“বই মেলায়”-রত্না চক্রবর্তী’র অনুগল্প

0
363
রত্না চক্রবর্তী

অনুগল্প-বই মেলায়
রত্না চক্রবর্তী

কতদিন পরে যেন আবার দেখা হল বইমেলায়। বছরটা কি আবছা হয়ে গেছে? মনে আছে জায়গাটা ময়দান। প্রথম দেখা। প্রেম কবিতা লিখত আর তার কবিতার প্রথম পাঠিকা হত কুহু। দুজনের পছন্দের রঙই ছিল হলুদ। হলুদ পাঞ্জাবি আর হলুদ সালোয়ারকামিজ। বিয়ের পরও একবার যাওয়া হয়েছিল। সল্টলেকে। তারপর…কারোই সময় হয় নি নাকি মন হয় নি। প্রেম কলেজের লেকচারার, বিষয় অবশ্য ইকনামিক্স। কবিতার খাতাটা আর খুঁজে পায় না। কুহু গানের স্কুলে গান শেখায়। এবার আবার আসা হল।
কুহুর বন্ধু সুবীর মুম্বাই থেকে এসেছে, ওই অনুরোধ করেছিল ” চলনা যাই বইমেলায়, খুব যাবার ইচ্ছা হত, তখন তুমি আর প্রেম যেতে,কিন্তু তোমাদের একসাথে দেখে আমার যাবার ইচ্ছাটা মরে যেত…. সেন্ট্রাল পার্কে তো যাই নি কখনও… যাবে…। কুহু প্রেমকে একবার আলতো করে বলেছিল ” অনেকদিন বইমেলা যাওয়াই হয় না। ” ল্যাপটপে নোট তৈরি করতে করতে প্রেম তার সেই চির প্রিয় ভঙ্গীতে কাঁধ ঝাঁকিয়েছিল। যার নির্দিষ্ট কোন মানে নেই অথচ যা দিয়ে সে যে কথাটা শুনেছে তার স্বীকৃতি পাওয়া যায়।
রিনি প্রেমেন্দ্রের ছাত্রী। সেকেন্ড ইয়ার। অন্ধ ভক্ত প্রেমেন্দ্রের, তার মুগ্ধতা প্রেমেন্দ্রকে কেমন যেন আবিষ্ট করা, গতানুগতিক জীবনে একটা ছন্দপতন । প্রেম নয় কিন্তু কি জানি কেমন একটা মোহগ্রস্ততা। রিনির বায়না ” স্যার, আমি কোন কথা শুনব না, আপনাকে কিন্তু বইমেলায় নিয়ে যেতেই হবে। আমার বান্ধবী সুদেষ্ণার কবিতার বই প্রকাশ হবে, ও কে বলেছি আপনি আগে কবিতা লিখতেন, ও আপনাকে অবিশ্যি অবিশ্যি নিয়ে যেতে বলেছে স্যার। আপনার সেই পুরোনো খাতাটা খুঁজে পান নি না ? “কেমন একটা আর্তি রিনির সুন্দর চোখে।
কুহু যখন বেরিয়ে আসছে তখন প্রেমেন্দ্র ঢুকছে। রিনির ছটফটে চোখে উজ্জ্বল হাসি। কুহু আর প্রেমের বোধহয় একসাথে চোখাচোখি হয়েছিল। তবে দুজনেরই রঙিন রোদ চশমা চোখে, দুজনেই হয়ত ভেবেছিল ‘ ও আমায় চিনতে পারে নি ‘, কিংবা ওরা ইচ্ছে করেই কাউকে চেনে নি অন্তত এ নিয়ে তো কেউই কোনদিন আর কথা বলে নি। এদিন কুহুর ছিল হালকা হলুদ শাড়ি আর প্রেমেন্দ্রর হালকা হলুদ সার্ট।।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“কান্না “- জান্নাত লাবণ্য
পরবর্তী নিবন্ধকবি মাহমুদ টোকন আর নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে