কত মানুষকে পেশা বদলাতে হবে…? আমীন আল রশীদ

0
616
আমীন আল রশীদ

কত মানুষকে পেশা বদলাতে হবে…? আমীন আল রশীদ

বাসার কাছে মেইনরোডের পাশে ভ্যানের উপরে মাথা তুলে দাঁড়ানো সবুজ, ঝকঝকে, কচি লাউগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কাছে গিয়ে দেখা গেলো আরও নানান শাক সবজি, বিশেষত কলার মোচা ও থানকুনি পাতা, যা এই পাড়া-মহল্লায় কদাচিৎ চোখে পড়ে। বিক্রেতাও অপরিচিত। সাধারণত পান্থপথ থেকে ফার্মগেট, তার পাশে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার রাস্তার পাশে যারা এরকম শাকসবজি বা ফলমূল বিক্রি করেন, তাদের মোটামুটি সবাই পরিচিত। কিন্তু এই ভদ্রলোককে আগে দেখেছি বলে পড়ে না। তাছাড়া তার সবজির যে মান, সেটিও অন্যদের চেয়ে সহজেই আলাদা করা যাচ্ছে। ফলে কৌতূহলে পরিচয় জানতে চাইলে বললেন, তিনি দীর্ঘদিন এই এলাকাতেই থাকেন। তবে সবজি বিক্রি তার পেশা নয়। একটি প্রিন্টিং কারখানায় কাজ করতেন। সেটি এখন বন্ধ। কবে খুলবে জানেন না। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে। আবার মানুষের কাছে গিয়ে হাত পাতবেন, সেটিও আত্মসম্মানে বাঁধে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই ব্যবসায় নেমেছেন। প্রতিদিন ভোরে এই ভ্যানটা নিয়ে চলে যান বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজারে, সেখান থেকে এরকম তাজা শাকসবজি নিয়ে আসেন। আঁটিবাজারের শাকসবজি আর গরুর খাঁটি দুধের খবর খাদ্যরসিকদের অজানা থাকার কথা নয়। ফলে এই লোকের কাছ থেকে লাউ, ডাঁটা শাক আর থানকুনি পাতা কিনে দাম শোধ করার পরে তাকে ধন্যবাদ দিই। তিনি বললেন, ‘দোয়া করবেন…।’

নোট : এই সংগ্রামী মানুষগুলোর প্রণোদনা লাগে না। কারণ তাদের জীবনের চাহিদা খুবই কম। অল্পতে সন্তুষ্ট। তাই দিন শেষে যা প্রফিট হয়, তা দিয়েই চাল ডাল কেনার চেষ্টা করেন। কোনোদিন বিক্রি ভালো না হলেও এই মানুষগুলো কারে কাছে হাত পাতবে বলে মনে হয় না। কারণ তাদের আত্মসম্মান বা ইগো আপনার আমার চেয়ে কম নয়।….

সবজি নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়াই। ভাবি, এই করোনার কালে এরকম কত মানুষ তাদের পেশা বদলে ফেলেছেন এবং আগামী দিনগুলোয় আরও কত মানুষকে তাদের দীর্ঘদিনের পেশা বদলে ফেলতে হবে….?

২৭.০৫.২০
গ্রিনরোড, ঢাকা

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনা ও আমাদের বোধোদয় – দেবাশীষ কুমার সরকার
পরবর্তী নিবন্ধ ঝড় – রত্না চক্রবর্তী’র ছোটগল্প

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে