পরের বউ (তৃতীয় পর্ব)-তন্ময় ইমরানের ছোট গল্প
(প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)
প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম দেখা হয় রেস্তোরাঁয়, মার্কেটে, কারো বাসায়, রাস্তায়, রিকশায়, বারে, ফুচকার দোকানে, লঞ্চে, নৌকায়, নদীতে, বাসে, গ্রামে, বাগানে, সি বিচে… এমনি আরো কত কত জায়গায়। স্নিগ্ধার সাথে শ্রাবণের দেখা হয়েছিল জার্মানির হার্জ পাহাড়ের নুড ট্রেইলে। ভাবা যায়- প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম দর্শন আদিম পোশাকে!
ফ্রেইকরপারকাল্টার বা ‘ফ্রি ইউর বডি’ জার্মানির নুডিস্ট মুভমেন্ট। অত্যন্ত জনপ্রিয়। তো হার্জ পাহাড়ের ডানকেরোডে গ্রাম (বা বলা যায় ছোট মফস্বল শহর) থেকে হুইপারটাই এলাকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত একটা নুডিস্ট ট্রেইল আছে।
সেই ট্রেইলে দুই ইউরোপীয় আর এক আফ্রিকান বান্ধবীর সাথে বেড়াতে গিয়েছিল স্নিগ্ধা। জানতোই না ওটা একটা নুডিস্ট ট্রেইল। যখন জানলো তখন আর না করার সুযোগ নেই। কেননা, আয়োজনটা হয়েছিল তার সম্মানেই। ইউনিভার্সিটি ডরমেটরির ওই বান্ধবীরা তার জন্মদিন উপলক্ষে ওই ট্যুর আয়োজন করেছিল। পুরো ব্যাপারটা ছিল সারপ্রাইজ।
ততোদিনে স্নিগ্ধার ইউরোপ বাস হয়ে গেছে ৫ বছর। কাজেই উপমহাদেশীয় সংস্কার কমে গেছে আগেই। সে ভেবেছিল ক্ষতি কি, এখানে তো দেশীয় কেউ নেই। অচেনা শহরে গিয়ে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেরিয়ে আবার চলে আসলে কি যায় আসে? কাজেই সে নগ্ন হয়ে ট্রেইল শুরু করেছিল। পিঠে শুধু একটা ব্যাকপ্যাক। স্নিগ্ধার বেশ মনে আছে পোশাক খুলে নগ্ন হতেই বন্ধুরা তার দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমান্ডা তো বলেই ফেলেছিল- তুমি কিন্তু ক্যাম্পাসে ছোট পোশাক পরলে বিস্তর বয়ফ্রেন্ড জোটাতে পারতে।
জিম্বাবেয়ান এলিজি তার সুগঠিত স্তন থেকে নাভির নিচে রাখা হাল্কা চুল পর্যন্ত ডান হাতের তর্জনি দিয়ে একটা কাল্পনিক সাপরেখা কেটে অশ্লীল ভঙ্গিতে বলেছিল- আহ, আমি যদি লেসবো হতাম এ সুযোগ মিস করতাম না। ঠিক এমন একটা গার্ল্ফ্রেন্ডই আমার দরকার ছিল।
আরো কিছু খুনসুটির পর তারা হাঁটতে শুরু করেছিল। ওয়েদার অ্যাপে দেখাচ্ছিল ঘণ্টা দুয়েক পর বৃষ্টি নামবে। কাজেই স্নিগ্ধাদের তাড়া ছিল। বৃষ্টি মানে পাহাড়ি পথ পিচ্ছিল। যতোটা এগিয়ে যেতে পারে আর কি।
সারি সারি লম্বা আকাশছোঁয়া গাছ পেরিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দেখা পেয়েছিল ছয়টি ছেলের একটি দলের। তিনজন চায়নিজ, একজন আফ্রিকান, একজন জার্মান৷ আর হ্যা আরেকজন অতি অবশ্যই বাংলাদেশি৷ কি ভয়ংকর ব্যাপার!
স্নিগ্ধার মনে আছে ছেলেটা যেন বাঙালি না হয়, তার জন্য সে ওই নগ্ন অবস্থায় কঠিন প্রার্থনা জুড়ে দিয়েছিল। যদিও তার জোর সন্দেহ ছিল নগ্ন নারীর প্রার্থনা কবুল হয় কিনা সে বিষয়ে। তবু সে ভেবেছিল হয়তো শেষ রক্ষা হবে৷ হয়তো ছেলেটা শ্রীলংকান, কিংবা ভারতীয় হবে।
কিন্তু না, ছেলেটা বাঙালি। নাম শ্রাবণ। ইচ্ছা করলেও এই ট্রেইলে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কেননা ছেলেদের দলটা তারা ঠিক যেখানে যাচ্ছিল সেখানেই যাচ্ছে৷ কাজেই সবার সাথে সবার পরিচয় হলো। ছেলেটা স্নিগ্ধার দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো। স্নিগ্ধাও। পাঁঁচ বছরের মধ্যে স্নিগ্ধার জীবনে নতুন কেউ এলো। অনেক সময় এমন হয় যে ক্ষুধা পেটে নেই, কিন্তু একটা টসটসে আপেল দেখলে মনে হয় এক ঝুড়ি আপেল খাওয়ার মতো ক্ষুধা লেগেছে। স্নিগ্ধা কিছু একটা অনুভব করেছিল।
হ্যা মাত্র পাঁচ বছর সময় নষ্ট হয়েছে স্নিগ্ধার। রিয়াজের সাথে সেই ১৭ বছর বয়স থেকে প্রেম। রিয়াজ ওর টিউশন মাস্টার ছিল৷ বয়সে বছর দশকের বড় রিয়াজ গিয়েছিল পোলান্ডের ওয়ার শ-তে পড়তে। প্রেম তবু থামেনি। স্নিগ্ধার যখন চব্বিশ চলে রিয়াজ দেশে এলো। তারপর তারা গোপনে কাজী অফিস গিয়ে বিয়ে করলো। পুরো ব্যাপারটা রিয়াজ সাজিয়েছিল এমনভাবে যে তার বাসায় এখনই জানালে সমস্যা হবে, বাবা অসুস্থ। কাজেই পরে জানাবে৷
স্নিগ্ধা মেনে নিয়েছিল। বিয়ের আগেও সেক্স তাদের মধ্যে হয়েছে। ফলে একটা চাহিদা তৈরি হয়েই ছিল। বিয়ের পর স্নিগ্ধাকে নিয়ে রিয়াজ গেল হানিমুনে। বাসায় স্নিগ্ধা জানালো অনার্স ফাইনালের পর ইন্টার্ন করতে ঢাকার বাইরে পাঠানো হচ্ছে। কেবল ছোটবোন তন্দ্রা জানতো সব। সে তখন ১৬ বছরের ট্যাটনা।
সপ্তাহখানেক বান্দরবনে হানিমুন শেষে তারা ঢাকায় ফিরলো। রিয়াজ চলে গেল আবার।
সে বছর ডিসেম্বরে রিয়াজের জন্মদিনে স্নিগ্ধা বিশাল সারপ্রাইজ দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী চুপিচুপি পোলান্ডের ওয়ার শ-তে একটি কলেজে অ্যাডমিশন নেওয়া। তারপর ভিসা নেওয়া। বাসায় রাজি করিয়ে পোলান্ডে হাজির হওয়া। হাতে সময় নিয়ে গিয়েছিল মাস খানেক। এই মাস খানেক সে আস্তে আস্তে গুছিয়েছে কিভাবে রিয়াজকে জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেবে সেসব। ঘূণাক্ষরেও তাকে বুঝতে দেয়নি একই শহরে রয়েছে।
জন্মদিনের দিন রিয়াজের বাড়িতে গিয়ে তার পোলিশ স্ত্রীর হাতের কেইক খেয়ে এসেছিল স্নিগ্ধা। হারামিটা বিয়ে করেছিল পোল্যান্ড এসেই।
এরপরের সেমিস্টারেই স্নিগ্ধা জার্মানির ছোট আরেকটি শহরে চলে আসে। আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
হার্জ মাউনটেইনের নুড ট্রেইলে যখন শ্রাবণের সাথে তার দেখা হয়, তখন পাঁঁচ বছরে প্রথমবারের মতো স্নিগ্ধার বাদামি স্তনবৃন্ত শক্ত হয়। অনুভব করে প্রথম দেখায় লজ্জার চেয়ে বেশি যৌনতা অনুভব করছে। আর সেটা বাকিরা বিশেষ করে শ্রাবণ বুঝে ফেলবে বলে- একমাত্র সম্বল ব্যাকপ্যাক বুকে ধরে এগোয়। ওদিকে শ্রাবণও তার যৌনাঙ্গ কিছু একটা দিয়ে, মনে হয় পানির বোতল দিয়ে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে একসাথে ১৮ কিলোমিটার পাড়ি দেয়৷
দেখা হওয়ার সেই রাতেই শ্রাবণ আর স্নিগ্ধার শরীর মিলেমিশে একাকার হয়। অবশ্য স্নিগ্ধা শ্রাবণকে বলেছিল- দ্যাখো আমি কিন্তু পরের বউ!
শ্রাবণ ওর ভেতরে ঢোকার আগে বলেছিল- পরের বউই ভালো৷ পরের বউই মধুর। তুমি সবসময় আমার সাথে থাকো পরের বউ হয়েই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বান্ধবীদের সাথে নাস্তার টেবিলে বসেছিল। এলিজি একটা মেয়নিজ মাখা এগ স্যান্ডুইচ মুখে দিতে দিতে বলেছিল- তুমি এতো চুপচাপ সেক্স করো কিভাবে! বয়ফ্রেণ্ড কিন্তু ভাগবে৷
সাথের বাকি বান্ধবীরা হেসে উঠেছিল। স্নিগ্ধা একটু লজ্জা পেয়েছিল। তাবুগুলো সত্যি বেয়াড়া রকমের কাছাকাছি ছিল। আর রাতে তাকে দেখতে পাবে না বলে শ্রাবণ বাতি নেভাতে রাজি ছিল না।
এর পরের কয়েক বছরে স্নিগ্ধা আর শ্রাবণ পুরো ইউরোপ চষে বেড়ানোর প্ল্যান করে। শ্রাবণের দেশে কেউ নেই। তাদের দেখা হওয়ার আট বছর আগে শ্রাবণ দেশ ছেড়েছিল- তখন তার দুই বোন ছিল। বড়বোনটার বাচ্চা ছিল ৬ বছরের। ছোট বোনটার বিয়ের কথা চলছিল। বছর তিনেক আগে এক কার অ্যাক্সিডেন্টে সবাই একসাথে মারা যায়!
***
পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউরোপ ট্যুর তারা শুরু করে। ফ্রান্স ঘোরে, বেলজিয়াম ঘোরে। সুইডেনে গিয়ে এক বার থেকে রাতে হোটেলে ফেরার সময় একদল উঠতি বয়সী শ্বেতাঙ্গ তরুণ তাদের ঘিরে ফেলে। তারপর চলে খুব স্বল্প সময়ের রেইপ। বাধা দিতে চায় শ্রাবণ। তখনই বড় দুর্ঘটনা ঘটে। শ্রাবণের অণ্ডকোষে তারা একের পর এক লাথি মেরে যায়।
চার-পাঁচজন তরুণ অল্প সময়ের মধ্যে কাজটা সারে। পাঁচমিনিট বড়জোর। তাদের লিঙ্গ যেন ছিল পানির ট্যাপ। ঢোকাতেই বীর্যপাত হচ্ছিল। রেইপে ব্যথা পায়নি স্নিগ্ধা। কারণ হয়তো ছেলেগুলো তরুণ ছিল৷ আর হয়তো শ্রাবণের যৌনাঙ্গ ছিল সবার চেয়ে অনেক মোটা, যাতে সে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু মনের আঘাতটা পায় ট্রমার মতো। অপমান অবশ্যই শরীরকে শেষ করে দেয়৷ রেইপ একটা অপমান। রেইপ একটা জ্যান্ত মানুষের চামড়া ছিলে নেওয়ার মতো ব্যাপার। সেরাতে চামড়া ছিলে নেওয়া হয়েছিল স্নিগ্ধার।
বাধা দিতে গিয়ে অণ্ডকোষে এলোপাতাড়ি লাথি খেয়ে আজীবনের জন্য স্পার্মের কোনো এক স্নায়ুকোষ বিকল হয়েছিল শ্রাবণের। আধঘণ্টাখানেক টানা সঙ্গম করতে পারতো সে, কিন্তু সিমেনের ভেতরে শুক্রাণু ছিল না। শুকিয়ে গিয়েছিল চিরতরে।
এর পরের দুবছর তারা ছিল জার্মানি। ডাক্তার দেখিয়েছে। মনোবিদ দেখিয়েছে৷ কিন্তু শ্রাবণের সমস্যার সমাধান হয়নি।
***
বান্দরবনের সাজেক অনেক বদলেছে দশ বছরে। প্রথমবার যখন রিয়াজের সাথে হানিমুনে আসে তখন কিছুই ছিল না। আর্মির অনুমতি লাগতো। এখনো লাগে। তবে এখন পুরোপুরি টুরিস্ট এলাকা। মার্চের এই প্রথম সপ্তাহে অবশ্য লোক খুব কম। টুরিস্ট সিজন শেষ। তার উপর আবার কি এক মহামারী চলছে।
হঠাৎ টুপটুপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। স্নিগ্ধা দেখলো তার উপরে মেঘ৷ সে জানে নিজেও মেঘের ভেতর। সে দ্যাখে তার নিচেও মেঘ।
উপরের মেঘ বৃষ্টি ঝরাচ্ছে- ওটা ভবিষ্যতের ডাক। যে মেঘে সে আছে সেটা কুয়াশার মতো- হ্যা হ্যা বর্তমান তো কুয়াশার মতোই। আর যে মেঘ নিচে, সেটা অতীত- রূপালি। ঘনকালো। আরো কতো কতো ছাই রঙা শেড তাতে।
চায়ের ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে নেয়। একটুকরো লেবু কেটে ভেতরে দেয়। জানালার পাশে বসে নিচের মেঘ দেখতে দেখতে জামিল ছেলেটার কথা ভাবে। বৃষ্টির রাতে জামিলকে পুরোটা বলতে পারেনি সে। কেবল রেইপ পর্যন্ত বলেছিল। তারপর বুঝেছিল ছেলেটা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। সে নিজেও কি উত্তেজিত হচ্ছিল? রেইপের ঘটনার চেয়ে সে অনেক বেশি কি জোর দিচ্ছিল তার আর শ্রাবণের সঙ্গম বা নিজের শারীরিক বর্ণনায়?
সে যা যা বলেনি সেসবের মধ্যে রয়েছে- শ্রাবণ আর তার এখনো বিয়ে হয়নি, অথচ তারা সংসার করছে; তারা যে দেশে আছে তা তার পরিবারের কেউ জানে না; এখানকার ব্যবসা ও বাড়িটা যে শ্রাবণেরই যা সে নিজের কাজিনের বলে চালায়; শ্রাবণের বাচ্চা হবে না;
আর এর বাইরে অতিঅবশ্যই শ্রাবণের চাহিদা অনুযায়ী একটি নাটকের কথা জামিলকে বলা হয়নি। যে নাটকে স্নিগ্ধার পারফরমেন্স অভিনেত্রী হিসেবে খুব খারাপ!
বিষণ্ণতা দূর করতে ফোনের দিকে হাত বাড়ায়। তারপর তন্দ্রাকে ফোন দেয়। তার আদরের ছোটবোন। ওপাশ থেকে তন্দ্রা ফোন ধরতেই বলে- চুপচাপ শুনে যাবি। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে বাসার সবাইকে কিছু একটা বুঝিয়ে সাজেক চলে আসবি। পারবি না!
– আপু… তুমি দেশে… কবে…
– চুপ। কথা কম বল। আগে শোন।
স্নিগ্ধা বলতে থাকে।
(চলবে)
(কিছুতেই ছোট হচ্ছে না। গল্প বাঁক নিচ্ছে। মহাযন্ত্রণার ব্যাপার। আশা করছি আরেক পর্ব লিখলেই শেষ হবে। গল্পের ক্যারেক্টার ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কিছুটা খোলামেলা লিখতেই হচ্ছে। এধরনের মনস্তাত্বিক গল্পে এছাড়া বিকল্প আমার জানা নেই। আর একথাও সত্যি আমি মানিক বন্দোপ্যাধ্যায়ের মতো প্রতিভাধর বা ভাষাজ্ঞান সমৃদ্ধ নই। মোবাইলে লিখি। কাজেই বানান ও বাক্য ভুল নিজগুণে ক্ষমা করার অনুরোধ রইলো।)