নাটোরে পরীক্ষামূলক কালো ধান চাষ করে সফল কৃষক

0
202
Tutul Mustafizur Rahman

নাটোর কন্ঠ : নাটোরে চাষাবাদ করা হয়েছে চীনের সপ্তদশ শতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মহামূল্যবান ব্লাকরাইস বা কালচাল । বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার লক্ষিপুর-খোলাবাড়িয়া গ্রামে এক বিঘা জমিতে ব্লাকরাইসের শস্য কর্তন করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তায় স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অর্গানিক পল্লী এগ্রো ফার্মস এন্ড নার্সারী গাজিপুর এলাকায় চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন। অর্গানিক পল্লী সূত্রে জানা গেছে, চীনে চতুর্দশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকে মিং যুগে কালো ধানের চাষ হতো। রাজা বা রাজপরিবার ছাড়া কারও কালো চালের ভাত খাওয়ার অধিকার ছিল না।

প্রজাদের জন্য এই চাল নিষিদ্ধ ছিল বলে এই চালকে বলা হয় নিষিদ্ধ চাল বা ফরবিডেন রাইস। পরবর্তী সময়ে জাপান ও মিয়ানমারে এই চালের চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই চাল আসে বাংলাদেশে। পার্বত্য এলাকায় এই চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল। থাইল্যান্ডে একে বলে কাও নাইও ডাহম।

কৃষি বিভাগ বলছেন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্লাভিনয়ের্ড বা এনথোসায়ানিন খুব বেশি পরিমাণে থাকায় এই চালের রঙ কালো হয়। এই উপাদানটির কারণে ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে প্রতিহত করতে সহায়তা করে।

কালো চাল ক্যানসার প্রতিরোধে অনন্য। ধমনিতে রক্ত চলাচল কালো চালের উপাদানের কারণে উচ্চ রক্তচাপ কম হয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই চালে আয়রন বেশি, কিন্তু শর্করা কম। আর এই চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর।

এই চালে শর্করার পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে কম। অন্যদিকে আঁশ ও ভিটামিন ‘বি’-এর পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কালো চালের ভাত খেলে হজম হয় ধীরে। ফলে অনেক সময় ধরে ক্ষুধা লাগে না। সেই সঙ্গে শরীরকে দেয় অফুরন্ত শক্তি।

সদর উপজেলার লক্ষিপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের গাজিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল নিজের জমিতে কালো ধানের গাছগুলো পরিচর্যা করছেন। এই ধানের শীষ সাধারণ ধানের চেয়ে বড়। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা জমিতে কালো ধান আবাদ করেছি।

প্রচলিত ধান চাষে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয় সে তুলনায় এই ধান চাষে সারের প্রয়োজন খুব কম। কীটনাশকও পরিমাণে কম লাগে। বিঘাতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ শত টাকা। ধান পেয়েছেন ১৬ মণ । বাজারে বীজ হিসাবে বিক্রয় করলে তার লক্ষাধীক টাকা লাভ হবে বলে তিনি জানান।

নাটোর সদর উপজেলা-কৃষি অফিসার মো. মেহেদুল ইসলাম বলেন, কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। এই চাল কিছু কোম্পানি প্যাকেটজাতের মাধ্যমে হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও স্থানীয়ভাবে কেজিপ্রতি ৫শ টাকায় বিক্রি হতে পারে। তবে এ চালের উৎপাদন নাটোরের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

নাটোরের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, কালো চাল সাধারণ চালের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। তুলনামূলক বিচারে অ্যানথোসায়ানিন, প্রোটিন ও ফাইবার অন্যসব চালের থেকে কালো চালে বেশি থাকে। চালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। তিনি বলেন, সাধারণ ধানের মতোই পরিচর্যা করতে হয় এই ধানের। বাড়তি কোনো কিছুই করতে হয় না। কালো চাল দেখতে যেমন কালো, এ চালের ভাতও কালো।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের লালপুরে আবারো ৫ ইমো প্রতারক চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে চাকুরী দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক গ্রেফতার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে