কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়‘এর ছ‘টি কবিতা

0
276
Goutam Chattopadhyay

“বারুদের গন্ধ”

কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়

আজ সেই লুঙ্গি পরা “লোক”টা মারা গেছে…
যে আমার ঘর বানিয়েছিল বহু বছর আগে…
খুউব আদর যত্নে বানিয়েছিল আমার পূজো ঘর..
যেখানে অনেক দেব-দেবী’র সাথে
‘রাম’এর মূর্তি স্হাপিত করেছিলাম….
যে লোক’টা আজ পাগলা-গারদ থেকে
নিজের বাড়ী ফিরতে গিয়ে
গাদা গাদা মানুষের কঙ্কালের হাড় হয়ে যাওয়া
এবং তাদের বোবা অবস্হানে
ক্ষিপ্রস্রোতা নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া
এবং শিখ-গুজরাত দাঙ্গায় ঝলসে যাওয়া
সবুজ যন্ত্রণা দেখে দেখে
বহুবছর আগেই পাগল হয়ে গেছিল!
আবার সেই ভাঙচুর
আবার সেই “আমি” আর “তুমি”
আবার সেই হাওয়া -ভরা আগুন
যেখানে “সাফিন হাসান”এর আগুন নেই!
আবার সেই গোঙানি ! সেই চিৎকার !
আবার সেই নেতার প্রগলভতা!
যাদের পেটে একঝুড়ি জারজ -বক্তৃতা অসন্তোষ !
আর সুন্দর ভারত’কে জ্বালিয়ে ধ্বংসের অপেক্ষা !
আবার সেই কঙ্কাল, মর্গেও অবরোধ নিশ্চিত !
চাপ চাপ কালো ধোঁয়া -ভয়!
অবাক ভারত বারুদ-ভাষণের গন্ধে ঘুমহীন
ব্যস্তময় সত্ত্বাহীনতা, বিভেদের পারমাণবিক তাপে
ঝলসানো ভারত- চামড়ায় জ্বালাময় ঘামাচি যন্ত্রণা

দ্বিখন্ডিত মন

কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়

শৈশবে, বাবার থমথমে গম্ভীর মুখ থেকে
জরুরী অবস্থার কথা শোনা, থেকে
চুরাশিতে ইন্দিরার হত্যাকাণ্ডের পর বেধে যাওয়া দাঙ্গা,
অযোধ্যায় ঈশ্বর -আল্লাহ’র পলায়ন
থেকে কারগিল যুদ্ধ, ইরাক-কুয়েত, টুইন টাওয়ার থেকে দিল্লির যন্তর মন্তর, নির্ভয়া, বা হাথরস বা আজকের আফগানিস্তান থেকে কিষাণ আন্দোলন আমার আমি’র বিশ্বস্ত ঘুম ছিনিয়ে নিয়েছে!
যন্ত্রণা আর মন্ত্রণার মাঝে ঝুলে থাকা ক্রিয়াপদ,
ধূলো- চাটা রূপক,
ঘুণ -ধরা বৈচারিক সান্ধ্য- চা’য়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা পতঙ্গ সরাতে ব্যস্ত আমি, দীপ্ত আমি, প্রতিবাদী আমি, রাস্তার আমি
প্রেম আর যৌনতার কবিতায় হাবুডুবু খেতে দেখা কবিদের দেখলে বা বিকৃত গণতন্ত্র দেখলে,
চারু,কানু, মহাশ্বেতা আমার মস্তিষ্কে গাট্টা মারে সজোরে,
খুব ইচ্ছে ছিল একটি আস্ত মশাল জ্বালানোর,
রাস্তায় নেমে রাস্তা মেপে নেওয়ার,
মুখোশ খুলে দেওয়ার,
ইচ্ছে ছিল একটা দাঙ্গা আরো হোক…..,
ইচ্ছে ছিল একটা আন্দোলন আরো হোক….,
আজ যখন দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া আন্দোলনকে রঙ-মাখা সব্জী- বাজারে দেখি…., অভাব অনুভূত হয় অনুভবে,
ভাবি , বাড়ী ফেরাই ভালো
‘ বোধ ‘ হয়,
আমি এখন রাস্তা থেকে বাড়ি ফিরছি….,
আজ আর কোন আন্দোলন নেই…!
তাই কবিতা লেখার কোনো তাড়া নেই…!

ফান্ডামেন্টালিজম

কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়

দাঁড়ান মৌলবাদী,
একটুখানি দাঁড়ান..,
পড়েছেন কী ভালো করে
গীতা- বাইবেল -কোরান!
হক কথা কই শোনেন,
এই যে মৌলবাদী,
দেয়াল ভাঙুন, বেড়া ভাঙুন,
ভেঙে ফেলুন ছাদ-ই!
আহা, করেন ক্যানে গোসা!
আচ্ছা, ধম্ম টম্ম বোঝেন!
খাসা চলে রাজনীতি’ টা,
আমরা তো ছা-পোষা!
দাদা, এমনি করে ক’দিন?
কী আর বলি!
বোবা গলি
ছল আর বল যদ্দিন!
থামুন দেখি এবার,
ঢের খেয়েছেন
খুব চেটেছেন
মনের বড্ড অভাব!
আহা, মারবেন কী!
মুঠো ক্যানে পাকান!
সাধু না নিষাদ!
বাধান ফ্যাসাদ,
বানান ক্যানে মশান!
এই যে দেখুন কুয়ো,
কুয়োর ভেতর ব্যাঙ,
ব্যাঙগুলো সব ভুয়ো,
কাটছে কেমন সাঁতার দেখুন
উল্টো করে ঠ্যাং!
খপ খপা খপ ধরুন,
ছুঁড়ুন চিল্কা ঝিলে,
ফান্ডা বোঝেন! মেন্টালিজম?
সেকুলার-জল গিলে!
আসুন খোলা মাঠে,
একটুখানি বসেন,
ঝলমলিয়ে উঠবে তারা
আকাশটা’কে দেখেন!
জল মাপবেন পরে,
হিসেব- অঙ্ক পুঁছুন,
কী সুন্দর চাঁদ’টা দেখুন
কলঙ্ক’টা মুছুন!

পেরেক ঠোঁকার শব্দ

কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়

ঝাঁ-চকচক ফ্রেমে
লোকায়তিক প্রেমে
দেয়াল জোড়া
ফুলের তোড়া
যীশুর মূর্তিতে!
যদিও বধির জন্মাবধি..,
তবুও আমি অদ্যাবধি
শব্দ শুনি
হাতুড়ি – ছেনি
ফুটপাতে ফুটপাতে!

“এই দেশ ! আমার?”

কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়

কে বড় ভক্ত গান্ধী না গড্ সে?
বিতর্ক দানা বাঁধে কফি-কাপে মৌজ’সে!
রাজনীতি বুঝি না,পড়িনি তো ইতিহাস
হেথা হোথা ধর্ষণে জীবন তো হাঁস-ফাঁস!
কতশত প্রিয়াঙ্কা কোলকাতা রাঁচিতে
রাখো মান রাখো প্রাণ এ ভারত বাঁচিতে!
কোথা তুমি কৃষ্ণ! দ্রৌপদী’রা জ্বলছে
আলুথালু নারী আজ দুঃশাসন হাসছে!
ইকোনমি বুঝি না,ঝোলা-খালি হাটে’তে
সরকারি “বে”হোল উঠে গেল পাটেতে!
ঘরে ঘরে সারা দেশে নেতাগিরি চলছে
শিক্ষিত ঘরে বসে মূর্খ’রা বলছে!
“জিও”হাতে আজকের প্রজন্ম মগ্ন
উপদেশ শোনে না,অলীকের স্বপ্ন !
কে কার ভক্ত বটে জানা নেই এখনো
ইতিহাস লেখা হবে,পড়েছি যা পুরোনো!
মুছে যাবে দাদু-দিদা নেহরু বা গান্ধী
খেল্ শুধু দেখে যাও মারাঠা’তে সন্ধি!
এই মাটি এই জল আজ বড় অচেনা
হিংসায় ছিঁড়ে ফ্যাল পাতা ওই জিন্না!
গুম করা পরিবেশ,চোখ সব জ্বলছে
পেছনেতে হাওয়া দিয়ে জীবন’টা চলছে!
আসছে তুফান কতো কে’বা বলো বুঝছে
আসন শ্রেষ্ঠ লবে তবে কেন ধুঁকছে!
তবুও আমার দেশ জন্মেছি এখানে
মরে গেলে ফেলে দিও পৃথিবীর শ্মশানে!

অব্যক্ত

কবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়

ব্যবধান থাক…
দূরত্ব বেড়ে গেলে হৃদয় আরো কাছাকাছি বসে

আকাঙ্ক্ষার চাদরে লেপ্টে থাকে ভালবাসা, কুকুরকুণ্ডলীয় বিশ্বস্ত তন্দ্রা ভেঙে যায় বারবার
স্বপ্ন জুলজুল চোখে রাত জাগে অতন্দ্র প্রহরীর বিক্ষিপ্ত পায়ের মতো
ছিন্নভিন্ন ভাবনার শ্যাওলা-গিঁট সরাতে থাকে অভ্যস্ত আঙ্গুল
যদিও দেয়াল সরে গেলে টিকটিকি অস্তিত্বহীন প্রতীত হয় আর তখন শুধুই বুক বয়ে হেঁটে বেড়ানো।
আর নিজেরই নিঃসৃত লালায় সেঁটে যায়
অস্ফুট শব্দের ঠোঁট।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকবি জয়া ঘোষ‘এর ছ‘টি কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে