কবিতার নাম- কবি
লিখেছেন- সুপ্তি জামান
আজ বেলা শেষে দেখি
আমি জন্ম জন্মান্তরে ছিলাম কবি!
কি এক দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করেছি আমি
পরিচয় খুঁজে ফিরেছি দেশে দেশে
পশ্চিম থেকে পুবে।
কখনো প্রশ্ন করেছি জৈষ্ঠ্যের বর্ষণ
ধন্য পল্লবিত কচি আউস চারার কাছে
বলো কে আমি? কি আমার পরিচয়?
ফকফকে সুবহে সাদিকে
ছুটে গেছি কচি ধান ক্ষেতের কাছে
টগবগে কচি ধানের চারা-
বাতাসের বায়ে হেলেদুলে আহ্লাদে গলে যায়
তাহাদের মতো
আমিও ভুলেছি আমার প্রশ্ন নির্নিমেষে।
এরপর আমি জয়ন্তী থেকে ছোট যমুনা,
বড় যমুনা কোথায় কোথায় না
ভেসে চলে গেছি ভেসে ভেসে
নিঝুম রাতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গর্জনের কাছে
নিশিরাতে পদ্মা নদীতে
ভাসমান জাহাজের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে,
বান্দরবানে সারি সারি ধূসর সবুজ পাহাড়ের কাছে,
নারিকেল জিঞ্জিরায় জটাবদ্ধ প্রাণহীন প্রবালের কাছে,
মৌলভীবাজারে বিন্যাসিত চা বাগানের শিরা উপশিরায়
তামাবিলের ওপারে পিঙ্গল পাহাড়ি জঙ্গলের কাছে,
গহীন সুন্দরবনের সর্পিল পথে যেখানে
বাঘের পায়ের ছাপ দেখেই পরান আৎকে ওঠে,
সেই পথের কাছেও প্রশ্ন করেছি-
বলো কি আমার পরিচয়?
সকলে টানিয়া নিয়েছে আমারে
আপন আপন প্রশ্ন সুধাইতে।
ঘাটে ঘাটে মোট বওয়া-
বেওয়ারিশ বালকের মতো আমি
লঞ্চে, ট্রেনে, বাসে ছুটে গেছি
উত্তর থেকে দক্ষিণে
কোথাও পরিচয় মেলেনি।
সবশেষে, অনেক পথ হেঁটে এসে
ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়া এই আমি
কবিতার কাছে পরিত্রাণ চেয়েছি
কবিতার কাছে বলেছি
তুমি কি আমার পরিচয় জানো?
আমি আমারে খুঁজে ফিরেছি
আকাশগঙ্গার আলো আঁধারির পথে পথে ,
জোনাকি পোকার কানে কানে,
আমারে খুঁজেছি ডাহুকের মতো
চকিত পায়ের প্রতিটি পদক্ষেপে।
ঘাঁসে, আলোতে, অন্ধকারে,
কুর্চি ফুলের পাতায় পাতায়।
পথে যেতে যেতে বাবলার কাঁটায়
ছিড়ে গেছি, ফেঁড়ে গেছি
তবুও খুঁজেছি আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে।
এই জনমে আত্ম পরিচয় জেনে যেতে চাই।
একদিন আকাশে ঝড় ছিল,
সাথে ছিল তার চিরসহচর বৃষ্টি,
আহাঃ কেমন একসঙ্গে চলা!
দুঃখ দেখলে বিশ্বচরাচরে দুঃখ লাগে মনে
সুখ দেখলে সুখে ভাসতে ইচ্ছে করে
বৃষ্টি দেখলে গাছের সাথে আমিও যে ভিজি
সেদিনের সেই জৈষ্ঠ মাসের ঝড়ে
আমি দেখি গাছের পাতায়
কবিতা লিখছে যেন কোন এক কবি।
তাকিয়ে দেখি আমিও লিখছি বৃষ্টি নিয়ে কবিতা!
বৃষ্টি আমায় প্রথম বলেছিল তুমি কবি!
আজ বেলা শেষে দেখি
আমি জন্ম জন্মান্তরে ছিলাম কবি।