নাটোরে এক মঞ্চে কুদ্দুস পলক বকুল, নেই শিমুল, রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা
নাটোর কন্ঠ: নাটোরের সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজনে হয়ে গেল একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্মরণ সভা। সেখানে একই মঞ্চে নাটোরের ৩ এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিল না নাটোর সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল। এ নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। চলছে নানা আলোচনা।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কথা ভাইরাল হয়েছে। চলছে নানা কথা মালার ছড়াছড়ি। অপরদিকে নাটোর সদর আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল এর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে করোনা কালীন সময়ে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণরা মনে করছেন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। যা নাটোরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করেন সচেতন মহল।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিংড়ার এক রাজনৈতিক নেতা নাটোর কণ্ঠকে জানান, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই সিংড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ। সে বিক্ষোভ মিছিলে হামলা হয় তৎকালীন সরকার দলীয় সমর্থকদের। জামাত- বিএনপির ক্যাডার বাহিনী হামলা চালিয়ে সিংড়ায় অনেক নেতা-কর্মীকে আহত করে। সেই সময় নাটোরের নেতা আব্দুল কুদ্দুস ও শহিদুল ইসলাম বকুল আহত হন। যারা বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে এমপি হয়েছেন। তাই আজকের আ’লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদেরকে স্মরণসভায় দাওয়াত করা হয়েছে। তবে সেই স্মরণসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল কে দাওয়াত করা হয়েছিল কিনা তার সত্যিসত্যি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না এমনটাই জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা।
এদিকে নাটোরের সচেতন সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন দেশের এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক এমন মেরুকরণ দলের চেন অব কমান্ড কে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে সকালে নাটোরে অনুরূপ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর ৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস। কেন তিনি উপস্থিত ছিলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু সিংড়ায় বিক্ষোভ মিছিলে সেই সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছিলেন তাই তিনি সিংড়া পৌর আওয়ামীলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। তবে কেন সকালে নাটোরে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
অপরদিকে সিংড়ায় পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি। যদিও ব্যানারে তার নাম ছিল। এ নিয়েও রাজনৈতিক মহলে চলছে গুঞ্জন। এইসব বিষয়ে আওয়ামী লীগে বিভক্তি আরো পোস্ট হয়ে উঠছে বলেই মত প্রকাশ করেছেন সাধারণরা।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের কুশীলবদের পুরষ্কৃত করে বিএনপি-জামাত প্রমাণ করেছে এদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেন না থাকে। তাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একুশে আগস্ট বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদল নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। দেশের মানুষের দোয়া ও আল্লাহর রহমত বারবার শেখ হাসিনাকে রক্ষা করে। দেশের মানুষের সেবার জন্যই বেঁচে আছেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার(২১শে আগস্ট) সন্ধ্যায় নাটোরের সিংড়া পৌরসভা চত্বরে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের স্মরণে আয়োজিত শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসের সভাপতিত্বে শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির যে ভিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়ে দিয়েছেন, তাতে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ প্রশংসিত। শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত বিএনপি-জামাত স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এখনো তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে হলে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিভেদ ভুলে দলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নাটোর-৪(গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে রাজপথের সেই কঠিন দিনগুলিতে দলেন অগণিত নেতাকর্মী হামলা-মামলা-নির্যাতন সয়ে আজকের আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রক্ষমতায়। ত্যগী ও নিবেদিতপ্রাণ সেই নেতা-কর্মীদের সম্মান জানাতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধে দলের ভেতর ও বাহিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেসব ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলা করতে হবে রাজনীতি দিয়ে। এই মুহুর্তে দল ও দেশের স্বার্থে ঐক্যের বিকল্প নাই।
নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, দলের জন্য জীবন দেয়া নেতাকর্মীদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়া মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তিশালী হওয়া। তিনি কঠিন শোক সংবরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার এই ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।