অর্থ লোপাটের অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে

0
153

নাটোর কন্ঠ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার ব্যয় হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া বরাদ্দের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীনের বিরুদ্ধে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনকালীন ব্যয়ের জন্য সেসময় বরাদ্দের সম্পূর্ণ অর্থই উত্তোলন করা হয়। তবে, কমিশন নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় না করলেও ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে কাগজে কলমে সম্পূর্ণ অর্থই ব্যয় দেখানো হয়েছে।

সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ের ৪৫ দিনে সহকারি রির্টারিং কর্মকর্তার ব্যবহৃত গাড়ির জ্বালানী বাবদ প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা হারে মোট বরাদ্দ ছিলো ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।

প্রতিদিনের বরাদ্দের টাকায় প্রায় ৪২ লিটার জ্বালানী তেল ক্রয় করা সম্ভব। আর প্রতি লিটার তেলে ৬ কি.মি হিসেবে ৪২ লিটার তেল শেষ করতে হলে দৈনিক গাড়ি চালাতে হবে ২৫২ কি.মি.। নির্বাচনকালীন সময়ে একদিনে এত পরিমান যাতায়াত না হলেও ভূয়া ভাউচার জমা দিয়ে বরাদ্দের সম্পূর্ণ অর্থই ব্যয় দেখানো হয়েছে।

এছাড়া, ইউএনও’র ব্যবহৃত গাড়ির জ্বালানী বাবদ নিয়মিত সরকারি মাসিক বরাদ্দের ১৬৮ লিটার তেলও ব্যবহার দেখিয়েছেন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও মোহাইমেনা শারমীন।

নির্বাচনকালীন উপজেলার আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও তা দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানোর জন্য একাটি নির্বাচনী নিয়ন্ত্রণকক্ষ (কন্ট্রোলরুম) খোলা হয়। নির্বাচনের আগের দিন মালামাল বিতরণের সময় থেকে নির্বাচণ শেষ হওয়া পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এর দায়িত্বে থাকেন।

নির্বাচনী নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (কন্ট্রোলরুম) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন বাবদ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চা-নাস্তাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দের এ আপ্যায়ন।

এছাড়া, নির্বাচনী সরঞ্জাম নামানো ও তা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি বাবাদ বরাদ্দ ছিলো ৪৯ হাজার ২শ টাকা। অথচ, কোনো শ্রমিক না নিয়ে এসব কাজ করানো হয় ইউএনও কার্যালয়ের ষ্টাফদের দিয়েই।

উপজেলার ৪১ টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত পরিবহন খরচ বাবদ কেন্দ্র প্রতি ৫ হাজার টাকা হারে মোট ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কমিশন।

যা প্রত্যেক কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে বিতরণ করার কথা। কিন্তু, ভোট কেন্দ্রে মালামাল পরিবহন খরচের বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা।

উপজেলার ১৯ নং বাঁশ বাড়িয়া কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও অগ্রণী ব্যাংক বাগাতিপাড়া শাখার সিনিয়র অফিসার দিলদার হোসেন বলেন, “নির্বাচনের সময় আমরা শুধু সহকারি প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের ভাতা, অফিসারদের যাতায়াত খরচ এবং কেন্দ্রের বুথ প্রস্তুত বাবাদ কিছু টাকা হাতে পাই। এছাড়া, মালামাল আনা-নেওয়ার দায়িত্বে থাকা গাড়ি চালকদের খরচ বা ভাড়া বাবদ আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না।’’

ভোট কেন্দ্রে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করা একাধিক গাড়ি চালক জানান, “নির্বাচনে এসব পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় দেখভাল করে থানা পুলিশ। গাড়ি ভাড়ার টাকাও থানা থেকেই দেওয়া হয়। গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও থানা থেকে প্রত্যেক গাড়ির চালককে ১ হাজার ৭শ টাকা দেওয়া হয়েছে’’ বলে জানান তারা।

বাগাতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নান্নু খান জানান, “নির্বাচনী মালামাল পরিবহনের খরচ বাবদ গাড়ি প্রতি ২ হাজার টাকা করে ৪১ টি গাড়ির টাকা পান । তবে, ১০ টি গাড়ি অতিরিক্তি নেওয়ায় প্রাপ্ত টাকা সমন্বয় করে ৫০টি গাড়ি চালককে দেওয়া হয়েছে’’ বলেন জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাটোর কন্ঠকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়।”

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধএসআরপি শিক্ষাবৃত্তি পেলো ৪৬৪ শিক্ষার্থী
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে টেন্ডার ছাড়া খাল খননের অভিযোগ বিএডিসি‘র বিরুদ্ধে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে