আজ বিশ্ব মা দিবস- রেজাউল করিম খান
মা তো মা-ই, মায়ের সাথে আর কোনও সম্পর্কের তুলনা হয় না। পৃথিবীর বিশুদ্ধতম শব্দ মা। মায়ের ভালোবাসা আদি ও অকৃত্তিম। এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য করজোড়ে পুস্পকদণ্ড নিবেদন করতে হয় না। বিসর্জন দিতে হয় না কোনো কিছু। সব সময়ই তিনি তার সন্তানকে জড়িয়ে রাখেন স্নেহের আঁচলে। সেই মাকে কি ভোলা যায়? তাই বছরের একদিন মাত্র তাকে স্মরণ করে যথার্থ শ্রদ্ধা জানানো যায় না। জীবিত মা থাকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত, সময়ে, অসময়ে। আর প্রয়াত মা থাকে মনের গভীরে, হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে। যাপিত জীবনের বিশেষ মুহূর্তে মাকেই প্রথম মনে পড়ে- কি আনন্দ, কি বেদনায়।
আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, বিশ্ব মা দিবস। দিবসের শুরু থেকেই ফেসবুকে দেখছি মাকে নিয়ে লেখার ছড়াছড়ি। তাই ভাবলাম এই দিনে কিছু না লিখলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বেজার হবেন। প্রায় সব লেখাতেই ও ছবিতে মায়ের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়েছে । প্রায় সবই মাকে নিয়ে সন্তানের লেখা। অজান্তেই মনের ভেতর প্রশ্ন এলো, সত্যিই কি এরা মাকে মন থেকে ভালোবাসে? যদি তাই হয়, তাহলে হাটে-বাজারে, পথে-ঘাটে এতো বিপর্যস্ত অসহায় মা দেখা যায় কেনো? এরা সকলে না হলেও আধিকাংশই তো কারও না কারও মা, গর্ভধারিনী। এই পোড়ার দেশে অভাব-অনটন আছে, থাকবেই। নানা পরিসংখ্যান থেকেই জানা যায়, দেশে অতি দরিদ্র মানুষ আছে প্রায় চার কোটি। তাদের না আছে, নিয়মিত কাজের নিশ্চয়তা, না জোটে প্রয়োজনীয় খাবার। সংসার চলে অপরিকল্পিত ঘাটতি বাজেটে। অনেকের তো সংসার পাতার মতো ঘরই নেই। সেখানে স্ত্রী-সন্তানের সাথে মায়ের অবস্থান হয় ছাই ফেলা ভাঙা মালসার মতো। এরা জানে না- রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান, পুঁজি, গণতন্ত্র ও আইনে কি বিধান আছে। জানে না শ্রেণিবৈষম্য কাকে বলে। এদের কাছে ডাল-ভাত-কাপড়ের বেশি চাহিদা নেই। এরাও মানুষ। এদেরই অনেকের কাছে মা নামক বয়স্কা কর্মক্ষমতাহীন একজন মানুষ বোঝা হয়ে যায়।
আবার এই সমাজেরই আর একদিকে দেখি, বিত্তবান অনেক সংসারে মায়ের ঠাঁই হয় না। তারা কাজের লোকের হাতে মাকে ফেলে রেখে শহরে চলে যান। অনেকে বিদেশে যাওয়ার আগে মাকে দিয়ে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। যে আঁচল দিয়ে একদিন আদরের সন্তানের মুখের ঘাম সযত্নে মুছিয়ে দিয়েছে যে মা, সেই আবার চোখের পানিতে আঁচল ভেজায়। তুবও মা তার সন্তানের অমঙ্গল কামনা করে না, দেয় না অভিশাপ। এই সেই মা, যাকে আজ বিশেষভাবে স্মরণ করি।
প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হলেও আধুনিক কালে এর প্রবর্তন করেন অ্যানা জার্ভিস নামে এক মার্কিন নারী। ১৯১৪ সালে মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম এই দিবসটি স্বীকৃতি পায়।