পরের বউ – তন্ময় ইমরানের গল্প (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)

0
4280
Porar-bou

পরের বউ – তন্ময় ইমরানের গল্প

শহরতলির একদম শেষপ্রান্তে বাড়িটা। নিচতলা গুদাম যেটা বেশিরভাগ সময় বন্ধই থাকে। ভাড়া হয় না। দোতলায় একটা বর-বউয়ের ছিমছাম সংসার। আর চিলেকোঠায় থাকে জামিল। বাড়িওয়ালা থাকেন না, দীর্ঘদিনের ইংল্যান্ড প্রবাসী৷ দোতলার ভাই বাড়িওয়ালার কাজিন৷ ভাইটা সুদর্শন, আর ভাবি…।

যদি জামিলের বর্ণনায় বলি- ঢাকা ছেড়ে এসে সে এক স্বপ্নের জগতে বসবাস করছে৷ এমন সুন্দরি আর সেক্সি ভাবি যে বাসায় থাকে, সে বাসায় কোন্ যুবকের খারাপ লাগে! তাই শহুরে প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বুকে বিরহের তীব্র অনুভূতি জামিলকে এখন আর খুব বেশি স্পর্শ করে না। সে অনেকটা অভিমান করে, সবকিছু ছেড়েছুড়ে ওষুধ কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে যে মফস্বলের এই শহরে এসেছে, তার জন্য মোটেও আপসোস হয় না। বরং মনে হয় এই ভালো।

কাজ শেষে জামিল রাত করে বাড়ি ফেরে জোনাকির মিটিমিটি আলোগান দেখতে দেখতে। বাড়ির সামনে পাকা সরু রাস্তা চলে গেছে দূর গ্রামে। ওপারে রাস্তার বিপরীতে খোলা মাঠ। আর বাড়ির পেছনে মজা বিরাট দীঘি। তারপর ফসলের মাঠ। আরো দূরে সারি সারি গাছ, কোনো এক গ্রামের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে৷

দুপুরে বা রাতে দোতলাতেই খাওয়ার ব্যবস্থা জামিলের। দুপুরে না খেলে আগে থেকেই বলে দেয় ফোনে। হ্যান্ডসাম ভাই মফস্বল শহরের সবচেয়ে বড় বইয়ের দোকান চালান। এটার মালিকও ভাই নন। তার সেই প্রবাসী কাজিন। দোকান বন্ধ হয় গভীর রাতে। তারপর চায়ের কাপ কিংবা মদের গ্লাসে রাজা উজির মেরে ঢের রাতে বাড়ি ফেরেন।

কাজেই ভাবি একাই প্রতিদিন ভাত সাজিয়ে দেয়। ঘরে অবশ্য তখন ছুটা বুয়া কোনো কোনোদিন থাকে, আবার বেশিরভাগ দিনই থাকে না। যা কথা বলার ভাবিই বলেন। তার খুব ইচ্ছা নিজের ছোট বোনের জন্য জামিলকে পাত্র হিসেবে ঠিক করা। জামিল বোঝে ছোটবোনের বিজ্ঞাপন দিতেই ভাবি হয়তো তার সাথে বেশি কথা বলেন।

ছোটবোনের ছবি জামিল দেখেছে। সোজা বাংলায় অনিন্দ্য সুন্দরী। কিন্তু ভাবি যখন তার ছোটবোনের গল্প বলেন, তখন জামিলের মনের ভেতরে যে দৃশ্যকল্প ফুটে উঠে সেটা তার বোনের নয়, বরং ভাবির।

জামিল ভদ্রলোক, আবার পুরুষ৷ তবে সে কেবল পুরুষ নয়, ভদ্রলোকও। ভদ্রলোক এবং পুরুষ। পুরুষ বেশি, নাকি ভদ্রলোক বেশি- তা সে জানে না৷ তবে ভদ্রলোক বেশি কখনো কখনো, দিনের প্রায় পুরোটা সময়। রাতে হয়তো একান্ত নিভৃতে পুরুষ। কথা বলার সময় ভাবির হাল্কা ক্লিভেজ, খুব গরমের দিনে ম্যাগি হাতা বা স্লিভ্লেস জামা বা ব্লাউজ- এসবের মুখোমুখি প্রায়ই সে হয়। তাছাড়া ভাই নাকি সবসময় পছন্দ করে তার বউকে অন্যেরা কামনার চোখে দেখুক! নতুবা নাকি বউয়ের আকর্ষণ কমে যায়! এসব কথা ভাবি বলে। কখনো সখনো ছুটির দিনে ভাইয়ের সাথে খেতে বসলে ভাইও ঠাট্টা মশকরা করতে করতে বলে।

ভাবি বলে- তার বোনকে বিয়ে করলেই নাকি ভাই তার মনের মতো মেয়ে পেত! আর ভাইও বলে শালি তার লাখে এক!

রাত একটা বা দুটোর পর জামিলের অ্যাডাল্ট টাইম। চারদিক ছিমছাম। দোতলার ঘর থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসে আদিম শব্দ৷ চিলেকোঠায় শুয়ে এই ইন্টারনেটের যুগেও জামিলের সেই শব্দগুলোকে মনে হয় পৃথিবীর সেরা কামোত্তেজক চলচ্চিত্রের মতো। সে ভাবিকে ভাবে৷ লজ্জাহীনভাবে ভাবে। কোনো কোনো রাতে এমন হয় ভাই-ভাবির মিলনের শব্দ এতোটাই জোরালোভাবে তার মনের মধ্যে গাঁথে যে রীতিমত ওইসব ঘটনার প্রতিটি ক্ষণ পুঙখানুপুঙখভাবে দেখতে পায়। প্রতিটি শীৎকার যেন জীবন্ত বসন্তের কোকিলের গান।

কোনো কোনো রাতে ঝগড়া শুনতে পায়। ভাই টাল হয়ে এসে ভাবিকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে চড় থাপ্পড়ও মারেন। একদিন এমন হলো- ভাই খুব মাল খেয়ে এসেছেন, রোমান্টিক মুড। ভর জ্যোছনা। রাত দুটোর মতো বাজে৷ চিলেকোঠায় বাতি নিভিয়ে জামিল শুয়ে শুয়ে ভাবি-ভাবির চূড়ান্ত মিলন শব্দ চোখ বন্ধ করে কল্পনার প্রস্তুতি শুরু করেছে। সেই সময় তাদের আদরটা শুরুও হলো। জামিল বুঝতে পারলো পোশাক খোলা পর্ব চলছে- আর তারপরই ঝগড়া লেগে গেল। ঝগড়ার বিষয়বস্তু- ভাই কনডম আনতে ভুলে গেছেন৷ আর ভাবি রিস্ক নিবেন না। কোনোভাবেই তিনি বিশেষ জন্মবিরতিকরণ পিল খাবেন না৷ কেননা তাতে নাকি উনার কী কী শারীরিক সমস্যা হয়! ঝগড়া চড়তে থাকলো৷ এই পর্যায়ে জামিল কল্পনা করা ছেড়ে দিল। কেননা প্রেমরত নগ্ন নারী-পুরুষ কল্পনা করা যত উত্তেজনার, ঝগড়ারত নগ্ন যুগল কল্পনা ততোই বমির উদ্রেক ঘটায়!

একসময় সে চড়ের আওয়াজ শুনলো। আটমাস এই শহরে এসেছে মাসে অন্তত দুবার এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। জামিল অত্যন্ত বিরক্ত হলো ভাইয়ের প্রতি। এইসময়টা তার বরবরই মনে হয়- কালই ভাবিকে অ্যাপ্রোচ করে ভাইয়ের জীবন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবে! কেন যেন জামিলের মনে হয় ব্যাপারটা সে পারবে। পরদিন আর কিছুই করা হয় না।

সে যাইহোক সে রাতে প্রথম একটা ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটলো। ভাই-ভাবির ঝগড়ার পর বেশ কিছুক্ষণ সময় মোবাইলে কাটিয়ে সে যখন ঘুমাতে যাবে, তখনই আবিষ্কার করলো ভাবি ছাদে উঠেছেন। কেন যেন জামিলের মনে হলো ভাবিকে জানানো যাবে না, সে জেগে আছে। চুপিচুপি ছেলে মানুষের মতো শব্দ না করেই ভেজানো দরজা সামান্য ফাঁক করলো। দেখলো- জ্যোছনার তীব্র আলোয় সাদা নাইটি পরে ভাবি দাঁড়িয়ে আছেন- রাস্তার ওপারের ফসলের খেতের দিকে চেয়ে। এ রাস্তায় একটা খুব অল্প পাওয়ারের স্ট্রিট লাইট আছে। সেটা আর চাঁদের আলো দুটোই ভাবির বিপরীত দিকে ফলে ফুটে উঠেছে ভাবির পুরোটা শরীরের অবয়ব৷

নার্ভাস ভঙ্গিতে অন্ধকারের মধ্যে হাতিয়ে সিগারেটের প্যাকেট খুঁজে বের করলো জামিল। পাশেই লাইটার থাকে। খোঁজা থেকে শুরু করে ফস করে সিগারেট ধরানো পর্যন্ত ১০ সেকেন্ড সময়ও লাগলো না। আর সিগারেট ধরানোর পরই বুঝতে পারলো – ধুস বিরাট এক ভুল করে ফেলেছে। ভাবি টের পেয়ে পেছনে মাথা ঘোরালেন। তারপর আবার যেদিকে তাকিয়ে ছিলেন সেদিকে তাকিয়েই বললেন- জেগে আছো এখনো!

সেভাবেই খালি গায়ে জামিল বাইরে বেরিয়ে এলো ছাদে। প্রথমে থতমত খেলেও গুছিয়ে নিল নিজেকে। সে মোটামুটি ভালো মাপের সেলস গাই। পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া দ্রুত রপ্ত করেছে গত আটমাসে। সিগারেটে কষে এক টান দিল৷ কিছু বললো না। দাঁড়ালো ভাবির পাশে একটু দূরত্ব রেখে। এখান থেকে ভাবির স্বচ্ছ পোশাকের ভেতর দিয়ে সুগঠিত স্তন সাদা ডিম লাইটের মতো আলো ছড়াচ্ছে। ভাবির চুল উড়ছে।

– ঝগড়া শুনেছ?

জামিল উত্তর না দিয়ে আরেকবার সিগারেটে টান দেয়। অপেক্ষা করে আহ্বান কিংবা ভৎর্সনা, আবেদন কিংবা সম্পূর্ণ নতুন কিছু শোনার জন্য।

– তুমি রোজ রাতে সব শোন তাই না! এমনকি আমাদের…

ভাবি থেমে যায়। জামিল অবাক হয়। এতোক্ষণ যে যৌন তাড়না ছিল, তার সাথে মস্তিষ্কে যোগ হয়- কৌতূহল। ভাবি যদি জানেই সে তার ও ভাইয়ের গোপন যৌন জীবনের সবটা উপরে শুনতে পায়, তাহলে তারা কেন সাবধান হয় না?

সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে কৌতূহল চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় প্রশ্ন- আপনারা জানার পরও এতো শব্দ করেন!

ভাবি ঘুরে দাঁড়ায়৷ বলে- আচ্ছা পৃথিবীতে তো নানান জাতের মানুষ আছে তাই না! আমরা দুজন ধরো একটু অন্য রকম।

– মানে?
– তোমাকে বরং বলি কী হয়েছিল।

ভাবি থেমে যান। হয়তো হাতে পুরো রাত এবং সলাএর অনেকখানি সময় আছে তাই! হয়তো তার গল্প ততোটা বড় নয় যা দিয়ে সে জামিলকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখতে পারবে। হয়তো এই সময় নেওয়ার মানে গল্পটা গুছিয়ে নেওয়া কিংবা জামিলকে একটা আহ্বান জানানো সবকিছু করে ফেলার।

জামিল উত্তেজিত হয়ে আরেকটা সিগারেট ধরায়। তখনি সে বুঝতে পারে বিরাট একটা ভুল করেছে৷ রাতে ছোলার ডাল দিয়ে দেশি মুরগি খেয়েছিল। ভোর রাতে পর পর দুটো সিগারেট সেই পুরোপুরি না হজম হওয়া দেশি মুরগির প্রেতাত্মাকে জাগিয়ে তুলেছে। প্রচন্ড একটা মোচড় দিল পেটে।

নাহ, টয়লেটে না গেলেই নয়। সে ভাবিকে বলে উঠলো- ভাবি, আপনি বরং ইমোশনাল হয়ে আছেন। আর দয়াহ মিনিট সময় নেন৷ ভাবুন আমাকেই বলবেন কিনা! আমি ততোক্ষণে আসছি।

মনে মনে নিজের ভাগ্যকে শাপ-শাপান্ত করতে করতে জামিল ঘরে ফিরে ওয়াশরুমে ঢুকলো। এই সময়টা সে ভাবিকে নিয়ে নানান ফ্যান্টাসিতে কাটিয়েছে। কাজেই সব তাড়াহুড়ো করে সেরেও আধঘণ্টা ব্যয় হয়ে গেল আবার ছাদে ফিরতে। দেখলো ভাবি নেই…!

(পর্ব-০২)
(প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)

ঘুম ভাঙার পর একটা দুষ্টু স্বপ্ন দেখেছে বলেই ধরে নেয় জামিল। আগের রাতের ভাবি সম্পর্কিত ঘটনাটি তার কাছে স্বপ্ন ছাড়া আর কি-বা মনে হতে পারে। শুরু হয় আরেকটা দিনের।

তবে গত আটমাসের তুলনায় এই দিনটা নিঃসন্দেহে অন্যরকম। এতোদিন জামিল ইশারা পায়নি, কালরাতে ভাবি তাকে ইশারা কেবল নয়, সাড়াও দিয়েছে। অন্তত তেমনটাই তো!

কিন্তু ভাবি কেন অপেক্ষা করেনি? ভাই কি জেগে উঠেছিল? নাহ, তেমন হলে তো জামিল শব্দ পেতই। শহরতলির এই শেষাংশে প্রকৃতি এতোটাই নিরব যে মাঝে মাঝে ভর দুপুরে গাছের পাতা পেছনের দীঘিতে পড়ার মৃদু টুপ শব্দ পাওয়া যায়। সেখানে ভাই যদি মধ্যরাতে ভাবিকে ডাকই দিত তবে অবশ্যই সে শব্দ টয়লেটে বসেও জামিল শুনতে পেত!

সিভিল সার্জনের সাথে অ্যাপয়েনমেন্ট থাকায় জামিল তড়িঘড়ি করে রেডি হয়৷ এই সিভিল সার্জেন্ট জামিলের বন্ধুর বাবা। হতে পারে বিরহের ঠ্যালায় মফস্বলে দুম করে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের আন্ডাররেটেড চাকরি সে নিয়ে এসেছে, কিন্তু পড়েছে তো দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগেই। কখনো কখনো টাকার মূল্য থাকে না, অন্তত শান্তিমত বাঁচার চেষ্টার কাছে।

জামিলের শান্তি পাওয়া দরকার ছিল, টাকা নয়। ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকা বহু আগে পুরনো বইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিল, যার প্রতিটি পাতা সে বারবার পড়েছিল।
জামিল ভেবেছিল সেই মুখস্ত পাতাগুলো স্মৃতি থেকে কবিতার লাইনের মতো আওড়াবে এবং কিছুটা সময় শান্তিতে কাটাবে।

এমনকি মেয়েটিও হয়তো ধোয়া কাপড়ের মতো নিঙড়ে নিয়েছিল জামিলকে। তারপর চুলার উপর দিয়েছিল দ্রুত শুকাবে বলে। অথচ সে বাতাসে পড়ে গেছে খোদ চুলারই ভেতরে!

বের হবার সময় দোতলার দরজার ফাঁক দিয়ে ভাবিকে দেখলো জামিল এক ঝলক। কেন যেন তাকাতে একটু সংকোচ হলো। নিজেকে ধমক দিয়ে তবু তাকালো- ভাবি তখন অন্যকিছুতে ব্যস্ত, কাজের লোকের সাথে। সম্ভবত ডাইনিং ঘরের ফ্যানের ময়লা পরিষ্কার চলছে।

দুপুরে তার ফেরা হলো না। বন্ধুর সিভিল সার্জন বাবা তাকে বাড়িতে ধরে নিয়ে গেলেন। বন্ধু আছে জাপানে- উচ্চশিক্ষায়। প্রবাসী ছেলের বন্ধুকে পাওয়া মানে বাবার কাছে ছেলেকে পাওয়াই।

ভাবিকে কেবল একটা মেসেজ দিয়ে রাখলো জামিল- আজ খাবো না!

মেসেজ পাঠানোর পর তার মনে হলো সে একটা খারাপ ইঙ্গিতের মেসেজ দিয়ে ফেলেছে। ‘আজ খাবো না’ বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসিয়েছে, যার অর্থ অন্যরকম হতে পারে, বিশেষত কাল রাতের ঘটনার পর।

বন্ধুর বাবার বাড়ি থেকে বের হয়ে সারাদিনের পেন্ডিং কাজ সারতে সারতে রাত হয়ে গেল। বাড়ি ফেরার আগে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। সস্তা ১১০ সিসির মোটরবাইকে যখন সে বাড়ি ফিরলো- তখন বেশ রাত। ভিজে চুপসে গেছে। বাইকটা খুব সস্তায় এখানে আসার পরই কিনেছে। কাজেই রাস্তাতে একটু হ্যাপা দিয়েছে।

দ্রুত ঘরে উঠতে গিয়ে চিলেকোঠায় তার রুমে পৌঁছানোর শেষ ধাপের দু ধাপ আগে পৌঁছাতেই ধাক্কা খেল- ভাবি বৃষ্টিতে ভিজছে। তার শরীরে লেপ্টে গেছে জামা। বিদ্যুত নেই৷ মাঝে মাঝে আকাশের বিদ্যুত চমকে উঠলে, ঝলকে তাকে দেখা যাচ্ছে৷ বৃষ্টির রাতে একাকি এমন আবছা দেখা নারীকে অভুক্ত-কামার্ত পুরুষের ডার্টি মাইন্ড খুব দ্রুত চালু করে। জামিলের মনেও এলো হিন্দি সিনেমার উত্তেজক স্বচ্ছ পোশাকে নায়িকার বৃষ্টিভেজা দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি। ভাবি কি তবে তাকে নিচে আসতে দেখেই ছাদে এসেছে? ভাবি কি আজ নতুন করে কালকের ঘটনার একটা সুখকর ইতি টানতে চায়?

এমন উত্তেজনায় জামিলের পা কাঁপে। পা হড়কায়। এবং শেষ ধাপে ওঠার আগেই তার পা বেদম মচকে যায়!

না চাইতেও একটা অস্ফুট আর্তনাদ বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে। ভাবি উড়ে আসে ছাদ থেকে এক দমকা বৃষ্টি নিয়ে। তারপরের ঘটনাগুলো সিনেম্যাটিক। ভেজা ভাবি, ভিজে যাওয়া জামিলকে উঠতে সাহায্য করে। তার কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় জামিল৷ পা ভালো মচকেচে। ভেঙেছে কিনা তাই বা কে জানে! জামিল আবিষ্কার করে ভাবির কামিজ হাতাকাটা, রং হয়তো সাদা। তবে অন্ধকারে বোঝা যায় না ঠিকঠাক।

পৃথিবীর সব ফুলেই যে গন্ধ থাকে, তা নয়। তেমনি হয়তো পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গায় সুগন্ধি বৃষ্টি ঝরে, কালে-ভদ্রে। এই এখন যেমন এই ছাদে বকুলের গন্ধ ছড়ানো বৃষ্টি ঝরছে। সুবাসিত সেই বৃষ্টিতে ভাবির কাঁধে ভর দিয়ে জামিল নিজের চিলেকোঠার দিকে যায়। এসময় নারী দেহের পুরুষ আকাঙ্ক্ষিত অংশগুলোর স্পর্শ জামিল পায়। তবে শরীরের ব্যথার অনুভূতি মনে হয়, মনের কামের অনুভূতিকে মিইয়ে দেয়!

ভাবিতে ভর দিয়ে ঘর পর্যন্ত আসতে সময় লাগে। তবু মনে এই সামান্য ক্ষণ! ভাবি জামিলকে বাতি জ্বালিয়ে এককোণে রাখা চেয়ারে বসায়। বাতি জ্বালানোর পর একটু আগে মনে হওয়া কথাকে জামিলের ভুল মনে হয়- কামের অনুভুতি সম্ভবত মচকে যাওয়া পায়ের জন্য সেরা পেইন কিলার!

ভাবি পরে আছে সত্যিকার অর্থেই একটা স্লিভ্লেস কামিজ, যেটা আবার সাদা, যা আবার বৃষ্টিতে ভিজে সত্যিকারের স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। ভাই বাসায় নেই। এমন বৃষ্টির রাতে সে হয়তো পর্যাপ্ত বিলেতি মদ গিলে ভোররাতে বা সকালে বাড়ি ফিরবে। কাজেই আজ হয়ে যাবে সবকিছু!

ভাবি ব্যস্ত হয়ে তার লুঙ্গি, জামা ও গামছা এগিয়ে দিল। তারপর হঠাৎই খেয়াল করলো- জামিল ব্যথা ভুলে ড্যাব ড্যাব করে শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অপ্রস্তুত হয়ে বললো- তুমি চেইঞ্জ করো, আমিও জামা পাল্টে আসছি। তোমার ভাই আসবে না জানিয়ে দিয়েছে, পায়ে তেল মালিশ করে দিবো। খাবে এবং তারপর রাতভর গল্প করবো।

কাল রাতে যে সাহসী ছিল, আজ রাতে সে লজ্জা পেল কেন?

***
রাতভর জামিল গল্প শুনেছিল। কিছু কিছু প্রেমের গল্প থাকে বিশ্রি রকমের রগরগে৷ অথচ বেদনা থাকে তাতে, অথচ অপ্রাপ্তি আর কান্না থাকে তাতে৷ ভাবি তাকে শুনিয়েছিল সেরকমই এক গল্প। কমপ্লিট প্যাকেজ।

ভাবি শুনিয়েছিল- জার্মানির এক ছোট শহরে ঘুরতে গিয়ে কিভাবে ভাইয়ের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল, তারপর কিভাবে তারা ইউরোপ ঘুরতে বের হলো, এবং তারপর কিভাবে ভাবির জীবনে নেমে এলো বিষণ্ণতার দিন এবং একই সাথে ভাইয়ের জীবনেও!

কি পরিস্থিতিতে তারা ফিরে এলো দেশে- জামিল এক রাতে সব জেনে ফেললো। জেনে ফেললো, আর ভাবির কাছ থেকে পা মালিশও নিল।

অদ্ভুত হলেও সত্যি ভাবি যখন গল্প বলে ঘর ছাড়লো- জামিল তখন খুঁড়িয়ে ওয়াশরুমে গেল। না হিসু বা টয়লেট করতে নয়। হস্তমৈথুন করতে।

মৈথুন শেষের পর জামিল ভাবলো- একটা মেয়ে হেইট ক্রাইমের শিকার হয়ে গণধর্ষিত হচ্ছে, তার প্রেমিক একদল উগ্র শ্বেতাঙ্গের কাছে মার খাচ্ছে। দুর্ঘটনাটি তাদের দুইজনেরই জীবন পাল্টে দিয়েছে৷ এতোকিছু শোনার পরও তার মধ্যে কামবোধটা রয়ে গেল! বরং তীব্র হলো। দুঃখবোধের জোর তাহলে কামবোধের কাছে কিছুই না?

বিছানায় শুয়ে আবার ভাবির মালিশের কথা ভাবতে থাকলো। জামিলের মনে হলো, ভাই-ভাবির ঘটনার কাছে তার প্রেমিকার চলে যাওয়ার ঘটনা কিছুই না। তার দুঃখবোধ খেলো।

তারপর মনে হলো- ভাবি গল্প বলেছে ঠিকই কিন্তু লাউড সেক্সের কারণ, ভাই এবং তার মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে কিছুই বলেনি। এমনকি এটাও বলেনি তাকে কেন সিডিউস করা হচ্ছে। ভাবি কেন এতো খোলামেলা হাজির হন?

জামিল ঘুমিয়ে পড়ে।

***
ঘুম ভাঙার পর রিটাকে মনে পড়ে। আহ প্রাক্তন প্রেমিকা! ক্লাস টেনে বন্ধু মিজান পছন্দ করতো রিটাকে। দুর্দান্ত কবিতা লিখতো মিজান। জামিলের দায়িত্ব ছিল পৌঁছে দেওয়া।

‘সাজান’ নামে একটা হিন্দি সিনেমা ছিল। ঘটনা অবিকল সেরকমই। তবে বাস্তবে কিছু পার্থক্য তো থেকেই যায়।

জামিল সবসময়ই দাবি করতো কবিতা তার লেখা। মিজান কখনো নাম লিখতো না। রিটাকে সরাসরি বলতো না। মিজান তার এই প্রেমকে বশে আনার ব্যাপারে ইন্টারনেট, সোশাল মিডিয়া, ফোন এড়িয়ে- একটি শৈল্পিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কারণ সে একজন কবি ছিল।

রিটা কবিতা না বুঝলেও, না পছন্দ করলেও- ইন্টারনেট- ফোনের যুগে আদিম পদ্ধতিতে কাগজে লেখা কবিতার ব্যাপারটা পছন্দ করতো। সবসময়ই কবিতার সাথে যেত এক সেট চুড়ি। একেকবার একেক কালার। এটা অবশ্যই জামিলের আইডিয়া ছিল। কবি মিজানের নয়।

চুড়ি-ই হয়তো চুরি করেছিল রিটার মন। কিংবা হ্যান্ডসাম জামিল। লম্বাটে গড়নের জামিল ভারসেস স্থূল মিজান। যদিও মিজান কখনো সামনেই আসেনি রিটার। নাহ মিজান সেসময় ধোপে টিকতো না। তারপর আবার পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল জামিল। মিজান দেখতে কালো এবং অন্ধকার। পড়ালেখায় ডাল। কবিত্ব দিয়ে কিশোরী মনের কতোটা পাওয়া যায়!

প্রেমের দুনিয়ায় (না এটাকে বাজার বলতে জামিল নারাজ) রিটার ডিমান্ড ছিল। ৮-১০ বছরের বড় ভাই থেকে শুরু করে তিন-চার বছরের জুনিয়ররা পর্যন্ত তাকে ক্রাশ ও ক্রুশ হিসেবে বিবেচনা করতো। কেউ কেউ ক্রুসেফিকশনেও রাজি ছিল।

সে যাইহোক এইচএসসি পরীক্ষার পর আউলাঝাউলা জামিল হাজির হয়েছিল মিজানের শেষ চেষ্টার চিঠি নিয়ে। আজো কবিতাটা অবিকল মনে আছে-
—————-
পৃথিবীতে সেইসব গোলাপ বেঁচে থাকবে
যেগুলো অন্যের খোঁপায় যাবে;
পৃথিবীতে সেইসব গোলাপ থাকবে
যারা গাছে ফুটে, গাছেই মরবে;
এবং সেইসব গোলাপ বেঁচে থাকবে
যারা শোকে, খুশিতে, শ্রদ্ধায় মানুষকে সাহচর্য দিবে।

এবং জেনে রেখ,
সেইসব গোলাপের বাঁচার সুযোগ নেই- যারা জন্মাবে অন্য হাতের হয়ে তোমার খোঁপায় বসার জন্য;
সেইসব গোলাপ হবে ইতিহাস ও অমর
যেগুলো আমি গুঁজে দিবো তোমার খোঁপায়;

এমন কতোটা গোলাপ আছে ঠিক ফোঁটার অপেক্ষায়?
—————-

রিটা কবিতা বুঝতো না। গোলাপও বুঝতো না। তবে এটা অন্তত বুঝতো হ্যান্ডসাম কবি যদি প্রেমিক হয়, আউলাঝাউলা মানুষ যদি প্রেমিক হয়, তবে বেশ একটা ব্যতিক্রম হয়। কোনো কোনো মানুষ ব্যতিক্রম পছন্দ করে বোঝাতেই দুম করে কারো কারো সাথে প্রেম শুরু করে, ব্যাপারটা অনেকটা দোকানে গিয়ে আনকমন ডিজাইনের জামা বা শার্ট কিনে আনার মতো।

মিজান সিন আউট হয়ে গিয়েছিল। সেই মিজান কবিতা লেখাও ছেড়ে দিয়েছিল। এমনকি কোনোমতে এইচএসসি পাস করে, কোথাও চান্স না পেয়ে অস্ট্রেলিয়াও গিয়েছিল৷ বছর ছয়েক পর ফিরে এসেই জামিল ও রিটাকে ডেকে নিয়েছিল নিজের বান্দরবানে করা রিসোর্ট দেখাতে। যার দেয়ালে দেয়ালে ছিল কবিতা!

হ্যা সেই টুরেই রিটা ছুটে গিয়েছিল জামিলের কাছ থেকে। আর একদিন মিজানের মেসেজ এলো-

কবিরা দোস্ত র‍্যাটলস্নেক হয়,
মাথা কাটা গেলেও ঝুঁকি রয়ে যায়,
মাটিচাপা না দিলে থাকে প্রাণ-সংশয়।

জামিল বুঝতে পেরেছিল মিজান শুয়েছে। তার প্রাপ্যটুকু সে বুঝে নিয়েছে রিটার কাছ থেকে। সেদিন দুপুরে যখন রিটার সাথে দেখা হয়- ততোটা সুখি, আর ভরপুর রিটাকে জামিল কখনো দেখেনি। এমনকি একই দিন ছয়বার মিলনের পরও রিটা কখনো এতোটস সুখি ছিল না।
একটা মানুষ সর্বোচ্চ সুখের আচ্ছন্নতাতেই কেবল দীর্ঘদিনের প্রেমিককে চটপটি খেতে খেতে বলতে পারে- তোমাকে সবসময়ই আসলে মিস করবো!
এবং এর পরপরই রিটা কাঁচামরিচ কুচির ঝাল মেশানো একটু বাড়তি টক চেয়ে নিয়েছিল চটপটিওয়ালার কাছ থেকে।

***
ঘোর ভাঙলো ভাবির ডাকে। খেতে ডাকছে। দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়েছে জামিল। তারপর ভাবতে ভাবতে আরো সময় গড়িয়েছে। ভাবি গোসল করে ছাদে কাপড় নাড়তে এসেছিল। সেটা শেষ করে এখন জামিলকে ডাকছে।

***
খাওয়া শেষ করে জামিল। আজ ভাই আছে, সকালে এসেছে। কাজেই কথা হয় না তেমন। জামিলের পায়ের খোঁজ বা দুয়েকটা ওষুধ, চিকিৎসা এবং ভাইয়ের নতুন খামার করার গল্প করে খাওয়া শেষ হয়। ভাবি বিশেষ কোন কথাই বলে না।

তোমার নিরবতা কিছু একটা তৈরির কারখানা-
ভেতরের পশু ‘হাউল’ করে উঠে…

এই লাইন দুটো কি মিজানের? চিলেকোঠায় ফেরার আগে সিগারেট ধরায় জামিল। ছাদে পায়চারি করতে থাকে। সিগারেটের শেষ টান, মানে সুখ টান। সেই টান অন্যদিকে জামিলের চোখ টার্ন করায়। সে দ্যাখে- ভাবির কালো ব্রা ঝুলছে তারে। সে শোনে ভাবির কালো ব্রা চিৎকার করে ডাকছে- আমি রোদের তাপ চাই না, আমাকে তোমার বুকের উষ্ণতা দাও।

জামিল ব্রা নিয়ে চিলেকোঠায় ঢোকে। ভাবি বুঝবে। বুঝুক- তার বুকের কিছু একটা চুরি হয়েছে। কাউকে কাউকে এটা বুঝতে দিতে হয় তার গোপন কিছু একটা চুরি হয়ে গেছে।

পায়ের ব্যথাটা ফিরে আসে। আজ রাতে মালিশ হবে না। পড়ে পড়ে ভাবির ব্রা নিয়ে ঘুমায় জামিল। ঘুম ভাঙে ভাত খাওয়ার আগে। রাতে ভাত খেতে গেলে ভাবি তার নানাবাড়িতে একবার বিশাল এক শকুন এসে কিভাবে বসে ছিল সেই গল্প বলে। ভাই বলে- কিভাবে তার দাদাবাড়িতে এক ন্যাংটো ফকির এসে দুম করে আসন গেড়ে বসেছিল, এবং তার বিশাল পেনিস নিয়ে সে কিভাবে খেলতো… সেইসব গল্প। জামিল অবাক হয়ে ভাবে- এই দম্পতি সচেতনভাবে ইউরোপ থাকার সময়ের গল্প এড়িয়ে চলে। যেন ওসব দেশে তারা কখনো যায়নি। দ্যাখেনি। এমনকি মনে হয়, তারা কখনো শহরে ছিল না।
জামিলকে ভাবি যদি না বলতো তাহলে কখনোই সে জানতে পারতো না। আচ্ছা এই যে ছোট্ট মফস্বল শর, এখানেও কেউ জানে না মনে হয়। জানলে জামিলের কানে আসতোই!

সেরাতে ভাই আর ভাবির যৌনকর্ম প্রথম দফা হয়। জামিল শোনে। আর উত্তেজিত হয়। দ্বিতীয় দফায় আবার তারা করা শুরু করে, কিন্তু ঝগড়া লাগে। এবারও আগেরদিনের মতো কিছুটা সহিংস হয় ভাই। জামিল সবটা শোনে। রাতের বেলায় ভাবি কাঁদার জন্য ছাদে উঠবে। জামিল অপেক্ষা করে।

সে রাতে স্নিগ্ধা ছাদে ওঠে না। হ্যা ভাবির নাম স্নিগ্ধা। আর পরদিন জামিলের ঘুম ভাঙ্গে ভাইয়ের উদ্বিগ্ন ডাকে- জামিল স্নিগ্ধাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তোমাকে কিছু বলেছে?

জামিলের মাথায় প্রথমেই আসে- ভাবির কালো ব্রা লুকিয়ে ফেলতে হবে।

তারপর সে ভাবে- কি অদ্ভুত! আগে কালো ব্রা-র কথাই কেন মাথায় আসলো?

(চলবে)

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনিখোঁজ সংবাদ, সন্ধান চাই
পরবর্তী নিবন্ধআঞ্চলিক স্কাউটস এর সম্পাদক (অতিরিক্ত সচিব) আমিনুল ইসলাম আর নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে