“আমি, এক থিয়েটারওয়ালা”- অর্জুন থিয়েটারওয়ালা

0
820
অর্জুন

আমি, এক থিয়েটারওয়ালা
অর্জুন থিয়েটারওয়ালা

রেনোয়া মারা গেছিলেন ঊনিশশো ঊনিশে। আটাত্তর বছর বয়েসে। বুড়ো বয়েসে আর্থারাইটিস হয়েছিল ওঁর। হাঁটতে পারতেন না। হুইল চেয়ারে ঘুরতেন। ডান হাত চলত না। আঙুল নড়াতে পারতেন না। তবু, ওই অবস্থাতেই, ছবি আঁকতেন। আঙুলে ব্রাশ বেঁধে। যন্ত্রণায় মুখ বেঁকে যেত। তবু আঁকতেন। তখন রেনোয়ার সাতাত্তর বছর। কে একজন বলেছিল ওঁকে, অনেক তো হল। অনেক ছবি রেখে যাচ্ছেন। এবারে একটু বিশ্রাম নিন। এখন এত কষ্ট পাচ্ছেন, আর আঁকার কী দরকার।

রেনোয়া নাকি বলেছিলেন, সব যন্ত্রণাই একদিন শেষ হয়ে যায়। শিল্প থাকে। মৃত্যুর এক বছর আগেও, অচল আঙুলে ব্রাশ বেঁধে, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে বেঁকে যাওয়া মুখ নিয়ে অসম্ভব সুন্দর সব ছবি এঁকে গেছেন রেনোয়া। ওই ছবিগুলো দেখলে বিশ্বাসই হয় না এরকম শারীরিক কষ্টের মধ্যে এগুলো আঁকা হয়েছিল। রেনোয়ার এই ঘটনাটা মনে পড়লেই আমার সন্দীপনকেও মনে পড়ে। সেরা ছবিটা তারাই আঁকে যাদের দুটো হাতই কনুইয়ের নীচ থেকে কাটা। অর্থাৎ নুলো। তাই নিজেকেও মনে পড়ে।

জীবনে বারবার যেটা করেছি, ওয়েস্ট পেপার বক্স অভিমুখী দোমড়ানো কাগজের মতো নিজেকে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলা। কখনও জীবন নিজেই সেটা করেছে। কেন? তলহীন খাদ থেকে গুঁড়ি মেরে নিজেকে উঠে আসতে দেখব বলে। আমার ভাগ্য ভালো, প্রতিবার উঠে আসার সময়ে দেখেছি, খাদে আমি একা নই। প্রতিবারই দেখেছি, খাদ থেকে আমাকে গুঁড়ি মেরে উঠে আসতে দেখার জন্য কিনারায় আমি একা দাঁড়িয়ে নেই।

অনেকেই আমায় যে প্রশ্নটি করেন, আমি কোন নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত? না, আমি কোনও দলে নেই। আমার কোনও দল নেই। আমি এক থিয়েটারওয়ালা। নাটক ফেরি করি। এটা যদি একটা দলের নাম হতে পারে, তাহলে এটাই আমার দল। থিয়েটারওয়ালা। কারা কারা আছেন আমার দলে? আমাকে ছাড়াও আমার নাটকের প্রপস, সেট, আবহ, আলো, ক্রাফটস, ইনস্ট্রুমেন্টস এঁরা রয়েছেন। রয়েছেন খোদ নাটকটিও। দর্শককে ছাড়া নাটক হয় না। শ্রোতা ছাড়াও গান হয়, পাঠক ছাড়াও কবিতা হয়, উপন্যাস হয়, কিন্তু দর্শক ছাড়া, অর্থাৎ মানুষ ছাড়া নাটক হয় না।

সেইসব অগণিত অজানিত মানুষের কান্না ও শোক, রাগ ও চিৎকার, ভাষা ও অসীম নীরবতা রয়েছে আমার নাটকের সঙ্গে। আমি ফেরি করছি, নাটক। আমার ফেরি করা ডাক তোমায় ঘর থেকে রাস্তায় নামাবেই নামাবে। যেভাবে কুলফিওয়ালার ডাকে তুমি ছুট্টে বাইরে আসো। তুমি বাইরে আসার পর, আমরা একসঙ্গে রাস্তায় হাঁটব। হাঁকতে হাঁকতে যাব দুজন। নাটক চাই গো না-ট-ক। তারপর সবাইকে বের করে আনব রাস্তায়।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ”প্লেটোনিক”- শর্মিষ্ঠা চ‍্যাটার্জি বড়ালের কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“গলিটাতো এদিকেই ছিলো” -কবি শাহিনা রঞ্জু’এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে