নাটোরের ঔষধি গ্রাম গিলে খাচ্ছে পুকুর, প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন !

0
2910
nATORE KANTHO

নাটোর কণ্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের নবম পর্ব

নাটোর কন্ঠ : নাটোর শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের পার্শ্বে অবস্থিত ঔষধি গ্রাম।নাটোর সদর উপজেলার লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের পনেরটি গ্রাম নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের একমাত্র ঔষধি গ্রাম হিসেবে পরিচিত হলেও এই গ্রামে ঔষধি গাছ গাছরা ছাড়াও উৎপাদন হয় বিভিন্ন ফসল।

বিগত কয়েক বছর যাবৎ এই ঔষধি গ্রামে চলছে অবাধে পুকুর খনন। প্রতিবছর কমছে কৃষি জমি।প্রশাসনের কারসাজি আর অবহেলার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধিগ্রাম এমন অভিযোগ গ্রামবাসীর।

লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাড়আটঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী নাটোর কন্ঠকে জানান, হাতিমারা বিলে পৈত্রিক সূত্রে পনের কাঠা জমি পেয়েছেন।এছাড়াও কিছু জমি বর্গা নিয়ে তিনি তিনজন সদস্যের সংসার চালান।পুকুর কাটার কারণে বিলের পানি আগের মত আর বের হয়না। পুকুর কাটা শুরু হলে ইউএনও এসে বন্ধ করে দেন।কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে।বর্তমানে দিনে-রাতে পুকুর কাটার কাজ চলছে।এতে প্রশাসনের কারসাজি আছে বলে তিনি মনে করেন।

ইব্রাহিমপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়া নাটোর কন্ঠকে জানান, বছরের চারটা সোনার ফসল হয় এই জমিতে। জমিমালিক বেশি লাভের আশায় পুকুর কাটছে।পুকুরের কারণে বর্ষাকালে গ্রামবাসী পানিবন্দি হবে বলে তিনি মনে করছেন।

মো. জামাল হোসেন, মো. আমজাদ হোসেনসহ অনেকেরই অভিযোগ।দিন রাত ২৪ ঘন্টা চলছে পুকুর কাটার কাজ।তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।প্রশাসন ফসলি জমিতে পুকুর খননের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও এখনও বন্ধ হচ্ছেনা পুকুর খননের কাজ।এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.আলতাফ হোসেন নাটোর কন্ঠকে জানান, দেশের এক মাত্র ঔষুধী গ্রাম খ্যাত বৃহত্তম লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়ন।এই ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহাসিক হেলেঞ্চা নদী।এখানেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর হাওর-বিল অবস্থিত।এখানকার কৃষকেরা অন্যান্য আবাদ সহ নানান ধরনের গাছ গাছরার চাষ করেন।যা কিনতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন।

ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভেষজ মার্কেট।ভেষজ কৃষক ও এই ব্যবসায় জড়িত ইউনিয়নের কয়েক লক্ষ নারি পুরুষের তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ইউনিয়নের বিভিন্ন বিল ও উঁচু জমিতে শুরু হয়েছে পুকুর খনন। প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানানো হলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।

একদিকে এস্কেভেটর ও ট্রাক্টর চলাচলের কারণে শব্দ দূষণ হচ্ছে।অপরদিকে বিনষ্ট হচ্ছে সরকারে কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মিত সড়ক।এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই বিলুপ্ত হবে ঔষধি গ্রাম।বেকার হবে ভেষজ উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত সকলেই।তাই প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অচিরেই ঔষধি গ্রাম হারিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং হালিমা ভেষজ নার্সারির মালিক কবিরাজ মো. জয়নাল আবেদীন নাটোর কন্ঠকে জানান, লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ঔষধী গ্রাম।অধিকাংশ কৃষিজমি ও বাড়ির আঙ্গিনার আশেপাশে ব্যাপক হারে বিভিন্ন প্রকারের প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঔষধীজাত গাছ গাছড়ার চাষাবাদ করা হয়।স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হয়।

ঔষধী গাছ গাছড়ার মধ্যে ঘৃতকাঞ্চন, দুধসাগর, পাথরকুচি, অর্শবগন্ধা, কাশাবা, উলুটকমল, হসিত্মকর্ণপলাশ, শতমূল, বাশক, শিমুল মূল, দাউদ মূল সহ আরো অনেক প্রজাতি।এই ঔষধি গ্রামে মাটি খেঁকোদের নজর পড়েছে।বিগত কয়েক বছর হলো, প্রতিবছর শত শত বিঘা জমি গিলে খাচ্ছে পুকুর।

জমির মালিক মাটির নগদ টাকার লোভে চিরতরে হারিয়ে ফেলছে ফসলি জমি।এই সোনার মাটি রক্ষা করতে প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে অগাধ।এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ এর পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সরজমিনে দেখা যায় টুলটুলিআপাড়াবিল, লক্ষ্মীপুর পশ্চিমপাড়াবিল, কালিতলা, বড়বড়িয়া সহ লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়ন জুড়ে চলছে আবাদী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব।প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন।প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য।পরিবেশ হচ্ছে দূষণ।মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে ভেঙে যাচ্ছে কোটি টাকায় নির্মিত সড়ক।প্রতিবছরে নতুনভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বিঘ্নিত হচ্ছে খাদ্যশস্যসহ ঔষধী গাছের উৎপাদন।

অপরদিকে কমছে আবাদি জমি ও বিল। সেই সাথে কমে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ সহ প্রাণিজগতের অনেক কীটপতঙ্গ।যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মারাত্মক ঝুঁকি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।বাংলাদেশের একমাত্র ঔষধি গ্রাম রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে প্রশাসন এমন প্রত্যাশা ভেষজ কৃষকসহ সচেতন নাগরিকদের।

চলবে…

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম -কৃষাণ সাহা‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধসুনামগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে নাটোরে মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে