আমাদের জাদুঘর ধ্বংস এভাবে হয় এদেশে – অমিতকুমার বিশ্বাস
হরিহর বলিল— আঃ,নিয়ে গিয়ে যা বিরক্ত! এদিক যায়, ওদিক যায়, সামলে রাখতে পারিনে–আল্কুশীর ফল ধরে টানতে যায়। পরে ছেলের দিকে চাহিয়া বলিল— কুঠির মাঠ দেখবো, কুঠির মাঠ দেখবো— কেমন, হোল তো কুঠির মাঠ দেখা?
—আম-আঁটির ভেঁপু/ পথের পাঁচালী / বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিভূতিভূষণের কারণে কুঠির মাঠ দেখার প্রতি একটা অদম্য বিস্ময় জমিয়ে রেখেছিলাম বুকে। একটা তাজমহল কিংবা একটা গোটা দার্জিলিং ঘুরে-ঘুরে দেখার চাইতেও এইসব মাঠঘাট-বিলবাঁওড় কেন জানি না আমাকে ঢের বেশি টানে।
কুঠির মাঠ বললে শ্রীপল্লি-বারাকপুরের কেউই আর আজকাল তেমন ভাবে জায়গাটা চেনাতে পারে না। যা বলে, তা বড়ই আবছা, অস্পষ্ট। কারণ এই মাঠ এখন মাঠ নেই আর আগের মতন। মাঝে-মাঝে বাঁশের ঝোপ, মাঝে-মাঝে ছোট-ছোট জনপদ, মাঝে-মাঝে জলভূমি। কুঠিটাও নেই আর একদম। আছে ১৯০৫ সালে তৈরি একটা ঘর যাকে ‘ডাকবাংলো’ বলে ডাকে লোকজন। যদিও তার গায়ে ইট লেগেছে আরও অনেক পরে। এটাকেই নীলকুঠি বলে চালিয়ে দেন অনেকে। পাশে একটা নীলভাঁটির ধ্বংসাবশেষ আছে যদিও। তার উপর লোকজন ঘর বেঁধে নিশ্চিতে আছে। আমাদের জাদুঘর এভাবে ধ্বংস হয় এদেশে।
আলকুশি ( বিভূতিভূষণের ‘আল্কুশী’ ) আলসের বিলপাড়ে দেখেছি ঢের। সেসব শৈশবকথা। বহুযুগ এ-গুল্ম বিলুপ্ত সেখানে।
আলকুশিটা ঠিক কী এটা না-জানলে হরিহরের এই বিরক্তি সম্পর্কে আবছা ধারণা হবে। আর স্পর্শ করে দেখার অভিজ্ঞতা থাকলে ভিন্নকথা। স্যার বলতেন, অভিজ্ঞতাই পরমসত্য। এই আলকুশির রোঁয়া লেগে চুলকানি উঠলেই হরিহর-অপুকে নিশ্চিত দেখা যাবে কুঠির মাঠের পথে পথে। পথের পাঁচালি তখন ছবির পাঁচালি এক।