এ একান্ত আমারই যাপিত জীবন- কামাল খাঁ

0
321
কামাল খাঁ

এ একান্ত আমারই যাপিত জীবন- কামাল খাঁ

ছোট্ট শহর নাটোর। যেখানে আমি থাকি। আমার আবাস। স্থায়ীভাবে বসবাস করি। জন্ম গ্রামে। শহর থেকে কিছুটা দূরে। নিভৃত পল্লীতে। ছোট পরিসরের এক জীবন। নিজের কাজ করি। খাই-দাই ও ঘুমাই। একটু পড়ি আর একটু লেখি। এখানে এসেই কথা। কেন লেখি? সহজ কথায় উত্তর- জানি না। আমার মনে হয় কোন লেখকই জানেন না, তিনি কেন লেখেন? দু’এক জনা আমাকে জিজ্ঞেস করে কখন এইসব করেন। এড়িয়ে যাই। বলি না, বা বলতে পারি না। লেখার লোকেরা সবাই এটা জানেন। কিন্তু যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নন, তারা অনওয়াকিবহাল। আর আমার মেলামেশা এসকল মানুষের সাথে বেশি।

কারণ একটাই আমি পেশাদারী লেখক নয়। পেশাটা এমন যে বিচিত্র মানুষের সাথে ওঠাবসা করা। সম্পর্ক গড়ে ওঠে এমনিতেই সকলের সাথে। কাজ যে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ আমার। ড.মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তার মেয়েকে উপদেশ দিয়েছিলেন- ‘কোন কাজ পারি না বলিও না।’ তিনি পাঞ্জাবি তৈরির ফর্মুলা দিয়েছিলেন মেয়েকে মনে রাখার মতো। একটা পুরাতন পাঞ্জাবি পার্ট বাই পার্ট খুলতে বলেন। তারপর হুবহু কাপড় কেটে সেলাই করলেই নতুন জামা। ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরণটাই এমন যে অনেক কিছুর সমন্বয়, যদি সেটা হয় আবার নির্মাণ বিষয়ক। ফের লেখায় চলে আসি।

ইন্টারমিডিয়েট পড়বার আগে কিছুই লেখি নি। বই পড়তাম। আউট বই। আমার বই আবার আমার নানা পড়তেন। তিনি স্বশিক্ষিত ছিলেন। পড়তেন প্রচুর ধর্মীয় বই। তার সংগ্রহে ছিলো অনেক বই। তবে অন্যান্য বইয়ে তার শুচিবাই ছিলো না। আমার সাথে তার গল্প হ’তো অনেক। তিনি আমাকে রবীন্দ্রনাথের গুপ্তধন গল্পটি শুনিয়ে ছিলেন। ইমাম গাজ্জালি ছিলেন তার প্রিয় লেখক। দাদা অবসরে বিচিত্র সব পুঁথি পড়তেন। সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামান এর পুঁথি, সোনাভানের পুঁথি। তিনি ছিলেন দীর্ঘ বিপত্নীক।

আমাদের কৃষি পরিবার। একটা কৃষি খামারের অংশ বাড়িটা। গ্রামের বাড়ি বলতে যা বোঝায়। বাবা ব্যবসা করে জমি কিনেছিলেন। শহরে বাড়ি করবার ইচ্ছে ছিলো। নানা সংকটে তা আর হয়ে ওঠে নি। এজন্য ব্যবসায় রণে ভঙ্গ। সুতরাং শেষে সকলে মিলে জমি-জিরাত দেখাশুনা। তাতে কখনো কারুর হতাশার কিছু ছিল না। অল্প-স্বল্প পড়াশুনা নিয়ে ছয় বোন আর চার ভাই। বড় পরিবার।
সকলে আমরা কৃষক।

আমাদের ধান, পাট, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, গম, তিল, আলু, মুলা, বেগুন, ধনিয়া,মরিচ,কলা এক কথায় কী না হতো আমাদের জমিতে ? বাড়ি যেন ফসলের উৎসব। ফসল বোনার আনন্দ, পরিপক্ক হবার আনন্দ, সবশেষে বাড়িতে আসার পর এক নির্মল আনন্দানুভূতি সকলের মনে। সে আরেক উৎসব। ধানকে ঘিরে আমাদের জীবন যেন। এক ধানের কতো প্রক্রিয়া দেখুন। জাগদিয়ে ধানের অঙ্কুরোদ্গমন ,বীজতলা, লাগানো, নিড়ানি, পাকা ধান ক্ষেত, কাটা, মাড়াই, শুকনো-সিদ্ধ, চাউল,ঢেঁকি,খড় ,পিঠা-পুলি ধানকে ঘিরেই একটা বই লিখে ফেলা যায় এমন।
মাটি খুব উর্বর। সব ফলতো জমিতে।

বাড়িতে হাস-মুরগি, গরু-ছাগল, মহিষ আর আমরা। এই কৃষিতে আমিও মুগ্ধ ছিলাম। নিজেকে কৃষক ভাবতে এখনো স্বাচ্ছন্দ্য বোধকরি। কৃষি ভেতরে আমাদের এক নির্মল জীবনলিপি লেখা আছে। আমি জীবনে তিক্ততার সম্মুখিন হ’লে সেই কৃষিলিপি পাঠ করি আর শুশ্রূষা পাই। কথাশিল্পী শওকত ওসমান তা’র কথা লিখতে গিয়ে লিখেছিলেন, হুগলির সবলসিংহপুর গ্রাম থেকে কলিতাকাতা শহর। এইটুকু অতিরিক্ত দেখা যা তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের নেই। তাঁর এই ভাবনাটা আমার ভালো লাগে। এইখানে আর একটু সত্যিকরে বলে রাখি নিজেকে স্বশিক্ষিত মনে করতেই স্বাচ্ছন্দ্য আমার।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁধ অপসারণের দাবিতে নাটোরের সিংড়ায় ক্ষতিগ্রস্থদের মানববন্ধন
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক গঠন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে