ঘরে থাকার বিজ্ঞাপন ও বাস্তবতা- রেজাউল করিম খান
“ICT Division, Bangladesh-এর এই ফ্রেমটি ব্যবহার করে আপনার প্রোফাইল ছবি আপডেট করুন।” এই বিজ্ঞাপন দেখে আনেকে তার ছবি ফ্রেমবন্দি করছেন। ফ্রেমের ওপরে নিচে লেখা অছে, “জীবন বাঁচান” ও “ঘরে আছি” -এই কথাটি। করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে এটি খুবই মূল্যবান কথা। এখন আরও কয়েকটি সংস্থা এই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।
অপরদিকে সরকারি ঘোষণায় ‘জনসাধারণের’ সুবিধার্থে (অনুরোধ ও চাপে) সরকার পোশাক তৈরি কারখানা ও মসজিদ-মন্দির খুলে দিয়েছে। আগে থেকেই বাজার খোলা আছে। দোকানও খুলবে। কোটি কোটি মানুষ এখন ঘরের বাইরে। ফেসবুকের ছবিতে দেখলাম, রাস্তায় লক্ষ শ্রমিকের স্রোত। ওরা পায়ে হেঁটে, কখনও তিন চাকার বাহনে, কখনওবা ট্রাকের পেছনে গরু-ছাগলের মতো অবর্ণনীয় কষ্টে কাজে যোগ দিয়েছে। দলবদ্ধভাবে ফসল কাটা-মাড়াই চলছে। ওরা ঘরে থাকতে পারে নি, বা বলা যায়, মুনাফাখোর লুটেরা মালিক ও তাদের সরকার ওদের ঘরে থাকতে দেয় নি। অথচ ট্রেন-বাস-লঞ্চ চালানোর অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে । অফিস-আদালত কেনো খুলছে না? এসবের কি যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ আছে? ইতিমধ্যেই যারা ফ্রেমবন্দি ছবি ফেকবুকে দিয়েছেন, তারাও কি সবসময় ঘরে থাকছেন?
সরকারি ত্রাণের কথা না বলাই ভালো। ৫ বা ১০ কেজি চাল দিয়ে একটি পরিবার কয়দিন চলতে পারে? তাছাড়া সকলেই তো আর ত্রাণ পাচ্ছে না। ত্রাণ বা ভিক্ষা সরকারের করুণা। সত্যিই কি তাই? একে খাদ্য সহায়তা বা উপহার বললে অসুবিধা কি? আর এই ভিক্ষা নেয়ার জন্য একশ্রেণির মানুষ দৌড়ের ওপর থাকে। একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কান্নাকাটি করে, ‘আমি কিছুই পাইনি’, বলে। এইসব মানুষ ঘরে থাকতে পারে না। এদের কাছে করোনার চেয়ে খাবারের সন্ধানে বের হওয়া বেশি জরুরি। একথা ঠিক যে, বিশেষজ্ঞদের ধারনা, করোনার ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সামনে আরও কঠিন দিন আসছে। ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বাড়তে শুরু করেছে। মরছেও কম না। মৃতদের অনেকেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। তাঁদের আমি কৃর্ণিশ জানাই। মৃত সকলেই তাঁদের পরিবারের ভরসা বা অবলম্বন ছিলেন, কিন্তু সরকারের কাছে তা কেবলই সংখ্যা মাত্র । কোভিড-১৯ মুক্ত, বৃষ্টিস্নাত নতুন সূর্য ওঠার পূর্বে আর কত প্রাণ কোরবাণী দিতে হবে, কে জানে!