ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড-ই কি সমাধান ! – আমীন আল রশীদ
যারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হলে এই অপরাধ কমবে বলে মনে করেন, তাদের একটি বড় যুক্তি হলো এসিড সন্ত্রাস কমে যাওয়া। কিন্তু এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বড় ভূমিকা রেখেছে যে প্রথম আলো, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি তাদের একটি প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, এসিড-সন্ত্রাসের মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় অধিকাংশ আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ৯ শতাংশ মামলায় অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে। এর বড় কারণ, এসিড-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে আসায় এখন পুরনো মামলাগুলোর প্রতি প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারি নেই। মামলা তদারকির জন্য গঠিত জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের তিন মাস পরপর বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছরে একটি সভাও হয়নি। এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্য বলছে, গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের।
সুতরাং, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন সংশোধনের ফলে সরকার সমাজের কিছু মানুষের বাহবা পেয়েছে এবং এই দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনও থেমে যাবে, কিন্তু এই আইনেরও পরিণতি হতে পারে এসিড মামলার মতো। শক্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকায় বা পুলিশের দুর্বল তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে আসামি হয় ছাড়া পেয়ে যাবে অথবা কম সাজা পাবে। বিশেষ করে যেসব অপরাধীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে; যেসব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হবে বা মোটা অঙ্কের ঘুষ খাবে; যেসব ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বেশি তোলপাড় হবে না বা ভিডিও থাকবে না—সেসব মামলার আসামিরা ধর্ষণ করলেও আদালতে তাদের অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। আর ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করতে না পারলে আদালত নিশ্চয়ই কারো চেহারা দেখে বা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে শাস্তি দেবেন না। দিতে পারবেন না।