নাটোরে লাঠি-বাঁশির প্রয়োজন কেন হয়েছিল!

0
286
লাঠি-বাঁশি

নাটোর কন্ঠ : নাটোরে কেন প্রয়োজন হয়েছিল লাঠি বাঁশির ? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাটোর কণ্ঠ। কথা হয় নাটোরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের সাথে, তারা বলছেন- নাটোর ছিল অপরাধ জগতের স্বর্গরাজ্য। তৎকালীন সময়ে প্রকাশ্য দিবালোকে যেকোনো সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হতো, বন্ধ হয়ে যেত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হত সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ ও বড় ব্যবসায়ীদের সন্ত্রাসীদেরকে দিতে হতো মাসিক চাঁদা। সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের অত্যাচারে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিলো ব্যবসায়ীদের। দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল পিঠ। ঠিক সেই সময় নাটোরের স্বপ্নদ্রষ্টা আব্দুস সালাম উদ্ভাবন করেন এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সংগঠিত করে গঠন করেন লাঠি বাঁশি।

নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ চৌকিরপাড় মহল্লার পুতুল দাস এর সঙ্গে দেখা করলে তিনি নাটোর কণ্ঠকে জানান, ‘বাবারে তোমরা জানো হিন্দু ঘরে জন্ম লেওয়া এদেশে এক অপরাধ। কিজন্যে জানো বাবা? লাটি বাসির কোতা শুনতে আচ্চও বুলবো ! বসো, এডে দক্ষিণ চোকিরপাড় এইযে ঘরবাড়ি দেকিচ্ছোও এগুলা আগুনে পুড়ায় দিচিলো।

লুট করিচিলো । আমারে টাকা-পয়সা সুনা, দানা যা আচিলো। আমারেক মারিচিলো, বন্দুক লিয়ে আচ্চিলো। এই দেকো বাবা আমার চোকে লাগিচিলো। চিকিসার ওভাবে ভালো হয়নি। চোকটা মাজে মদ্যে ঝাপসা দেকি। মাতা ধরে। আর যারা এগলে করিচিলো তারা একনো আমারে সামনে ঘুরে। বিচার করবি কে?

তকন সালাম আচ্চিলো এটি একটা লাটি বাসি শুরু হছিলো। ভালই তো আচুনু, আর ওরাও তো ভয়ে আচিলো। একন আরামে ঘুমাতে পারিনে ওরে অত্যেচারে। মুনে হয় জাগাটুক বেচে ওপার চলে যাই আবার মুনে হয় জন্ম হচে এটি মরব যায়ে ওটি। তে বাবা লাটি বাসি আগের মুতন দরকার। ওরাও ভয় পাবি আমি ইটটু আরামে ঘুমাবো।

নাটোর নিচাবাজারের দিলু ষ্টোর‘এর স্বত্তাধিকারী দিলু সাহা নাটোর কন্ঠকে জানান, লাঠি বাঁশি তো সামাজিক আন্দোলন। আর সামাজিক আন্দোলন ছাড়া সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব না। মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের উপরদ্রপ বর্তমান সরকারের সময় অনেকটাই কম, সেইজন্য স্থানীয় সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

কিন্তু তারপরেও সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে। নাটোর শহরে লাঠি-বাঁশি যখন পূর্ণাঙ্গ জাগ্রত ছিল তখন অপরাধমুলক সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল। সমাজের অবক্ষয় যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে আর প্রতিরোধ গড়তে লাঠি-বাঁশির বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ভবেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ভক্ত নাটোর কন্ঠকে জানান, ‘একটা অস্থিতিশীল সময়ে লাঠি বাঁশি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয় । আমরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হই। কিন্তু লাঠি বাঁশি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হই।

আমরা ব্যবসায়ীরা কেন একত্রিত হতে পারবো না? আমরা আর কতদিন মার খাবো। ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক শক্তি অর্থনীতির চাবিকাঠি। আমরা সবদিক থেকে রাষ্ট্রকে সহায়তা করি। আমরা এত কিছু করার পরেও একজন মূল্যহীন মানুষ যাদের সামাজিকভাবে কোন মূল্যই নেই। তাদের কাছে আমরা নির্যাতিত কেন হবো?

ভাল কিছু অনেকের চক্ষুশূল হয়। এই প্রতিষ্ঠান করার পরে রাজনৈতিক নেতারা ভাবে তাদের নেতৃত্ব থাকবে না। অনেকেরই সমস্যা হয় তারা মনে করে সাধারন ব্যবসায়ীর পেছনে হাজার হাজার মানুষ আমরা নেতা আমাদের পেছনে লোক নেই।

তাই তারা সু-কৌশলে লাঠি বাঁশি স্থগিত করে দিয়েছিল। রাজনৈতিকভাবে লাঠি-বাঁশির কার্যক্রম স্থবির করে দিলো আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। তো আগামী দিনে অবশ্যই এর কার্যকারীতা বাস্তবায়ন করে চলবো, সর্বমহল থেকে যেন আমাদের সহযোগিতা করা হয়। স্থানীয় সরকারের কাছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষ হতে আমার দাবী।’

১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর আজকের দিনে জন্ম হয় কেন্দ্রীয় সন্ত্রাস চাঁদাবাজ প্রতিরোধ সংগ্রাম পরিষদ লাঠি-বাঁশি। সামাজিক আন্দোলনের এই সংগঠন উজ্জীবিত থাকবে যুগ যুগ ধরে। অলাভজনক ও অরাজনৈতিক এই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য নাটোর কন্ঠ পরিবার এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের সিংড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে লাঠি-বাঁশির ২২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে