এই দেশে কোনো মানুষ নাই। আছে অমানুষ আর না-মানুষ- জাকির তালুকদার
আমাদের বন্ধু রিটু খন্দকারকে সন্ধ্যায় কেড়ে নিয়েছে করোনা।
নিয়মিত সবার খোঁজ-খবর নিত সে। গতমাসে আমাকে ফোন করেছিল। অনেক কথা। বার বার সাবধান করল আমাকে– তুমি ডাক্তার, রোগী দেখতে হয়, তোমার করোনার ঝুঁকি অনেক বেশি। খুব সাবধানে থাকবা।
আমি আমার মতো আছি। কিন্তু রিটু চলে গেল।
এখন রিটু খন্দকারকে চেনে খুব কম মানুষ। কিন্তু আশির দশকে সে পরিচিত ছিল তুখোড় ছড়াকার হিসাবে। তার সম্পাদিত ছড়ার পত্রিকাতেই ছাপা হয়েছিল আমার প্রথম লেখা ছড়া।
রিটুর অবস্থা ক্রিটিক্যাল শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শুক্রবার সকালে ঢাকা যাব ওর চিকিৎসায় যদি কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ পাই। সেই সুযোগ দিল না রিটু বা করোনা।
শেষ ফোনালাপে দুজনেই একমত হয়েছিলাম যে এই দেশে কোনো মানুষ নাই। আছে অমানুষ আর না-মানুষ।
কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শাসক-প্রশাসক মিলে ৫০ লক্ষ অমানুষ। যারা এই দেশটাকে পরিচালনা করে। লুটে-পুটে খায়।
আর বাকি আমরা ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ না-মানুষ। আমরা মানুষ হতে পারিনি বলেই অমানুষরা সবধরনের ক্ষমতার আসন দখল করে রাখতে পারে।
তারুণ্য-যৌবন বিছিয়ে দিয়েছি স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। আমরা তো রাজপথেরই প্রজন্ম। কত রক্ত, কত অত্যাচার, জেল-জুলুম-নির্যাতন। এরশাদের পতনের পর ভেবেছিলাম আমাদের দায়িত্ব শেষ হলো। গণতন্ত্র সবাইকে মুক্তি দেবে।
কিন্তু তার বদলে বিএনপি-জামাত-আওয়ামী লীগ আনল দুঃশাসন, দুর্নীতি। গণতন্ত্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান করে দিল অকার্যকর। ভোট নামক যে জিনিসটার জন্য ৫ বছর পর পর জনগণের সামনে জবাবদিহি করার দায় ছিল তাদের, এখন সেটাও বিলুপ্ত। কাজেই কারো কাছে জবাবদিহি করার ভয় নেই। যা ইচ্ছা তা-ই করা যায় এবং করা হয়।
করোনা মোকাবেলার নামে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার দুর্নীতি। সঠিক পথনির্দেশনার প্রতি বুড়ো আঙুল প্রদর্শন।
করোনায় প্রতিটি মৃত্যু তাই আমার কাছে রাষ্ট্রের অবহেলার কারণে মৃত্যু।
মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার বয়স আমার ছিল না। বালক ছিলাম। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী বাংলাদেশ দেখে বলি– এমন দেশ চাইনি আমরা। এখন শুনতে পাই লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার বুকের অব্যক্ত হাহাকার– এমন বাংলাদেশ চাইনি আমরা।