লালপুরে খুন হওয়া অজ্ঞাত মহিলার মরদেহের পরিচয় উদ্ধার, খুনি গ্রেপ্তার
নাটোর কণ্ঠ: গত ৭ অক্টোবর লালপুরে একটি লিচুবাগান থেকে উদ্ধার হওয়া এক অজ্ঞাত মহিলার মরদেহের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে। শুধু পরিচয় শনাক্ত নয় জেলা পুলিশের দাবি, সেই মহিলাকে খুন করা হয়েছিল এবং সেই খুনিকেও গ্রেফতার করেছে তারা। আজ দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয় এর সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। প্রেস রিলিজ যা জানানো হয় তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রেস রিলিস
অজ্ঞাতনামা লাশ, হাজারো মানুষ তাকে চিনতে পারেনি, প্রযুক্তির সহায়তায় ৪৮ ঘন্টা পর লাশ সনাক্তকরণ অতঃপর আসামী গ্রেফতার
গত ০৭-১০-২০২০ খ্রি. নাটোর জেলার লালপুর থানাধীন অর্জনপুর বরমহাটি ইউনিয়নের ডহরশৈলা গ্রামস্থ ডহরশৈলা মাদ্রাসার পূর্বপাশে ডহরশৈলা হতে শ্রীরামগাড়ী রেলগেইটগামী পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশে জনৈক মোঃ আফজাল মন্ডল এর লিচু বাগানের ভিতর অনুমান ৩৫ বছরের একটি মহিলার লাশ পড়ে আছে মর্মে লালপুর থানা পুলিশ সংবাদ পান। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাজারো মানুষ তাকে চিনতে পারলো না। ভিকটিমের ছবি, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হলো। এ সংক্রান্তে লালপুর থানার মামলা নং-০৮, তারিখ-০৭-১০-২০২০ খ্রি., ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
মৃতদেহ পোস্ট মর্টামের পরেও ৪৮ ঘন্টা রাখা হলো বরফ দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভিকটিমের পরিচয়ের জন্য প্রচারণা করা হলো। তারপরও লাশ সনাক্ত না হওয়ায় নাটোর পৌর মেয়রের মাধ্যমে তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হলো।
প্রাথমিকভাবে এনআইডি সফট্ওয়্যারের মাধ্যমেও তার পরিচয় মিলছিলো না। পরবর্তীতে সিআইডি এবং এনআইডি সফট্ওয়্যারের উপুর্যপরি অনুরোধের মাধ্যমে মিললো ভিকটিমের পরিচয়।
মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য লালপুর থানার ০২ টি টীম এবং জেলার সমন্বয়ে আরও ০২ টি টীম সর্বমোট ০৪ টি টীম কাজ করে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৩-১০-২০২০ খ্রি. সময় ভোর ০৩.৪৫ ঘটিকায় সন্ধিগ্ধ আসামী মোঃ টুটুল আলী (২৫), পিতা-মোঃ মানিক আলী, গ্রাম-আড়বাব মধ্যপাড়া, থানা-লালুপর, জেলা-নাটোরকে মাগুড়া জেলার সদর থানাধীন শিমুলের ঢাল নামক স্থানে নির্মাণাধীন ভবনের লেবারের শেড হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে হত্যার করা মূল কাহিনী। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামী টুটুল জানায় যে, সে এবং তার দুলাভাই মোঃ আসাদুল (৪০), পিতা-মোঃ সানোয়ার, গ্রাম-হাবিবপুর, থানা-লালপুর, জেলা-নাটোরসহ ভিকটিম লাকীকে হত্যা করেছে।
ভিকটিম লাকীর সাথে হাবিবপুর গ্রামের ইসমাইলের সাথে ১ম বিবাহ হয়। পরবর্তীতে আসামীর দুলাভাই আসাদুলের সাথে ভিকটিমের পরকীয়ায় একাধিকবার বিয়ে হয় এবং ডিভোর্সও হয়। তারা পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানাধীন সলিমপুর বক্তারপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতো। এনিয়ে আসামী টুটুলের বোনের সংসারে কলহ লেগেই থাকতো।
পরবর্তীতে গত ০৬-১০-২০২০ খ্রি. আসাদুল তার শ্যালক টুটুলকে ফোন দিয়ে ঈশ্বরদীর লেবার লাইনে আসতে বলে। আসামী টুটুল ঐদিন বিকেল ১৫.০০ ঘটিকায় ঈশ্বরদীর লেবার লাইনে হাজির হয়। আসাদুল টুটুলকে ঈশ্বরদী বাইপাসে আসতে বলে এবং ভিকটিম লাকীকেও ঈশ্বরদী বাইপাসে আসতে বলে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসাদুল ও টুটুল ভিকটিমকে নিয়ে ১৮.৩০ ঘটিকায় দিকে বাইপাস হতে হাঁটতে হাঁটতে ডহরশৈলার দিকে যতে েথাকে। সেময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ১৯.১৫ ঘটিকায় মামলার ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই পরিকল্পনা মোতাবেক আসাদুল ভিকটিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং গলা চেপে ধরে। আসামী টুটুল ভিকটিমের হাত ধরে রাখে এবং শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃতদেহ রাস্তার পাশে লিচু গাছের নিচে রেখে পালিয়ে যায়।
আসামী টুটুলকে গত ১৪-১০-২০২০ খ্রি. বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে সে স্বেচ্ছায় এই হত্যার দায় স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করেন।