আজ বিশ্ব মা দিবস, ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মা

0
644
Mother-Day

আজ বিশ্ব মা দিবস

মা, এক অনন্ত অনুভূতির নাম, এক শাশ্বত মূর্তি যা প্রশান্তির ধারা বয়ে নিয়ে আসে মনে। সকল উৎকণ্ঠা সকল সমস্যার বিরামহীন প্রশান্তির নাম মা। মাকে বিশ্লেষণ করা যায় না, ব্যাখ্যা করা যায় না, কারণ মৃত্যুর থেকেও কষ্টকর যন্ত্রণায় তিনি আমাদের আলো দেখিয়েছেন পৃথিবীতে। ভালোবেসে যত্নে স্নেহা আঁচলে আদরে চিনিয়েছে আলো।

সেই মাকে স্মরণ করে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্ব মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। যদিও অনেকে মনে করেন মাকে শ্রদ্ধা বা সম্মান জানানোর জন্য বিশেষ কোন দিবস কোন সময় ক্ষন প্রয়োজন নেই। তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করবার জন্য আজকের দিনটি কিন্তু মন্দ নয়। এইযে আজকে আমরা পৃথিবীর সবাই নিজের মাকে নিয়ে আজকে ভাবছি, অনুভব করছি এটাই কি কম বড় পাওয়া। হ্যাঁ অনেকে ভিন্ন মত দিতে পারেন, বৃদ্ধ মাকে বৃদ্ধ বাবাকে যারা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন তাদের বিষয় নিয়ে চয়ের আড্ডা গরম হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আজ আর তাদের কথা ভাবতে চাই না, আজ তাদের সমালোচনা করতে চাই না, তাদের হৃদয়ে যেন প্রশান্তি আসে নিজেদের জীবন কেও তারা যেন সাজিয়ে নেয় ওইভাবে।
আজকে মা দিবস পালনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবস পালন শুরু হলেও আধুনিককালে এর সূচনা আমেরিকা থেকে। ১৯০৫ সালে আমেরিকার আনা জার্ভিস নামক এক নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিবস মাকে স্মরণীয় করে রাখবার চেষ্টা করেন। তিনি তার স্কুলের দিবসটি পালনের জন্য গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন ১৯০৭ সালে।
এরপর ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এই দিনে মায়ের জন্য ভালো ভালো খাবার কিনে নিয়েছেন, কেউ বানিয়েছেন মায়ের পছন্দের কোনো বিষয়। মোটকথা উপহার দেওয়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এসবের মধ্যে দিয়ে বাঙ্গালী দিনটিকে পালন করছে। কিন্তু এবছর মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মায়ের প্রতি ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশে সবাই যেন এক ধাপ এগিয়ে। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যয় হোক দিনক্ষণ নয় প্রতিদিনই হোক আমাদের মায়ের জন্য, মাকে ভালোবাসার জন্য। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মা। পরিশেষে হুমায়ুন আজাদের বিখ্যাত কবিতা “আমাদের মা” পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো…..

 

আমাদের মা
হুমায়ুন আজাদ

আমাদের মাকে আমরা বলতাম ‘তুমি’,বাবাকে ‘আপনি’।
আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে,
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতো না।
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে মাকে আপনি বলার কথা আমাদের
কোনোদিন মনেই হয়নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো,কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর,আমাদের বর্ণের,আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা ‘আল্লার’ মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো দুধভাত তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো ছোট্টপুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানি না।
আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি।
আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
চুমু খেলে মার ঠোঁট ওরকম শুকনো থাকতো না।
আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোটো হতে থাকে
আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা
আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি।
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম
থেকে নগর পর্যন্ত আমাদের মা আজো টলমল করে।

(কবিতাটির পংক্তিসজ্জা সম্ভবত ভেঙে পড়েছে। ক্ষমা প্রার্থী)

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের বাগাতিপাড়া মডেল থানায় নতুন ওসি নাজমুল হক
পরবর্তী নিবন্ধআজ বিশ্ব মা দিবস- রেজাউল করিম খান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে