গ্রামীণ মানুষের অবসরে গল্প আড্ডার সেই মাচান এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে

0
314

গ্রামীণ মানুষের অবসরে গল্প আড্ডার সেই মাচান এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
এমন একসময় ছিল যখন গ্রাম বাংলার মানুষ একটু সময় পেলেই মাচানে বসে গল্প গুজব আর আড্ডায় মেতে উঠতো। প্রবীণ ব্যক্তিদের মুখে শৈশবের নানা গল্প আর স্মৃতিচারণ জমে উঠতো এই মাচানে। এমনকি গ্রামের গুরুত্বর্পুণ আলোচনা এবং বিচার সালিসও করা হতো এসব মাচানে বসেই। গ্রামের বাঁশবাগান,আমবাগান বা কোন বড় গাছের শীতল ছায়ায় বাঁশ দিয়ে মাটি থেকে ২/৩ ফুট উঁচু করে তৈরী করা হতো এই মাচান। এসব মাচানে ৭ থেকে ৮ জন মানুষ বসতে পারে। গ্রামের স্থান ভেদে এসব মাচান বসানো হতো।

কোস্থানে ২ থেকে ৩ টি মাচানও বসানো হতো। কাজের অবসরে মুক্ত বাতাসে বসে বিশ্রাম নেওয়া,গল্প করা সাধারণত এসব কাজের জন্যই সেসময় প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ মাচান তৈরীর উদ্যোগ নিত। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে পরিবর্তনের ধারায় মাচানে বসে গল্প করার সেই ঐতিহ্য আর নেই। এখনকার গ্রামের মানুষেরা আড্ডা দেয় বাজারের চায়ের দোকান বা কোন মুদির দোকানে। অথচ সে সময় মুক্ত বাতাসে বসে এই মাচানে বিশ্রাম নেওয়ার মজাই ছিল আলাদা।

সম্প্রতি নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের মানিক দিঘী গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়ার পথে সেই ঐতিহ্য মাচানে বসে গল্পের আড্ডা। তখন দুপুর ছুঁই ছুঁই। গ্রামের রাস্তার পাশে বসানো এই মাচানে বসে গল্প করছেন ৬/৭জন যুবক। এর মধ্যে আত্তাব উদ্দিন নামের একজন প্রবীণ ব্যক্তিও আছেন। যিনি মাচানে বসা যুবকদের গল্প শোনাচ্ছেন। আশির কাছা কাছি বয়স আত্তাব উদ্দিন বলেন,আমাদের সময় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই মাচান ছিল। এখন কোন গ্রামেই মাচান খুঁজে পাওয়া যায়না। আমাদের গ্রামের যুবকরা এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমি এখানে প্রায় আসি। অনেক সময় মাচানে না আসলে ছেেেলরা আমার বাড়িতে গিয়ে ডেকে আনে। তারা আমার কাছ থেকে গল্প শোনে। আমি অনেক পুরনো পুরনো কিচ্ছা কাহিনী বলি। শৈশবের কথা বলি। ছেলেরা মনোযোগ দিয়ে শুনে খুশি হয়। আমারও ভালো লাগে সময়ও কাটে। মাচানে বসা নরুল ইসলাম নামের এক যুবক জানালেন,আমি মাঠে গরু ছেড়ে দিয়ে অবসরে এখানে বসে গল্প শুনছি।

রাজু আহমেদ নামের আরেক যুবক জানালেন,আমার জমিতে কিছু কাজ শেষ করে এখানে বিশ্রাম নিচ্ছি সেই সাথে দাদার (আত্তাব) গল্প শুনছি। মানিক দিঘী গ্রামের লেখক,কবি ও সাংবাদিক এনামুল হক বাদশা বলেন, গ্রামের যুবকদের পাশা পাশি আমারও উদ্যোগ ছিল এই মাচান করার। এখানে সময় করে আমিও আসি। গল্প করি। অন্যের গল্প শুনি। এতে একে অপরের মধ্যে আন্তরিকতা তৈরী হয়। হিংসা বিদ্বেষ কমে আসে। কিন্তু এই ঐতিহ্য এখন প্রায় হােিয় যাচ্ছে। প্রতিটি গ্রামেই এটা ফিরিয়ে আনা দরকার।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনলডাঙ্গায় ইউএনওর নেতৃত্বে টিম আমরা ১১ জনের সচেতনতামূলক র্যালী
পরবর্তী নিবন্ধলালপুরে মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের মাস্ক বিতরণ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে