাত। অপরদিকে অনেকে ডিলিং লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিলেও দেওয়া হয়নি ডিলিং লাইসেন্স। একটি ডিলিং লাইসেন্সের জন্য প্রতিবছর সাড়ে ৩ হাজার টাকা রাজস্ব জমা দিতে হয়।
পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয় জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে। এছাড়া এসিড লাইসেন্সের জন্যও দিতে হয় অনুরূপ টাকা। ফলে এসব দোকানে লাইসেন্স না করায় প্রতিবছর কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাযোস আর অবহেলাকে দুষছেন সচেতন মহল। আর প্রশাসন বলছেন দ্রুত ব্যাবস্থা নেবেন তারা।
স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য একটি দোকানে ট্রেড লাইসেন্স থাকার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ভাবে ডিলিং লাইসেন্স থাকতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় নাটোরের বেশির ভাগ সোনার দোকানে নেই ডিলিং লাইসেন্স। আর এসিড লাইসেন্স না থাকলেও ব্যহার করছে এসিড। এসিড লাইসেন্স থাকলেও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে নবায়ন করা হচ্ছে না।
জেলা প্রসাশকের কার্যালেয়র সংষ্টিষ্ঠ শাখা সূত্রে জানা যায়, একটি ডিলিং লাইসেন্স পেতে জেলা প্রসাশকের কার্যালেয়র নেজারত শাখায় আবেদন করতে হয়। আর এসিড লাইসেন্স পেতে সংস্থাপন শাখায় আবেদন করতে হয়।
আবেদনকারীর তিন হাজার চারশত পঞ্চাশ টাকার চালানের কপি জমা দিতে হয়। এল .আর ফান্ডে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। বিবিধ ব্যয় আনুমানিক এক হাজার চার শত পঞ্চাশ টাকা। আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করা হয়।
সর্বমোট একটি ডিলিং লাইসেন্স পেতে দশ হাজার টাকা ব্যয় হয় এবং প্রতি বছর নবায়ণ করতে ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ডিলিং লাইসেন্সে এবং এসিড লাইসেন্স বাবদ একটি দোকান মালিকের প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
আবেদন করতে ট্রেড লাইসেন্স‘এর ফটোকপি, আবেদনকারীর এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ৩৪৫০ টাকা ভ্যাটসহ ট্রেজারি চালানের কপি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রয়োজন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা জুয়ালারী মালিক সমিতির তালিকাভুক্ত সদস্য ৩২০টি প্রতিষ্ঠান, এর মধ্যে ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের ডিলিং লাইসেন্স হালনাগত থাকলেও বাঁকী গুলোর নেই। জেলার প্রায় ১ হাজার স্বর্ণ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রিয় পাঠক- অনুসন্ধানী এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনটির দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চোখ রাখুন ‘নাটোর কণ্ঠ’ অনলাইন পত্রিকার পাতায়, আর আপনাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য অথবা অভিযোগ থাকলে অনুগ্রহপূর্বক কমেন্টস বক্সে লিখুন।