স্টাফ রিপোর্টার নাটোর কণ্ঠ:নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নে যেন বাল্যবিয়ের ধুম পড়ে গেছে। চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দেওয়া হয় স্কুলবাস সেবা। রয়েছে দুপুরের খাবার ‘মিড-ডে মিল’, পোশাক সরবরাহসহ নানা রকম প্রণোদনার ব্যবাস্থা। অথচ এই বিদ্যালয়ের ১৩ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। করোনাকালিন ছুটির মধ্যে পরিবারের চাপ, প্রেম ও উত্ত্যক্তের কারণে এসব বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে।
১৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন পযন্ত ১৩ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়। বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীরা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাল্যবিয়ের শিকার ছাত্রীদের মধ্যে একজন অষ্টম এবং ১২ জন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছিল। বিদ্যালয়ে মোট ছাত্রী ২১৭ জন। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে এসব ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাল্যবিবাহের শিকার ১৩ ছাত্রীর মধ্যে এক গ্রামের আটজন, আরেক গ্রামের চারজন এবং অপর আরেক গ্রামের একজন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলবাস সেবা, দুপুরের খাবার ‘মিড-ডে মিল’, পোশাক সরবরাহসহ নানা রকম প্রণোদনা দিচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব সুবিধা দেওয়ার কারণ হলো- ছাত্রীদের ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহ রোধ এবং শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা। অথচ করোনার ছুটির ফাঁদে এসব ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
বাল্যবিয়ের শিকার কয়েকজন ছাত্রীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় ছুটির কারণে মাসের পর মাস ঘরবন্দী তাদের মেয়েরা। ঠিকমতো পড়ালেখাও করে না। মেয়েদের মাথায় অপসংস্কৃতি ভর করেছে। গ্রামের উঠতি বয়সী ছেলেরাও বেপরোয়া। পারিবারিক সম্মানের ভয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ সালে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিদ্যালয়ের ২৫ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল। চলতি পথে বখাটেরা উত্ত্যক্ত করার কারণে অনেক ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসাও বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন বিদ্যালয়ে মাত্র ৭০-৮০ জন ছাত্রী ছিল। ওই সময় উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় অভিভাবক সমাবেশ, ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকদের তদারকি এবং নতুন ছাত্রী সংগ্রহের কারণে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আবার বেড়েছে। এখন ২১৭ জন ছাত্রী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর ও সভাপতি মো. মহসীন আলী বলেন, নারীশিক্ষা প্রসারের কথা ভেবে অজ পাড়াগাঁয়ে ১৯৯৫ সালে গড়ে ওঠে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলেছে কঠোর নিয়ম মেনে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয় লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়েছে। এ সুযোগে অসচেতন অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, চলমান পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের তৎপরতা নেই। এ সুযোগে ছাত্রীদের বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।
উপজেলার কাজী কল্যাণ সমিতির সদস্য খুবজীপুর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল বাসেদ ও চাপিলা ইউনিয়নের কাজী আশরাফুল ইসলাম জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের চাপে বাল্যবিয়ে পড়াতে হয়। গুরুদাসপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, বাল্যবিয়ে কিশোরীর অপরিপক্ব যৌন সর্ম্পকে বাধ্য করে। এতে ওই কিশোরির নিরাপত্তা, বিকাশের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ খর্ব হওয়ায় মানসিক ও আবেগগত ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই বাল্যবিয়ে ওই মেয়েটির সারা জীবনের সুস্থতা, শৈশব, নিজস্ব পছন্দ ও স্বাধীনতাকে চিরোতরে ক্ষতিগ্রস্থ করে। বিড়াজ করে প্রজনন স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ১৩ ছাত্রীর বিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।