“বাংলার ত্রস্ত নীলিমা”- মলয় রায়চৌধুরী
সোনালী ডানার চিল নাই আর, কাঁদেও না, এখন কেবল
সারাদিন ডিজেল-আকাশ জুড়ে শকুনেরা পাক খায়
আপনার দেখা সেইসব বধূরাও নেই ; তারা সব ধর্ষিত হয়ে
ধানসিঁড়ি নদীতীরে লাশ হয়ে আছে । উবে গেছে ব্রা্হ্মধর্ম–
গাঁয়ে ও শহরে যখন-তখন দাঙ্গা লেগে যায়, লাশ পড়ে থাকে।
.
আমিও আপনার মতো মিশতে পারি না হায় সবায়ের সাথে
মনে হয় বিশ্বাস করার মতো কিছু নেই, কেউ নেই ।
বাংলার ত্রস্ত নীলিমা ছেড়ে, আত্মনির্বাসন আজ ভালো মনে হয় ।
প্রেমিকা
উৎসর্গ : রত্নপ্রভা
মাথার দিক থেকে গেলা আরম্ভ করো তুমি
চেবাও না, চেবাবার দাঁত নেই, শুধু একটু-একটু করে
পুরোটা অস্তিত্ব গিলে নাও, জীবন্ত গিলে নিতে থাকো
একেই প্রেম বলে মনে করো তুমি
প্রেমিককে আগাপাশতলা চুবিয়ে জারকরসে
দুটি দাঁতে বিষ জড়ো করো।
ধর্মবাঁধন
উৎসর্গ : কুলসুম আপা
পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো প্লাস্টিকে মোড়া
কয়েকটা বলব ? নাকি কয়েকজন !
পচছে একত্রে মর্গে ! নাকি পচছেন বলব ?
কেউই জানে না কে কোন ধর্মের ! লাশ বলব ?
গাদাগাদি, একের ওপরে আরেক,
দুর্গন্ধে কাছে যাচ্ছে না কেউ । পার্সি, মুসলমান, হিন্দু
খ্রিস্টান,বিদায় নিতে চান । কিন্তু মুদ্দোফরাসেরা ভয়ে
মর্গ থেকে বের করতে চায় না ওনাদের—
ওনাদের বলব ? নাকি মড়াগুলোদের !
গোরস্তানে গরিবদের গোর দেবার অনুমতি নেই
পার্সিদের টাওয়ারে শকুনদেরও যদি রোগ হয় !
এই ভালো গাদাগাদি করে মরে পড়ে থাকা
একত্রে পচতে থাকা বহু মানুষের সাথে,
যাদের কোনো ধর্ম নেই ।
‘চুমু’
উৎসর্গ : ভূবনমোহিনী রাণা
আমি তো চাইনি তবু তুমিই এগিয়ে দিলে ঠোঁট
চেপে ধরলে, আর আমি জড়িয়ে ধরতেই সপাটে
কষিয়ে দিলে চড় ; মা-বাবার কাছে এরকম চড়
খেলে নিশ্চয়ই কেঁদে ফেলতুম । আমি তো একটা
কবিতা ইংরেজিতে লিখে ভালোবাসা জানিয়েছিলুম
জানতুম তুমি মদ থেয়ে আছো, নেপালের মদ–
ছ্যাড়িনি কিন্তু আমি, জাপটে ধরে তাপ নিচ্ছিলুম
চড়ের আওয়াজে মাঝিরাও আমাদের প্রেম দেখছিল
আবার পাবো না কি তোমাকে গঙ্গার ধারে মাঝিদের
চমকে-দেয়া চুমু ও চড়ের দ্বৈত সন্ধ্যাসঙ্গীতে ?
“নরম”
হে নরম তুমি চরম কঠিন কঠিনতম
হে নরম জীব-জগতের কী এক বিস্ময়
বিচলিত ঠোঁট খুলতে উৎসাহ কেন দাও
মুঠোর আঙুলও মেলে ধরো হে নরম তুমি
দেহ থেকে আচমকাই মেঝেতে ফেলে দাও
নরম মেলে ধরবে বলে হে নরম তুমি
চরম কঠিন কঠিনতম তুমি তবুও নরম