নাটোরকন্ঠ: নাটোরে গত ৩ দিন ধরে করোনা নমুনা পরীক্ষার কোন ফলাফল আসেনি। ফলে প্রায় ৬শতাধিক নমুনা পেডিং রয়েছে। আরো নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পাঠানো যায়নি। এদিকে এসমস্ত কারনে নাটোর শহরে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সাধারণের মধ্যে কাজ করছে উৎকন্ঠা। এমত অবস্থায় নাটোরে ল্যাব স্থপনের দাবী জোরালো হচ্ছে। নাটোরের সচেতন মহল মনে করে করোনা নিয়ন্ত্রনে দ্রুত নাটোরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থপান জরুরী।
জেলায় গত রবিবার পর্যন্ত ৩০৫ জন করোনায় সংক্রমিত হলেও বর্তমানে নাটোর শহরে এই সংক্রমনের হার সবচেয়ে বেশী। শহরে আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মি, পুলিশ , সরকারী কর্মকর্তা, ব্যাবসায়ি, স্বর্ণ কারিগর, ট্রাক ড্রাইভার, ছাত্র ,ছাত্রী সহ নানা পেশার মানুষ। ইতমধ্যেই নাটোর সদরে সংখ্যা একশ ছুঁই ছুঁই ৮৯ জন, আরোগ্য লাভ করেছে ৩৩ জন। শহরের সকল মহল্লাতেই করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কমবেশী । তারপরে বেশীরভাগ মানুষ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব । চায়ের স্টলগুলো কেন্দ্রিক দেখা যায় আড্ডা দিতে। অপরদিকে বিভিন্ন দোকান ও বাজারে লোকজনের ভীড় উপচে পড়ছে। পথ চলতে গেলেও মানুষে মানুষে ধাক্কা লাগছে। দোকানগুলোর কেনা বেচার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্য বিধি।
সিংড়ায় ৬০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে ভালেঅ হয়েছেন ৩২জন।কিন্তু এ রোগ নিয়ন্ত্রন না হয়ে আরো বেশী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। অনেকেই ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে রুটি রুজির কারণে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু আড্ডাবাজরা আড্ডা দিচ্ছেন অকারণেই।
বড়াইগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। আর সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১০ জন।গুরুদাশপুরে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯ জন, আরোগ্য লাভ করেছেন মাত্র ৭ জন। এদিকে এসকল স্থানে করোনা পজেটিভদের বাড়ি লক ডাউন না করে শুধু মাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির হোম আইসলেশান পালন করছেন। কিন্তু বাড়ির অন্যদের নমুনার রেজাল্ট আসার পূর্বেই তারা দেদারছে ঘুরছেন ফিরছেন। এদের অনেককেই করোনা পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি করোনা নিয়েই বাজারে গিয়েছেন । লোকজনদের সাথে মিশেছেন। এটাও করোনা ছড়িয়ে পরার অন্যতম কারণ।
লালপুরে ক্রামাগত করোনা নতুনতুন সংক্রমনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ জন, আর সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৬ জন। ফলে সকলের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এখন প্রায় প্রতিদিনই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহভাবে। প্রায় প্রতিদিনিই থাকছে করোনা পজেটিভের নতুন নতুন খবর । গাণিতিক হারে এই বৃদ্ধির হার বিপজ্জনক। এই হারে (কোভিড-১৯ ) করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে নাটোরে নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়। যেটা পার্শবর্তী বগুড়া জেলাকে গ্রাস করেছে । সুতরায় সাবধানতা এবং সতর্কতার সাথে আমাদের প্রত্যকের চলা ফেরা করার বিকল্প নেই ।
বাগাতিপাড়ায় আক্রান্ত ২৩ জন, আর আরোগ্যলাভ করেছেন ১০ জন।এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি তা নিয়ে ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। সবার ভিতরে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। সচেতন মহল করোনা আক্রন্তের কারণে ভীত না হয়ে নিয়ম কানুন মেনে চলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ।
সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে নলডাঙ্গা উপজেলা। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৮ জন আর সুস্থ হয়েছে ৩ জন। তাই করোনার আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই উপায়, তা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিধি পালন এবং সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা। অপরদিকে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা। একই সাথে প্রয়োজন রয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তির হোম আইসলেশান নিশ্চিত করা। আ্রকান্ত ব্যক্তি যেন বাড়ি থেকে বের না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। তাহলে আ্রক্রান্তের পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করছেন সকলে। না হলে যথেচ্ছচার চলা ফেরা স্বাস্থ্য বিধি এবং সামাজিক দুরত্ব না মানলে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে শহরবাসীকে।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, জেলায় এ পর্যন্ত ৩০৫ জন করোনা পজেটিভ শানক্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ১০০ জন। মৃত্যু হয়েছে একজনের।স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। নিজেদের বাঁচার জন্য প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, করোনা নিয়ন্ত্রনে ভ্র্যাম্যমান টিম মাঠে কাজ করা ছাড়াও জনসাধারণকে সচেতন করতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। কঠোরভাবে হোম আইসলেশান মেনে চলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করেন তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি করোনা পজেটিভ রোগী বাড়ির বাইরে আসা মাত্র প্রশাসনকে জানাতে অনুরোধ জানান। একই সাথে কেউ লকডাউন না মানলে তাও জানাতে অনুরোধ করেন।