কবি মুতাকাব্বির মাসুদ‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
392
Mutakabbir Masud

লকডাউন

লকডাউনে সময় বন্দি অলস কুহকে
সোহাগির কম্পিত ঠোঁটে খেলে মরণের ডর
আর ‘বোহেমিয়ান’ অবিনাশী ‘করোনা’র ঢেউ
তাঁর লতানো শরীরে প্রিজমের মতো
উদ্ভিন্ন উরজে খেলে দুর্বিনীত যৌবন
অসূয়ার ঘরে নিথর শরীরের ভাঁজে নিভে গেছে দেউটি
অনাহারী বিবস্ত্র গোধূলির ঝড়ে
আজ আর কেউ তাঁর রাখে না খবর!
আমিও আজ বিবাগী পরিযায়ী মানুষের মতো
অসুখের বাথানে কাটাই সময় কাপালিকের ডেরায়
কালোকালো পতিত নষ্ট নক্ষত্র যত ডানা মেলে
রুপোলী অরণ্যের রুগ্ন ডুমুরের ছায়ায়
কী এক নেশার ঘোরে আমিও গোরে যাই
গোর খোঁড়ি অস্পৃশ্য রাতের আঁধারে
আমি দাফন করি প্রচণ্ড অভিরোষে আমারই মগজে
লুকোনো সেই কালোবাজারি অভিযোজিত স্বপ্নের কংকাল!

বৈরাগী শহর

কালের জঠরে খেলে অনিরুদ্ধ অনুতাপে
দিগন্ত বিস্তৃত অবিন্যস্ত সময়ের অনৃত বাস্তবতা
জীবন থামেনা অনুষ্ণ জলের কবোষ্ণ বুকের ভেতর
কইতরীর ওমভরা বুকে-
সুখেরা ওড়না ওড়ায় বাক-বাকুম নৃত্যে
বেওয়ারিশ চাঁদের আলো উন্মাদ-
জোনাকির মস্কানো ডানায় বাঁধে উন্নীদ্র রজনীর ঘর
বেহিসেবী কর্কশ ঝিঁঝিঁপোকা
উদলা নিতম্বে নিঃসঙ্গ রাতের কষ্ট নিয়ে খেলে
গলির ভেতর একঝাঁক মাতাল কুকুরের ভিড়
দূরে রক্তশামুকে জড়ানো দালান
নগ্ন হয়ে উদোম শরীরে যৌবতী পেঁচা
ক্লান্ত রাতের কাজল মাখে গায়
নিষুতি রাত কেবলই ধর্ষিত হয়
বেমালুম রক্তাক্ত হয় নিষিদ্ধজনের নষ্ট কাফেলায়
আমার বৈরাগী শহর ক্লান্ত ল্যাম্পপোস্টের নিচে
একাকী অনুজ্জ্বল নিঃসঙ্গতা গিলে খায়
আঁজল ভরা রাশি রাশি জলের ভেতর
শহর আমার অনন্ত যৌবনা উড়াল পাখির চঞ্চুতে-
আঁধার কেটে উন্মগ্ন হতে চায়- অন্তহীন মরণের মতো
হারিয়ে যেতে চায় -মিশে যেতে চায়
ক্রমাগত উন্মাদ পাগল হাওয়ায়
মুক্তি খুঁজে- মুক্তি চায় বন্ধনহীন আলোর অন্বেষণে
কোনো এক ভোরে শিশিরের
মায়ায় মুখর রোদের শরীরে ;
আমার শহর এখন ঘুমিয়ে আছে
নিথর নিশির আঁচলে
শব্দহীন নিঃস্তব্ধতার চাদরে

২২-০৫-২০২০

চোখের লাশ

এখানে এই চোখের বেলকনিতে
এক চিমটি আলো ছিলো
এক ঝাঁক আলোমতি জোনাক ছিলো
ভালো ছিলাম ভালোই আছি!
তোমায় নিয়ে ভালো থাকবো বলে এখন আমি
একেবারে গ্রহণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি!
চোখের জলে তোমার চোখের আলোয়
আমার এ পথচলা!
অন্তর বাহিরে কেবল
কখনো আলো কখনো আঁধারের খেলা!
তোমার আমার অতি নিকটবর্তী সম্পর্কের
দূরবর্তী মধ্যগগনে, আজ এই মধ্যবয়সে
বয়সী চশমার অনুদ্বেগ শরীর বেয়ে,
কেবলই নামে সমুদ্রের হিমশীতল দুর্বোধ্য
বরফ পেঁজার বিন্দু
তোমারই অনুদানে পাওয়া
অনধিগম্য আলোর শরীরে খেলে
আজ মৃত আলোর কণা
আলোর ঘরে আলোর দ্যোতিত আঁধার
তাহলে আমি কি দেখেছি চোখের আলোয়
তোমারই চোখের লাশ ?

২১-০৬-২০২০

দহনে ক্লান্ত শ্মশান

হাজার বছরের পরিত্যক্ত সভ্যতা
উদ্বেগ উন্নিদ্র গুহার ভেতর গভীর তিমিরে
বনসাই যৌবনের ফসিল
নষ্ট-নোংরা জলের শরীরে অতি নষ্ট নেংটা
পোকার সন্তরণ
দুঃস্বপ্নের মতো অসভ্য সঙ্গমে লিপ্ত উড়ন্ত মৃত্যু যত
দাঁতাল বাদুড়ের বর্ণবাদী ডানায় বিষাক্ত নিসাসে
একটি পরাবাস্তব সভ্যতার অপমৃত্যু
আমার পূর্বপুরুষের মগজে স্থাপিত
নিরঙ্কুশ সভ্যতার নন্দিত যতো স্থাপনা
বিলুপ্ত আজ হরপ্পা-মোহেনজোদারো- সিন্ধু সভ্যতা
গুহার ভেতর ক্ষুৎপীড়িত সীমাহীন নাঙ্গা মৃত্যুরা
ভুকপিয়াসে হাজার বছরের
সঞ্চিত আমার পিতৃপুরুষের জমানো সভ্যতা
তথাকথিত শ্বেত কুষ্ঠাক্রান্ত অমার্জিত উঁচু দালানে
কিংবা সভ্যতার দীপ্তিহীন গুহার ভেতর
সাদা সাদা গেলাসে বিবর্ণ ‘ওয়াইনে’র সাথে
অনায়স গিলে খায়- যতসব রক্তপিপাসু হায়নার দল
বিপন্ন কালো দাসীর অনাঘ্রাতা শরীরের ভাঁজে
অলক্ত রসে সম্পাদিত ধ্রুপদ ভায়োলিনের মতো
তাঁর কোমল তন্বী শরীরের উরসে
অতুল সৌরভে গৌরবে
বাদামি-বেগুনি জীবনদায়িনী উরজ-
সভ্যতার রক্তাক্ত মিনার- ঈশ্বরের সর্বোৎকৃষ্ট শিল্প
আজ বৈশ্বিক সভ্যতার বেপর্দা করিডোরে
বিমর্দিত তমস্বিনীর নির্মম-বেহায়া কাজলের আঁচলে
মৃত্যুর মতো অনায়াস হারিয়ে যায়
গুহার দুর্বিনীত মাংসাশী চোখের বারান্দায়
উদ্ধত যতো কালবেলা
শ্বেত কপালে লালটিপ ভাঁটফুলের বন
অদীক্ষিত যৌবনি কালো আর ধলো
চলোর্মি চঞ্চল নন্দিত চপল প্রজাপতি
টুনটুনির মায়াবী শিসে অনুদ্বেগ-উদ্বেলিত
মাকড়জালে বন্দি অনায়াস অনুক্ষণ
চারদিকে আমি দেখি সভ্যতার লাশ
কতিপয় ব্যভিচারী বিবস্ত্র শূকর টেনে নিয়ে যায়
দহনে ক্লান্ত শ্মশানে
গুহার ভেতর-জলের ভেতর অনিদ্র প্রহর
চিরগত মৃত্যুর মতোই সভ্যতার ঝলসানো
অন্তঃপুরে কেমন এক নর্তকী গন্ধ আসে নাকে
তবু কেনো-জানি বুকের ভেতর
আগুনে পোড়া বিধ্বস্ত নগর
দহনে দহনে মৃত জীবনের তৃষ্ণা বাড়ায়
আমার জ্বরাক্রান্ত বিপন্ন কলিজার ভেতর
ঠিক যেখানে একঘর কৃষ্ণ-শুক্ল নিরীহ-নিঃসঙ্গ বিপন্ন
ডাহুকের বাস !

১৪-০৬-২০২০

হারিয়ে গেছে যৌবনে

সেকাল হারিয়ে গেছে পলকে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে,
একদিন ক্লান্তিহীন সমুদ্র রূপোলী রোদের-
শরীর ভিজিয়েছিলো সীমাহীন উদ্ভিন্ন যৌবনে
বিমূর্ত দুরবিনে একাল একদা বন্দি ছিলো
কোলাহল মুখর একগুচ্ছ হলুদ টিয়ার গেরুয়া চোখে
আজ কালের চিকন নিস্পন্দ ঠোঁটে স্তনিত হয় আমার
একালের দৃশ্যকাব্য- পরিপাটি শেষ জীবনের করিডোরে
আমি বিস্ময়ে বিস্মিত-কেমন করে আমার অবশীভূত
সেকাল-জেগে থাকে অমীমাংসিত
এই অবিমিশ্র একালের অন্তঃপুরে!

মনটা-ই আসল

আসলে মনটাই আসল
বেঁচে থাকার সোলার প্যানেল
অজানা শংকার ভেতর অনন্ত প্রহর
গুনেগুনে যায়
মরণে দহনে জ্বলনে টিকে থেকে
লড়াই করার সাহস যোগায়
বুকের ভেতর
বিধ্বস্ত নগর
জীবন যদি তার পথ হারায়
হাত ধরে তার বাঁচতে শেখায়
মনের জোর তুফানঘরেও
নন্দ সুখের স্বপ্ন দেখায়
আসলে মনটাই আসল
অতল নিতল দিঘির জল ছলছল
ভোরের চোখে রোদমাখা জল- স্বপ্ন কাজল
সাগর বুকে ঢেউ-লোনাজল
তবুও জীবন হাসে- শিশির ঘাসে
বুকের ভেতর দহন অনল
জানতে চায়না কেউ মনটা-ই আসল
বেঁচে থাকার সোলার প্যানেল
এই মনটাই আসল !

০৯-০৬-২০২০

অণু

ঘুম গেছে নিশি আজ কালো সানগ্লাস পরে
ঘুমের ঘরে কাশতে আজ ভুলে গেছে সে
অচল জীবনের ভয়ে
নিশির কালোতিল চাতালে
রাতজাগা পাখি শিস তুলে অবিরাম
দুর্বিনীত শকুনের মাংসাশী ঠোঁটের উঠোনে !

৭ জুন ২০২০

আস্থা

আস্থা নেই
ঘরে নির্জন অলস সময়ে
আস্থা নেই
প্রকৃতির অবারিত রুগ্ন বিলাসী সবুজে
আস্তা নেই
আজ কাষ্ঠের রকমারি ‘রেকে’
সাজানো বন্দি কাগুজে মেধা আর মননে…!
আস্থা নেই
ব্যস্ত রাজপথে জীবীকার টানে
রকমারি মানুষের অনুদ্গত বিষণ্ণ প্রভাতফেরীর ভিড়ে
আস্থারা আজ
ঝরে পড়ে চুনমাখা- বয়েসী সাদা দেয়ালে
দৌঁড়ে পালানো টিকটিকির
রক্তশূন্য-অমসৃণ খসেপড়া লেজের সাথে…!
আস্থারা আজ
কুঁকড়ে গেছে বিহড়া কালের বিমূঢ় বিমূর্ত ব্যাধির
অন্ধ গলিতে
আস্থারা আজ
রোদ পোহানোর জানালায় অসুখের শাসিতে
দিগন্তে চোখ মেলে চোখের ভেতর হারিয়ে গেছে!

২৭-০৫-২০২০

Advertisement
উৎসMutakabbir Masud
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের সিংড়ায় হালিতে নয় ২০টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে লেবু
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের বড়াইগ্রামে জুয়া খেলার অপরাধে ৯ জন আটক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে