দুচোখ জুড়িয়ে যাক
একটা সাদা রঙ পাখি
কৃষ্ণ তার নাম
এক চিলতে ছোট বারান্দার গলি ধরে
উড়ে চলে যায়।
একটা কুনো ব্যাঙ
সোনাভান তার নাম
ব্যক্তিগত রাস্তায় খেলতে এসে
গাড়ির চাকার তলায়
পিষ্ট হয়ে যায়।
একটা সবুজ পাতা
ঝড় বাদল ছাড়া একা একা
অকারণে ঝরে পড়ে যায়।
এসব বহু প্রচলিত দৃশ্যপট
কেউ কারও ছিলোনা কোনদিন
অথচ আমি তোমার হতে চাই
তুমি আমার হও বন্ধু
ঝরা পাতা আবার বৃন্তে গিয়ে জুড়ুক
অপরূপ দৃশ্য দেখতে এসো একবার
দুচোখ জুড়িয়ে যাক।
অন্য কোন ছবি
ওঁৎ পেতে থাকা দুঃখকে বলি
একটা কষ্টের নদীর উপর দিয়ে হাটছি
যে পুড়ে গেছে তার আগুনের ভয় নেই
তেল আর জল দুঃখ আর আমি
সুখের তুলিতে জলরঙ লাগিয়ে ছবি আঁকছি।
নতুন মোনালিসা
তোমাদের চীরচেনা সে নয়
অন্য কোন ছবি অন্য কোন গান।
রঙধনু নদী
সব সৃষ্টিতে শুধু প্রেম আর প্রেম
তবুও আমি প্রেমে নেই
সব নতুনের আনন্দে আছে প্রেম
তবুও আমি নেশায় বুদ হয়ে আছি
প্রচলিত সব সুর থেকে
কে তুমি কেড়ে নিয়ে যাও আমায়?
তোমার সাথে যাবো বলে
চুপ করে বসে আছি খেয়া ঘাটে
কী অপরূপ স্বচ্ছ জল
যেন রঙধনু নদী।
হায় হোসাইন
ঐ দূরে কাছে আজানের ধ্বনি শোনা যায়
হাইয়ালাসসালাহ হাইয়ালালফালাহ বলে ডাকে
রাস্তায় নিয়নের আলোগুলো এইমাত্র নিভে গেছে
আর মন হয়ে গেছে কারবালা প্রান্তর।
সেখানে এখন বসন্তকাল, ফুলের বাহার
নানা রঙা ফুল, মসজিদের-
মিনার আর নরনারীর চোখের জল দেখা যায় সবখানে
নয়নাভিরাম মসজিদ চত্বরের আলোয় দুদন্ড বসতে ইচ্ছে করে
এখনো রেলগাড়ি বাস আর গাধার গাড়ি চলে,
হোসাইনকে ভালবেসে যে পথিক আসে বহুদূর থেকে
এ শহর মুহূর্তে তাকে ভালবেসে ফেলে।
পথের দুই ধারে খাবার নিয়ে বসে আছে বালক
তার মুখে শিশু আসগরের ছায়া লেগে আছে।
ফোরাতের জলে আজও লাল রঙ
গভীর রাতেও কেউ না কেউ কেঁদে চলে অবিরাম।
বিষাদের ছোয়া পেতে অসংখ্য প্রেমী বসে থাকে
দুই হাতে জল নিয়ে চোখে মুখে ছিটিয়ে দেখো একবার।
চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে
ঐ দুরে আল্লাহু আকবর ধ্বনির সাথে মিশে আছে বাহাত্তর জন
এখনো আকাশ বাতাস কাঁদে বলে হায় হোসাইন হায় হোসাইন।
ঈদ
বহুকাল ধরে একটা
ঈদের অপেক্ষায় আছি
যদি একদিন তুমি আসো
সেদিনই আমার ঈদ
যদি আমার সাত আসমান
সিসিম ফাঁক বলে
সব দরজা খুলে যায়
বাহাত্তর হাজার পর্দা খুলে যায়
আমি বলবো মিলন হলো এতদিনে।
ফেরা
কখনো কখনো পাখি ফেরেনা আর
হয়তো ফেরানো যায়না
ফেরাবার ইচ্ছেটা হারিয়ে যায়
ফিরবার ইচ্ছেটাও থাকেনা আর।
বনের পাখি গাছের ডালে কাঁদে
ফুলগুলো পড়ে থাকে গাছের তলায়।
দেখিনা তোমায়
হে মহাজন
তোমায় গল্প শুনে ভালবাসি দেখিনা
এভাবেই দিন বয়ে যায়
কখনো তোমায় অনুভবে ভালবাসি দেখিনা
তারপর একটা সময় আসে
তোমার শৌর্য দেখে ভালবাসি
তোমায় দেখিনা।
একসময় তুমি তোমায় উন্মোচিত কর
আমি তোমায় প্রাণ ভরে দেখি
অতঃপর তুমি কথা বল
আমি তোমাকে চিনে নেই
তদুপরি তৃষ্ণার্ত থাকি
আমি কী যাচি তুমি খুব জানো
একদিন তোমার মমতায় সিক্ত হই
তোমার অনুরক্ত হয়ে হয়ে
পূর্ণিমার আলোয় ভাসি।
জাতিশ্বর
সে অনেক বছর আগের কথা
তখন এখানে বসতি ছিলোনা
না না ভুল বললাম বসতি ছিলো
বৃক্ষ পাহাড় নদী পশু পাখি আর
পোকামাকড়ের এক আনন্দিত বাস।
পাহাড় বেয়ে ছোট ছোট জলের ধারা
বেদনাশ্রুর মত গোপনে বয়ে যেত
যেন ছোট একটা আমাজন।
সে ছিল আমার আমাজন
তখনও আমি মানবজনম পাইনি
পাখি হয়ে ছিলাম ছোট একটা পাখি।
আমার মা আমায় কৃষ্ণ বলে ডাকতো
আদর করে তুমি নাম দিয়েছিলে সোনাপাখি।
আকাশের ঐ চাঁদ জোছনার চাদর পেতে
প্রতিদিন রাতে ঘুমের সাথী হতো
সেখানকার নাম ছিল আনন্দপুর
যেন এক অবিক্ষুব্ধ বিস্তৃত সংসার।
জনমানবহীন এক পাহাড়ি উপত্যকা
চাঁদ সুরুজ গাছগাছালি পাখপাখালি
প্রজাপতি আর পশুদের ঘরবাড়ি।
মিষ্টি সকালে ঝর্ণার জলে স্নান সেরে
এলো চুলে তোমার পূজোয় বসতাম
শুভ্র বসনে নাম না জানা পাহাড়ি ফুলে
তোমার পূজো
সে কী আনন্দ তোমার শুধু আমি জানি
আর জানে পাহাড়ি অচিন গাছ।
ও ঠিক কত বছর পূজোয় আছে
নিজেই ভুলে গেছে তা আমাদের মতো।
অতঃপর অনেক অমাবস্যা পূর্ণিমা চলে গেছে
যেদিন পূর্ণ জাতিশ্বর হয়ে জন্মাবো
তোমাদের কানে কানে চুপিচুপি বলে যাবো।
একদিন তুমি চাইলে রোডোডেন্ড্রন ফুল
আমি খুঁজতে শুরু করলাম
উড়তে উড়তে আমার ছোট ডানা ব্যথায় জর্জর
তবুও আমি থামিনি একটিবার
তোমার প্রিয় ফুল খুঁজে এনে তোমার পূজো
তারপর বহুকাল পর এই মানবজনম
আমি প্রায়ই তোমার আসা যাওয়া দেখি
ভেবেছো বিস্তৃতির অতলে হারিয়ে গেছে সব মায়া
কী এমন সাধ্য আছে কার?
ভালবাসা ভুলে যায় ভুলে থাকে পরিচয়।
তানজিয়া, কামরুন, সায়লা, ঝিনুক, মনি, নাঈমা,রিয়াসত, কল্লোল স্যার প্রভূত কবিদের জন্য।
এখানে কৃষ্ণচূড়া নেই
যে অনুচ্চারিত শব্দেরা মন থেকে
ধীরে ধীরে মুছে যায়
যে সঞ্চিত অনুভব অজস্র অভিমান
ভুলে গিয়ে বানের জলে ভেসে যায়
আজ এই শ্রাবণে কালিন্দীর দিগন্তে
তাকে বিদায় বলেছি।
বিদায় হে ধলেশ্বরী নদী
বিদায় হে ফুলেশ্বরী গ্রাম
যে সময় আর ফিরে আসবেনা
যে পরান ভালবেসে আর কাঁদবেনা
ঐ ভরা পূর্ণিমায় তাকে তুমি খুঁজে দেখো
বারবার অশ্রু সজল নাও ঘাটে আসবেনা।
কে তুমি কী রাতের আশায় বসে আছ?
কী এমন কথা আছে এখনো বাকি?
এখন বর্ষাকাল কামিনী ফুটেছে
আরও আছে শুভ্র ফুলের বাহার।
এখানে কৃষ্ণচূড়া নেই
যদি কৃষ্ণচূড়া চাও আরবার এসো
তখন পরান খানি খুলে কথা কবো
তখন ভালবাসাবাসি হবে খুব
এখন শ্রাবণ মাসে রাঙা বরণ পথ আর নেই।
প্রিয় বন্ধু এবং প্রিয় মানুষ তানজিয়ার আমন্ত্রণে লিখলাম। আমার বুদ্ধিদীপ্ত গুণী বন্ধুরা, অগ্রজগণ এবং অনুজেরা লিখে চলেছেন। আমন্ত্রণ পেয়েও মন দিতে পারিনি। কি জানি কেন অনেকদিন ধরে কিছুতে মন দিতে পারছিনা। আমার লেখা, কবিতা হয়ে ওঠেনা আমি জানি। তারপরও যারা পড়েন এবং উৎসাহ দেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের জন্য ভালবাসা।
এ এক অন্যরকম ঘনকাল
এ এক অন্যরকম বর্ষাকাল
এমন বর্ষা আর আসবেনা কোনদিন
বিরহী পাপিয়া চিরকাল একসুরে কাঁদেনা
কদমের পাপড়িতে প্রতি বর্ষায় একরকম
পীত বরণ নিয়ে বৃক্ষ সাজেনা।
যে বছর কৃষ্ণ উড়ে যায়
যে বছর রাধারাণী নীল রঙা শাড়ী পরে
তার সাথে মিল খোঁজার অনটন ছিল সবকালে
এমন ব্যাকুল বর্ষা আর আসবেনা কোনদিন
এ এক অন্যরকম ঘনকাল।
শহর জানে কী তাহার রঙ
বুকের ভেতর একটা মাঠ আছে। সে মাঠের সবুজ ঘাসে তুমি একটিবার। অন্তত একটিবার তোমার পা রেখে যাও। ভেবেছিলাম ভালবাসার একটা ভ্রমর আছে। এই দেহের মাঝে অথবা প্রাণের মাঝে। দেখ এখন আর সে কথা বলিনা একবারও।
বলতে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাই। ভালবাসি এ স্পষ্ট স্পর্ধিত উচ্চারণ আমি করিনা আর। আমি সাধ্যহীন বড় দীনহীন। একথা জানেনা কেউ শুধু তুমি ছাড়া। সাধু সেজে বাজারে ঘুরে বেড়াই।
তবুও আশায় বুক বেধে আছি ভালবাসার নহর দেখবো বলে।
শহর জানে কী তাহার রঙ।
তোমার কাছে যাবো বলে হাঁটছি
কেউ কেউ মৃত্যুকে জয় করে
কেউবা মৃত্যু ভয় জয় করে
আর আমি মৃত্যুকে ভেঙে ভেঙে
গুড়ো গুড়ো করে একটা পাকা রাস্তা বানিয়ে
হাঁটছি আর হাঁটছি
শুধু তোমার কাছে যাবো বলে হাঁটছি।
দেখে নিয়ো একদিন
কী যেন হয়েছে আজকাল
কলম থেকে আর শব্দ ছন্দ
বের হয়ে আসেনা বরং
লাল লাল তাজা তাজা
রক্ত বের হয়ে আসে,
ডায়েরির পাতা উল্টালে
আর কোন পংক্তি নজরে পড়েনা
শুধু চোখ ফেটে জল আসে।
ঐ কৃষ্ণচূড়া ভালবাসার অপরাধে
তুমি আমায় আর কত লজ্জা দেবে?
একদিন বৃষ্টিতে ভিজেছি বলে
তুমি আর কত অপমান করবে?
যদি অভিমান করে চলে যাই
দেখে নিয়ো আর ফুল ফুটবেনা
যদি নিরবে নিভৃতে কেঁদে ফিরে যাই
দেখে নিয়ো আর বৃষ্টি ঝরবেনা।
মনে রেখো
কোনো গল্প অথবা
কোনো কবিতা
একগুচ্ছ কদম অথবা
নানা রঙের জারবারা
সব যদি নিরস
লাগে কোনদিন
তবে মনে রেখো
বেদনার্ত মনে
ঐ আসমানে
গাছের সবুজ পাতায়
বেগুনি ঘাস ফুলে
তোমায় খুঁজেছিলাম।