ভেন্টিলেশন ( ২) একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর আত্মকথন, লিখেছেন- নীলিমা শামীম

0
319
নীলিমা শামীম

নীলিমা শামীম : একটি ফোনকল! তোমরা এসো! তারপর নিজেকে ঘরবন্দী করে নেয়া। বাড়ি ভর্তি লোকজন আর কেহ নয় সকলেই। বটবৃক্ষটির সন্তান ও দুই স্ত্রী -“জেনে রাখা ভালো তোমাদের জন্য আমি কোভিট নাইন্টিনে আক্রান্ত। অতএব আমার জন্য দোয়া করিও বেচে থাকলে একদিন একসাথে খাবার খাবো।”

ছোট ও সৌখিনতায় যাহাকে অতি আদরের স্থানে রেখেছে তিনি যা করলেন ——-
নিজের ছেলেকে সঙে নিয়ে বললো আমরা বাচলেই হলো উনার বয়স ও সময় শেষ। আমরা মরতে চাইনা। করোনা ছোয়াছে ভাইরাস আব্বু। নিজের ৮ বছরের ছেলেটিকে আগলে দ্রুত ঘর ত্যাগ করলেন, আমি নীরব নিস্তব্ধ অশ্রুসিক্ত।

ধীরে ধীরে সকলেই প্রস্থান করলেন কেউ কোনো কথা বললেন না পুরো ঘর ফাকা, পরে রইলাম আমি একা। কোনো রকমে নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালের সম্মুখে যেতে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলেছি এরপর জ্ঞান ফিরে দেখি হাত -পা, মুখ সব বাধা আমি আই সি ইউ বেডে। অক্সিজেন কৃত্রিম, খাওয়া- দাওয়া, পায়খানা প্রস্রাব সব শরীরের সাথে ফিট করানো নিঃসঙ্গ এক বেডে সেটে শরীর।

চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রুবর্ষণ হচ্ছে। একজন সেবিকা এলো হালকা বয়সের সে কিছুটা শান্তনা দিলো। আমি ইশারায় বুঝাতে চাইলাম সে বুঝলো না। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা লিখে কিংবা বলে সে শেষ হবেনা। যখন কিছুটা স্বাভাবিক ও স্বস্তি অনুভব করছিলাম তখন জানলাম আজ বিশদিন আমি একা ক্লিনিকে। কেউ একবার দেখতেও আসেনি।

আমার গাড়িটা হাসপাতালের পার্কিং এই ওনারা হেফাজত করে রেখেছেন। সেবিকার মোবাইলে ভিডিও ধারনে দেখলাম এক করুন কাহিনী ঘটে গেছে আমার জীবন মরনের সন্দিক্ষনে। সুনসান নীরবতা চারিদিক হৃদয়বিদারক আর্তনাদ। স্ত্রীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়া, সন্তানদের কাছে একটু সঙ্গ। যাহাদের জন্য নিজেকে সবসময় ব্যাস্ত রেখেছিলাম, যাদের সুখের জন্য এতো আরাম আয়েসের অট্টালিকা।

যাদের কাছে নিজেকে সবসময় মনে করেছি খুবই মুল্যবান একজন, আজ তারাই–?. আর নয় এই ভুল দুনিয়াতে কেউ কারো নয় এটাই বুঝিয়ে দিল আজ তেইশদিন? গতকাল বাসায় ফিরেছি ইনশাল্লাহ এখন ভালো আছি।
কিন্তু বুকে জমা বরফের জমাট বেঁধে পাহাড় এইজীবনেও গলবেনা আগুনের লেলিহান শিখায়।

একটিবারের জন্যও দুইজন নিজের স্ত্রী, ছয়জন ছেলে, চারজন পুত্রবধূ, কেহ খবর নিতে যায়নি বেচে আছি কিনা মরে গেছি। ভেন্টিলেশনের সেবিকাই মরন ভাইরাসের ভয় না করে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নির্ভয়ে আমাকে সুস্থ করে তুলেছেন। আল্লাহ এই ত্যাগী মানুষ গুলোকে সুস্থতা দান করুক আমিন।

Advertisement
উৎসনীলিমা শামীম
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের গুরুদাসপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপজেলা ছাত্রলীগের শ্রদ্ধা নিবেদন
পরবর্তী নিবন্ধহয়তো সম্ভব – এ কে সরকার শাওন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে