কবি গোলাম কবির‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
352
Golam Kabir

তোমার প্রশ্রয়

তোমার প্রশ্রয় পেলেই আমূল
বদলে যাবো, মাওলানা রুমীর মতো
নিজের অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে
অসীমের টানে পথে পথে ঘুরবো,
জীবনের মানে খুঁজে পাবো।
মনসুর হাল্লাজের মতো আয়নায়
আর কখনো নিজের মুখ দেখবো না তোমাকে ছাড়া,
শিবলীর মতো দেহে অবস্থানরত রক্তকণিকার সাথে
তোমারই নাম জপার চুক্তি করে নেবো,
ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও
হাসতে হাসতে তোমাকে ভালবাসি
সবার সামনে বলে দেবো
এবং শেষ চাওয়া হিসেবে
তোমাকেই চেয়ে নেবো,
আমাকে শুধু একটু প্রশ্রয় দিও।

একজন নদী পাগলা মানুষ

কখনো কখনো বুকের ভেতর
তোলপাড় করে সাত সমুদ্দুরের
উথাল পাথাল ঢেউ!
চোখ দিয়ে গড়ায় না অশ্রুজল,
করে না টলমল কিংবা চিকচিক
অথচ ভেতরে আমার বহমান
মৃতসাগরের জল জমাট বেঁধে আছে!
প্রচন্ড ইচ্ছে করেও কাঁদতে পারিনা কখনো!
আচ্ছা, আপনারাই বলুন তো
সব পাথরই কী শুধুই পাথর হয়?
কেউ কেউ তো পাহাড় পর্বত হয়ে
অবশেষে একদিন মাটি ফুঁড়ে
কান্না করে বেরিয়ে আসে, ওটাকেই
তো লোকেরা জলপ্রপাত বলে ;
আবার কেউ কেউ ওটাকে বলে ঝর্ণা!
আমার কখনো কখনো কোনো
মৃতপ্রায় নদী দেখলে
মনের ভিতরে যে কী হয়,
আমি বোঝাতে পারবো না!
মনে হয় আমিও যেনো ওর মতো
হয়ে গেলাম কষ্ট পেয়ে। আচ্ছা,
আমার কেনো এমন লাগে?
আমি কী তবে সত্যি সত্যিই
পাগল হয়ে গেলাম! নাকি
একজন নদী পাগলা মানুষ!
আবার কখনো কোনো যুবতী
খরস্রোতা নদী যখন বন্যায় ভাসিয়ে
দেয়, রাতদুপুরে খলবলিয়ে হেসে
ওঠে অথবা জ্যোৎস্না রাতে চিকচিক
করে ওর ঢেউ গুলো, আমারও
তখন কেমন জানি খুবই আবেশে
জড়ানো অদ্ভুত এক অনুভুতির সৃষ্টি হয়,
আনন্দে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে
খেলা করতে ইচ্ছে করে।

যুবতী রোদে পোড়া স্বপ্ন

ঐ যে দেখ, আমার স্বপ্ন গুলো সব
পুড়ে গেলো যুবতী রোদে ভিজে,
সন্ধ্যা হতেই পুড়তে থাকা
স্বপ্ন গুলো ভষ্ম হয়ে কাকের ঠোঁটে
উঠলো যখন ; বোকা কাক কী বোঝে
অতসব ছাইভষ্ম স্বপ্ন আমার!
তাই তো সে না বুঝেই সব
উড়িয়ে দিলো দূর আকাশে!
সেই থেকে আকাশ যখন মেঘে ঢাকে,
আমি তখন ব্যাকুল হয়ে খুঁজতে থাকি তাদেরকে!
হায়! আসে না তো ফিরে তারা আর
কোনো দিনই আমার দ্বারে,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে কেবল দু’চোখ বেয়ে।

হে প্রেম আমার

মধ্যরাতের কাঁচের চুড়ি ভাঙা অভিসারের পর
পরিশুদ্ধ স্নান শেষে, প্রেম হয় অবশেষে তাঁর সাথে,
জায়নামাজে বসে চোখ দুটো ছলছল
আবার কখনো ঝরে জল অবিরাম,
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে, চোখ বন্ধ করে,
কল্পনায় বায়তুল্লাহর সোনালি দরজাকে
সামনে রেখে, পিছনে পড়ে থাকে
জমজমের ধারা অবিরত,
ডানে মাকামে ইবরাহীম,
বামে মানুষের পাপ শুষে নেয়া হজরে আসওয়াদ।
কথা হয় চুপিচুপি, একা একা –
কখনো আস্তে কখনো বা জোরে!
বুকের ভিতরে কেমন জানি পাগল করা
ঢেউ ওঠে ভালবাসার,
সবকিছুই কেমন জানি তুচ্ছ মনে হয় তুমি ছাড়া,
চিৎকার করে বলে উঠে
প্রেমিক হৃদয় – তুমি ছাড়া
এ জীবনের কোনো মানে নাই,
চাই – তাই তোমাকেই
সর্বদাই হে প্রেম আমার!

গোলামের আবদার

আমার হৃদয় প্রতিদিন নীল পেয়ালা হতে
পান করে ভালবাসার হেমলক,
তবুও স্পর্ধিত ইকারুস এর মতো ডানা মেলে
তোমার ডেরায় পৌঁছাতে চাই ভালবেসে,
নেবে তো আমায় তোমার কাছে প্রিয়তম প্রভূ আমার?
নাকি দূরে কোথাও জাহান্নামে কষ্ট দেবে
অথবা জান্নাতে রেখে দেবে শরাবুন তহুরা,
ঝলসানো পাখির মাংস কিংবা হুরপরির লোভ দেখিয়ে?
আমি তো কোথাও যেতে চাই না
যেখানে তুমি নেই,
আমি চাই তোমার সাম্রাজ্য জুড়ে
তোমারই নামের গান গাইতে গাইতে
ছুটোছুটি করতে যতো দূরে চোখ যায়
ততো দূর পর্যন্ত কিংবা তোমার
কুদরতি পায়ের সামনে মুগ্ধ হয়ে বসে থাকতে সর্বদাই।

জলপরী স্বপ্ন

এই ছোট্ট বুকের মধ্যে একটা বিশাল নদী
বয়ে চলে নিরবধি, কখনো
স্রোতের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভালবাসার ঘরবাড়ি,
জননীর শিশু, জলপরী স্বপ্ন গুলো।
জ্যোৎস্না রাতে ইলিশ ধরা জেলেদের স্বপ্ন
মর্গে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ
লাশের মতো অবহেলায় পড়ে থাকে,
তখনও নদীর ভাঙে না কালঘুম ;
কখনো তুমি এসে অভিমানে ঢেলে দাও
কান্নার ঢল, এদিকে আমি তখন
তৃষ্ণার্ত ভীষণ সুপেয় জলের এবং ভালবাসার!
ফেরে না ভালবাসা আর নিজের বাড়ি,
নদীবাসী বেদে বহরের নৌকায়
ভেসে ভেসে আমিও চলতে থাকি গন্তব্যহীন
কোনো এক গঞ্জের হাটে,
বিলাবো নিজের দুঃখ গুলো মন থেকে মনান্তরে।

Advertisement
উৎসGolam Kabir
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভায় তিন হাজার পরিবার পাচ্ছে ভিজিএফের চাল
পরবর্তী নিবন্ধমেঘের ওলান ফুলে বৃষ্টি হয়ে ঝরে -কবি নাসিমা হক মুক্তা‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে