নাটোর কণ্ঠ : নাটোরের ভাষাসৈনিক মঈদুল ইসলাম। নাটোর পৌরসভার কানাইখালি ফায়ার সার্ভিসের পাশে আনুমানিক ১৮৮৪ সালে জন্মগ্রহন করেন। দীর্ঘ একশত বছর তিনি জীবিত ছিলেন। নাটোর জেলার শিল্প, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে রেখেছিলেন বিরল ভুমিকা এবং ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ রাজনীতিবিদ।
ভাষাসৈনিক মঈদুল ইসলাম‘এর ছেলে সাদেকুল ইসলাম জানালেন, তার পিতার বিভিন্ন অবদানের কথা। “ব্রিটিশ সরকারের একজন সেনা সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি অবসর নিয়ে চলে এসেছিলেন প্রিয় জন্মভুমি নাটোরে। এরপর রাজনীতির সাথে জড়িত হন। তিনি ধর্মভীরু ও ইসলামী মতবাদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তৎকালীন সময়ে মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ নেতা ছিলেন পরবর্তীতে মুসলীম লীগ থেকে মুসলীম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী যোগ হয়ে হলো আওয়ামীলীগ। তখন তিনি রাজনীতি থেকে সরে গেলেন। নাটোরের প্রয়াত জননেতা বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরী আমার পিতাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন রাজনীতিতে বহাল থাকার জন্য কিন্তু তিনি বোঝেননি।
তবে আমি মনে করি মুসলিমলীগ মানে একটি গোষ্ঠী আর আওয়ামীলীগ মানে সমষ্টি। আমার পিতা নাটোর জেলার প্রথম ফুটবল এ্যাসোশিয়েসন গঠন করেছিলেন। সাতটা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। প্রবীণ হিতৈষী সংগঠন , ইসলামীক ফাউন্ডেশন, মনোবীণা সংঘ, ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি-
এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিল। তবে সরকারি ও রাজনৈতিকভাবে তার অবদানের জন্য দেয়া হয়নি কোন সম্মাননা। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্তেও অর্থের অভাবে আমার একটা সরকারী চাকরী জোটেনি। আমার পিতা দেশের জন্য, সমাজের জন্য, ভাষার জন্য অবদান রেখেছেন।
বিনিময়ে কিছু পাবার আশাও করেননি। তার মৃত্যুর সময় সরকারি ও রাজনৈতিক মহলের কেউ তাকে দেখতে আসেনি। কেবলমাত্র এসেছিলেন এ্যাড. সাজেদুর রহমান খান। ১৯৫২ সালে যখন ঢাকায় ভাষা আন্দোলন শুরু হলো এবং সারা বাংলাদেশে সবত্র আন্দোলন শুরু হলো তখন আমার পিতা নাটোর জেলার নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন।
আমার পিতা সঙ্গে ছিলেন মরহুম দৌলতুজ্জামান দোলাসহ আরো অনেকে। তাদের নাম আমার মনে নেই। কোন মহল থেকেই আমার পিতার জন্য কোন ভুমিকা পালন করতে দেখলাম না। মূল্যায়ন করা হয়নি তাকে এবং আমাদের পরিবারকেও।”
বাংলা ভাষার জন্য, দেশের জন্য, জাতির জন্য সর্বোপরি সমাজের জন্য তিনি আজীবন সেবা করে গেছেন। অথচ একজন কর্মবীর হিসাবে যেটুকু স্বীকৃতি তার প্রাপ্য ছিল সেটুকু তিনি পাননি। তবে এলাকাবাসীরা জানান- সরকারিভাবে ও সাংগঠনিকভাবে তাকে যেন তার প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয়।