কবি জয়া ঘোষ‘এর ছ‘টি কবিতা

0
386
Jaya Ghosh

অসময়ে বৃষ্টি নামে যখন

কবি জয়া ঘোষ

অসময়ের বৃষ্টির পদাবলী শুনতে শুনতে চেয়ে দেখি প্রতিটি জলজ বিন্দুতে ছুঁয়ে আছে তোমার অভিমান। শীতল বাতাস থেকে বৃষ্টি ফোঁটার ছিঁটে এসে পড়ছে আমার মুখে।
খেলনাবাটির সংসার শেষে ক্ষণিক সময় এই বৃষ্টি ছায়ায়। কুচি কুচি শীতল বাতাস এসে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আমি ওম খুঁজতেই দুচোখ জুড়ে তোমার অবাধ যাওয়া আসা। আর বৃষ্টি ছুঁয়ে ছুঁয়ে রিমঝিম অভিমান।
মন জুড়ে বৃষ্টিকথা। একতারায় সুর বাজে চাঁদের মায়ায়। ধীরে ধীরে ভেসে আসে সন্ধ্যার সুর। দক্ষিণের বারান্দা থেকে ভেসে আসে
” তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি…”।
দূরে ডেকে ওঠে মনপাখি। আমি কান পেতে থাকি।
সুর, মায়া, কথা, ডাক কোনোকিছুই যেন উপেক্ষা করার নয়।
এইসব ডানাভাঙা এলোমেলো শব্দ ছুঁয়ে উড়ে যায় অহিংস বুনোহাঁস। শিখে নিই ভালোবাসতে গেলে আরোও কাঙাল হতে হয়। পারিনি তো! হয়তো পারবোও না। এইসব নিবীড় ভাবনা ছুঁয়ে আমি আছি। কাছাকা‌ছি। এইসব অসময়ের বৃষ্টির গন্ধে তোমার অভিমান মেখে এইসব টুকরো টুকরো অনুরাগ নিয়ে, এইসব সজলকথা বুনতে বুনতে এই বেশ ভালো থাকা। এই বেশ ভালো আছি।

কাব্যপ্রেম

কবি জয়া ঘোষ

তোমার কবিতার কাছে
নতজানু হয়ে বসি।
ডুব দিই সেসব অতল শব্দের গভীরে
দুচোখ বেয়ে ভালোবাসা নেমে আসে।

পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লে

কবি জয়া ঘোষ

পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লে,
বাতাস আসে মনকেমন
সুরেরা দোলা দেয় সমস্ত উপত্যকায়।
আর তখনই আমার ভেতরে ঢুকে পড়ে
দূর থেকে দূরের অগণিত ঢেউ।
যেন ছায়াময় এক প্রেমিক হৃদয়।
নিরুপায় তবুও ডানা মেলি নিজেরই ভেতর।
খুলে দিই সব বন্ধন
ভালোবাসা শেষ হয়না বোধহয়।
নিবিড় এক কান্না আসে অকারণ।
ঠিক যেমন কখনও কখনও অকারণেই
ভালোবেসে ফেলি।
প্রেম ভাসিয়ে যায় মুগ্ধ এ নয়নে।

ভালোবাসা তুমি তরঙ্গ হয়ে যাও

কবি জয়া ঘোষ

প্রিয় সখা…
তুমি কি জানো?
কোন সে ঐশ্বর্য টান?
কথাহীন, দৃশ্যহীন, স্পর্শহীন তবুও কী এক
অসীমতা ছুঁয়ে দিয়ে যায়।

তোমায় দেখেছিলাম যেদিন

কবি জয়া ঘোষ

সেই যেদিন তোমায় দেখেছিলাম সেদিন থেকেই
যখন তখন বৃষ্টি নামে মাটির বুকে
নিবিড় সুখ.. শালিক, চড়ুইয়ের সোহাগের মত।
বাতাসের গায়ে সোঁদা গন্ধ! ইতিউতি জলফড়িংয়ের নেচে ওঠা। তোমার ও কি এমন হয়?
কান পাতো। নদীর ঢেউ শোনো। দেখো যেন এক গর্ভবতী রাজকন্যা।
মুখ ফিরিও না। হারিয়ে যেও না। সামান্যই চাওয়া।
চিরসখা তোমার আমার এই মুগ্ধতা দেখবে বলে চাঁদ অতিথি হয়ে আসে তিনপ্রহরের জানালায়।
আলো হয়ে যায় তোমার জোছনায়…।

নীরব আলেখ্য (১)

কবি জয়া ঘোষ

মহাকালের নীল বিষে অন্ধকারে ঢেকে গেছে সময়। বিস্তীর্ণ নদীর তীর বরাবর সারি সারি শবদেহ। কতশত বেদনা, দু চোখের অশ্রুমতী কথারা সব হারিয়ে যাচ্ছে কালের গভীরে। তোমায় কখনও যেন এসব যাতনা স্পর্শ করতে না পারে। তবুও জানি, না চাইতেও ছুঁয়ে যায় এসব ধোঁয়ার মত।

জীবন তরীতে বইতে বইতে একটি জন্মকালের চেয়েও বেশি ঋণ রয়ে গেছে প্রিয় লখিন্দরের কাছে।সমতল থেকে পাহাড় ছুঁয়ে ভরে নিয়েছি আজন্মকালীন সুখের পাত্র। যা কিছু মুঠো মুঠো ঋণ সেটুকুই পাওয়া অথবা আপনত্ব সুখ।

তবুও দ্বিধান্বিত এ প্রাপ্তি অথবা অপ্রাপ্তির সেতু পেরিয়ে যদি সে অনার্য “পুরুষের ” ডাক পাই, যদি আবার আসতে হয় এ ধূলোমাখা ধরণীতে, তবে পাতাল ফুঁড়ে আবার নতুন জন্ম নিতে পারি। তাঁকে নিয়ে একশোটা বনবাস কাটাতে পারি। কিছু বোধের উন্মোচনেও পর্দা টেনে ঋষি কাঁকড়ার মত হারাতে পারি তাঁর সাথে গুহার অতল তলে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধকবি গৌতম চট্টোপাধ্যায়‘এর ছ‘টি কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের বড়াইগ্রামে নৃ-ত্বাত্তিক নারী শিক্ষার্থীদের সাইকেল বিতরণ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে