৩৩১ নাম্বারের উত্তরাধিকার
কবি নাজনীন নাহার
তোমাকে নিয়ম করে
ভুলে থাকবার অনিয়মিত অভ্যাসে,
প্রত্যহ নিয়ম করেই তুমি নামক তরতাজা
একখানা সকাল সামনে এসে দাঁড়ায়।
আমি কেমন সম্মোহিত সম্মোহনে ,
তোমার ৩৩১ নাম্বার বাড়িটায়
ঝুলতে থাকা বাগান বিলাসের দরজায় কড়া নাড়ি।
তোমাকে আড়াল করা
চোখের জলের মায়ায় তখন জড়িয়ে যায়,
আমার গত বসন্তের কৃষ্ণচূড়া জীবন।
যার রঙ সে বছরের বৈশাখী ঝড়ে
উড়ে গেছে দূর পাহাড়ের ঝিরি বুকে।
আর সে বছরই আমার
বৈধব্য সংসার পেতেছিল আমাতেই।
পেছনে চোখ ফেরাতে রাজ্যর ভয়!
আমার মাথাটাকে শক্ত হাতে আঁটকে দেয়,
আমাদের সম্পর্কের দুরবস্থার বর্তমান।
আমি কেমন বিবশ হতে থাকি,
একে একে আমাদের বর্ষাদিনের
দোলনচাঁপা প্রেমের সুগন্ধি স্মৃতিতে।
যেখানে এখনও হুটোপুটি লুটোপুটি খায়,
তোমার সবুজ বুকের ঘাসফুলে,
আমি নামক শুভ্র আদর জলফড়িং।
আমার পা জোড়া একটু একটু করে অসাড় হয়ে যায়,
আমি কেমন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি,
তুমি নামক চৌরাস্তার ১১/এ-র গলির মুখে।
আমার হাত ধরে কেউ পৌঁছে দেয় ,
গুলশান আজাদ মসজিদের খুব নিকটবর্তী,
সুনসান নীরবতা যার শেষ স্টেশন।
আমার আর ফেরা হলো না,
আমার আর ঘর রইল না সংসার রইল না।
কেমন অনিয়মের সরু পথ ধরে
ঘুরপাক খেতে খেতে আমি থেমে গেলাম,
তুমি নামক শহরের চোরাবালি
প্রণয়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা,
আমার একমাত্র আশ্রয়ের এপিটাফে।
যেখানে তুমি আমার অপেক্ষায় এখনও রাত জাগো,
তৃষ্ণার্ত ঘুমো ঘোরে।
আর এভাবেই আমাকে নিয়ম করে টেনে নিয়ে আসো,
তোমার স্থায়ী ঠিকানার-
তিনটি শীতল সংখ্যার পরিপাটি যোগফলে।
যেখানে সাদা কাফনে
আমরা দু’জন দু’পারের সহযাত্রী।
যেখানে নিশ্চুপ শুয়ে আছো তুমি,
তোমার পূর্ব পুরুষের;
৩৩১ নাম্বার বাড়িটির উত্তরাধিকারী হয়ে।