খেলা
ছোট্র ছোট্ট খেলায়
আমরা হেরে যাচ্ছি।
নিয়তিকে বলছি-
তুই মর্
তুই মর্।
আর ঐ যে লোকটি,
হেরে গিয়ে,
হাসতে হাসতে,
কেঁদে ফেলেছে।
দুপুরবেলা
আজ ৪০ মৃত্যু, আক্রান্ত ৩০০০।
টিভি বন্ধ করে,
তুমি খেতে বসেছ,
বিআর-আটাস চাউলের ভাত।
চিবুতে চিবুতে ভুলে যাচ্ছ
তোমার গ্রামের নাম।
চোখের সামনে সার সার লাশ,
তুমি গিলতে পারছ না।
তোমার গলার মধ্যে
একটা কবর আটকে আছে !
কর্পোরেট মুখ
তোমার কর্পোরেট মুখে শুয়ে আছে
মরা পাউডার, কিছু গুঁড়ো রঙ
সুকনো মাসকারা বয়ে গেছে
এপার ওপার নিঝুম রাত্রীর মত কালো।
এলোপাথাড়ি শাড়ি জড়িয়ে নিচ্ছে তোমাকে,
অনেকটা প্যাচানো র্যাপিং বক্সের আদলে।
তুমি চাইছ-ব্যায়ামে হলেও থাকুক
প্রচুর হাসি মুখ।
সম্পর্কের টানা সুতো থেকে
দিকবিদিকে সুর ছড়িয়ে যাক,
লোকেরা জানুক,
তুমি সুখী হয়েছ খুব।
সুখ সুখ খেলার তলে অসুখ জমিয়ে,
তুমি খুব চাইছ সুখের প্রচার।
গন্ধম
নরকের দিকে যেতে যেতে
আমাদের পরিচয় হলো,
জানাশুনাটা আগে হলে হয়ত
নতুন করে এই সব নরকে
আসতে হত না,
আমরা নিজেরাই একটা মনের মত
নরক বানাতে পারতাম।
বাবা
হৃদয় থেকে শত শত মাইল দূরে,
রক্তের রঙীণ নালীতে বর্ষাকাল বাজে,
সেখানে গেঁয়ো মুয়াজ্জিনের আজান শুনি…
কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে!
দোজাহানের এক জাহান পার হইতেছি,
প্রচুর সময় লাগিতেছে, বাবা।
ছুটি
দুর জাহাজের হুঁইসেলে
মিশে যাব,
ডুবে যাওয়া জলের ফোঁটায়
মাটিতে এ জীবন।
জানালার কার্নিসে পড়ে থাকব
মৃত পতংগ যেমন।
ঘুম ভেংগে গেলে,
মনে পড়ে-
কদমবন ছেড়ে এসেছি,
কন্যাদানের মত
গ্রাম ফেলে এসেছি।
মনে পড়ে-
একদিন মারা যাব,
হাতে কোন কাজ থাকবে না।
লম্বা একটা ছুটির কথা ভেবে-
ঘুম পায়।
রিহার্সেল
বর্ষাকাল,
পদ্মপাতা
সাদা হাঁস
কোলাজ,
গায়ে
ইরিধানের বাতাস
স্মৃতিঘ্রাণে নাক
মাছ মন,
গাছ মন
ধানক্ষেত
সরিষাক্ষেত
প্রচুর পড়াশুনা।
ধানের ডগা
অশ্রু শিশির,
ট্রিগার চেপে
হেমন্তকাল,
বৃক্ষজীবন
সুন্দর।
বৃদ্ধকালটা
আরও।
চা পান,
শিকার
সিদ্ধখাবার,
কাঁচাসব্জি
কৃষিজীবি মন
মৎসজীবি হাত
বুকপাখি
খাঁচা,
মৃত্যুগন্ধ্যা নদী
একদিন দুইদিন তিনদিন…
যেতে যেতে স্টেশন,
হাঁটুভাংগা দ।
তারা খসে
টুপটাপ
শরীর সুকিয়ে
এতটুকু চোখ
নিভু নিভু,
রুহু শুধু,
ঈশ্বর সদা প্রস্তুত ।
কথার জাহাজ
পিতারা যখন কাঁদে,
তখন আকাশ ভেংগে পড়ে।
সব কথা পাহাড়কে বলতে নেই।
তাছাড়া দুঃখ একটি বর্ণনাতীত বিষয়
নিরবতা যার একান্ত খাদ্য,
যেখান থেকে সৃষ্টি হতে পারে
নতুন এক পাহাড়,
বৃক্ষরাজী, জংলী ফুল
এবং জুম চাষ।
পিতারা যখন কাঁদে তখন বর্ষাকাল
হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসে,
মেঘ গলে ধুয়ে যায় পাপ।
কিছু কথা তাই নদী হয়ে বাঁচে
নদীর থেকে আরেক নদী,
তারপরেও নদী……..
বাঁকে বাঁকে রেখে যায়
কথার জাহাজ।
প্রজাপতি
দুর থেকে কেউ আপনাকে
নাম ধরে ডাকে।
সেখানে গিয়ে দেখেন,
আপনি ডাকছেন তাঁকে।
আপনাকে, আপনি ছাড়া
কেউ ডাকে না,
ব্যাপারটা জানার পরও
সাড়া দেন।
আপনি জানেন,
ঘুম আপনাকে খেয়ে ফেলে,
আপনি অভ্যেসে শুয়ে পড়েন।
আপনাকে সন্ধিবিচ্ছেদ করলে,
একজন আপনি’র সাথে বেশ কিছু
নিস্ফলা প্রত্যয়, কতিপয় আনন্দ গান,
পিতার কারনে ব্যার্থ পুত্র
পুত্রের কারনে ব্যার্থ পিতা,
আর কিছু
সবুজ
নীল
লাল-হলুদ
পাওয়া যাবে।
আপনার মগজ এক নীল আকাশ
সেখানে উড়ে বেড়ায় মৃত্যু
আর এক রঙীন প্রজাপতি।
যতদিন তারা উড়বে
ততদিন
আপনাকে দুর থেকে কেউ ডাকবে,
কাছে গিয়ে দেখবেন,
আপনি ডাকছেন তাঁকে।
ভাটফুলের বন
মানুষ হয়ে জন্মালে ওড়া যায় না,
এই দুঃচিন্তায় পাখির মন নিয়ে
একদিন সে কবি হয়ে যায়।
মানুষ থেকে কিছুটা সরে,
পাখির কিছুটা নিকটে গিয়ে,
সে না পারে ঠিক মত হাঁটতে,
না পারে উড়তে।
তখন কোন কোন রাতে
মৃত্যু কামনা করতে করতে
ঘুমিয়ে পড়ে সে।
ঘুমের ভিতরে-
প্রকান্ড এক ভাটফুলের বন,
একলা সে, বাল্যকালের মত ন্যাংটো সে।
পা নেই,
পায়ের জায়গায় দুটো ফিঙের লেজ।
ঘুমের মধ্যে উড়তে থাকে সে।