কবি মাহফুজা আরা পলক‘এর ছ‘টি কবিতা

0
181
Mahfuza Polok

মন

মাহফুজা আরা পলক

এ আমার মন,
মনের অতলে
দোলাচালে চলে,
নিজের সাথে
নিজের আলাপন।
অবিমিশ্র মনে
খুঁজি আমার
সরল পৃথিবী,
পৃথিবীর বাহুডোরে
কেবলই ধোঁকার ছবি।

১৭.১১.২০২১ বুধবার

নির্মল হোক পৃথিবী

কবি মাহফুজা আরা পলক

হিংসুক না পায় সুখ
হিংসা বড় অসুখ,
হিংসার অনলে গলে
ওঠে দুঃখের বুদবুদ।
হিংসুক না পায় সুখ
হিংসা বড় অসুখ,
অপরের নাশ করে
ভাঙে শান্তির পুর।
হিংসুক না পায় সুখ
হিংসা বড় অসুখ,
হিংসায় জ্বলেপুড়ে
হারায় পূণ্যের নূর।
হিংসুক না পায় সুখ
হিংসা বড় অসুখ,
অন্যের যশ দেখে
বাড়ে নিজের ভুখ।
হিংসুক না পায় সুখ
হিংসা বড় অসুখ,
সকল হিংসা ভুলে
জ্ঞানের তৃষ্ণা বাড়ুক।
হিংসুক না পায় সুখ
হিংসা বড় অসুখ,
হিংসার বেড়াজাল ভেঙে
পৃথিবী নির্মল হয়ে উঠুক।।

২০.১১.২০২১ শনিবার

সামর্থ্যের পূর্ণচ্ছেদ

কবি মাহফুজা আরা পলক

আমি স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের
এ পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখতে পাই।
ও পাশে কেমন করে সূর্য ওঠে
কেমন করে শেষ রাতের কলি গুলো
লজ্জা কাটিয়ে প্রস্ফুটিত হয় ধীরে ধীরে,
পাপড়ি গুলোর গায়ে ভোরের শিশির বিন্দু মেখে
পরিতৃপ্ত মনে কুসুম গুলো তার সৌন্দর্য মেলে ধরে।
কেমন করে ভোরের আলোয় ঝাঁকবেধে
হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পরিযায়ী পাখি
ভিনদেশে এসে নিরাপদের অস্থায়ী আবাস খুঁজে!
কেমন করে নগ্ন ক্ষুধার্ত শিশুটি রাতের উপবাস শেষে
ভোরের আলোতে ধুলোর বসনে লুটোপুটি খেয়ে
উদরের নাড়িভুড়ির চাপে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে
ক্লান্ত হয়ে নাসিকার গড়িয়ে পড়া নোনতা রসে
প্রাতরাশ সারে!
আমি দেখতে পাই জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে
তামাটে মানুষ গুলোর নিষ্প্রভ চোখের ভাষায়
বিস্ময়ের যতিচিহ্ন।
দশ ভাগের করপুটে একতাল বঞ্চিতের ভাগ্য নিয়ে
আয়েশী সময়ের অবকাশে পাশা খেলা,
আমি দেখি ভূতলে বজ্রপাতের হুঙ্কারে
অসহায়ের চোখ থেকে নির্গত অবিরাম সলিল ফোয়ারা।
সমতা শব্দটি কমরেডের এক আকাশ সম স্বপ্নের দেয়ালে ঘুণেধরা ফ্রেমে কাত হয়ে ঝুলে আছে,
সারা বছরের খোরপোষ পেষণ হচ্ছে পোকার চোয়ালে।
আবাদি জমিতে আকাশ কালো করে আসা অনাহুত পঙ্গপাল ঠেকাতে মুষ্টিমেয়র উর্বর মস্তিষ্ক নাজেহাল।
আমার গলাফাটা চিৎকার পৌছে না নিরেট কাচের দেয়াল ভেদ করে
মুষ্টিবদ্ধ হাতে সেই দেয়াল ভাঙতে গিয়ে অসংখ্য টুকরো কাচের আঘাতে পূর্ণচ্ছেদ এঁকে অস্তগামী বিদায়ী সূর্যের ন্যায়
কেবল তেজোহীন রক্ত ঝরে।।

১০.১০.২০২১ রবিবার

সত্যি

মাহফুজা আরা পলক

তোমার একলা দুপুর মন
আমায় ভাবে অনুক্ষণ,
আজব মনের গহীন কোন
সেথায় বাজে নতুন ধুন।
তুমি শূন্য পথের পানে
যখন তাকাও উদাস ক্ষণে,
আমি আছি, কাছাকাছি
তোমায় বলে হাওয়ার সুরে।
যখন সন্ধ্যে নামে পাটে
ভাবো ফিরবো বাড়ির বাটে,
তোমার ভাবনা গুলো সব
আমায় ভেবে করছে কলরব।
তোমার আবেগপ্রবণ মন
ঝরায় দুঃখের প্রস্রবণ,
কর যখন তোমার চাঁদের খোঁজ
বলে ডেকো না আর রোজ?
শুনে হারাও নিজের খেই
সত্যি, আমি বেঁচে নেই।

৩০.১১.২০২১ মঙ্গলবার

শব্দের ক্ষিপ্রতা

মাহফুজা আরা পলক

শব্দেরা নির্ঘুম প্রহর জাগে
শব্দের ভেতর শব্দ ভাঙে গড়ে
ভেঙে চুরমার হয়ে উদ্ভাসিত হয়
নতুন কোন সত্তা রূপে।
ভাঙনের শব্দ চায় মৌনতার আশ্রয়
মৌনতা ভেঙে শব্দ বিস্ফোরিত হয়,
চুপচাপ নিরব আভরণময় শব্দে
ভাবের ব্যবচ্ছেদ ঘটে মস্তিষ্কের খাঁজে।
বেপরোয়া গমন শিরা-উপশিরায়
কঠিন বাক্যবাণে মোহগ্রস্ত সমাজের আত্মায়
দক্ষ হাতে তীর্যক শেল বিধায়,
যুগের সন্ধিক্ষণে অথবা শতাব্দীতে
হয়তবা দেখা মিলে বহু প্রতীক্ষা শেষে।
নির্ঘুম ক্লান্ত পথ বেয়ে তার হাত ধরে
শব্দেরা চলে দুর্গম পথে নিগৃহীত হয়ে,
শব্দ চলে, চলে আলোর বর্ষা হাতে
ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে এসে সকল
কালিমা ভরা অন্ধকার বিদীর্ণ করে
শব্দের বাণ হাতে এফোঁড়ওফোঁড়,
তারপর কাঙ্ক্ষিত আলোকে সারথি করে
ধেয়ে চলে অসীম জ্ঞানের অন্বেষায়,
রাশি রাশি জঞ্জাল পুরিয়ে কল্যাণের পথে
শব্দ গুড়িয়ে সমৃদ্ধ শব্দ গড়ে
এর পর পাড়ি জমায় স্থিরীকৃত গন্তব্যে,
আলোর রথে আলোর পথে ।।

২৪.১১.২০২১ বৃহস্পতিবার

সোচ্চার হও নারী

মাহফুজা আরা পলক

আর কত আর্তচিৎকারে
ঘুম ভাঙবে আমাদের?
আর কত সম্ভ্রম হারালে
সম্বিত ফিরবে সমাজের?
সোচ্চার হও নারী,
রিপুর বিনাশে জাগ্রত হোক
তোমার ধারালো তরবারি।

 

Advertisement
উৎসMahfuza Polok
পূর্ববর্তী নিবন্ধমেঘ না চাইতে বৃষ্টি -কবি আরিফ নজরুল‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধতাম্রাক্ষের অবসান ১৯৭১

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে