প্রসঙ্গ: বাক স্বাধীনতা – এম আসলাম লিটন

0
281
Aslam Liton

প্রসঙ্গ: বাক স্বাধীনতা – এম আসলাম লিটন

বাক স্বাধীনতা একটি অধিকার। মত প্রকাশ একটি অধিকার। আর এই অধিকার সবার।
তবে এ অধিকার কি সীমাহীন? স্বাধীনতা কি সীমাহীন?
মোটেই না। স্বাধীনতা ততটুকুই স্বাধীন যতটুকু পর্যন্ত না অন্যের স্বাধীনতা হরণ করে! আমার স্বাধীনতা অন্যের সাধীনতাকে বিঘ্নিত করলে- সেটা স্বাধীনতা নয়।
তাই বাক স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা তাই বলা নয়। যা ইচ্ছা তাই প্রকাশ করা নয়। ইচ্ছাগুলোর ভিত্তি থাকতে হবে মানুষ কেন্দ্রিক। ইচ্ছার জমিন হতে হবে মঙ্গলের পক্ষে, শুভর পক্ষে, ভালর পক্ষে।

ধর্ম মানুষের মনের গহীনে বসবাস করে। ধর্মের ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস।
আর এই বিশ্বাস মিশে থাকে মগজের কোষে কোষে… অস্তিত্বের পরতে পরতে! এই বিশ্বাসের শেকড় এত গভীরে বিস্তার করে যে, প্রবল ঝড়ও টলাতে পারে না। কোন প্রকার জোরাজুরি মানে না। তা সে পেশির জোরাজুরিই হোক বা মগজের জোরাজুরিই হোক।
তাই যুক্তি দিয়ে ধর্ম বিশ্বাসকে নাড়ানো সহজ নয়। বল প্রয়োগ, প্রকল্প গ্রহণ বা পরিবর্তনের এজেন্ডা নিয়ে তো মোটেই নয়ই। বরং ধর্মবিশ্বাসী মানুষ এহেন কাজকে ‘অনুভূতিতে আঘাত’ মনে করে। অস্তিত্বে আঘাত মনে করে। তাই বিশ্বাসীরা আরো বেশি আকড়ে ধরে বিশ্বাসকেই। কখনো কখনো বিশ্বাস রক্ষার্থে কঠোর-কঠিন হয়ে ওঠে। হিংস্র হয়ে ওঠে।
আর মানুষের গহীনের এই বিশ্বাসকেই পুজি করে, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে- আগুন আরো উস্কে দেয় পুজি-ব্যবসায়ীরা, ধর্ম ব্যবসায়রা। বলতে গেলে আগুন লাগাতেও তারা সক্রীয়, ঘরপোড়া আগুনে বেগুন পোড়াতেও তারা সক্রীয়।

ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে মানুষের এই অবস্থানকে, ব্যবসায়ীদের এই অবস্থানকে আমি মানছি কি মানছি না, তাতে কিছু যায় আসে না। এটা ঠিক কি ঠিক নয়, উচিত কি উচিত নয় তাতেও কিছু আসে যায় না। মানুষের মনোবৃত্তিই এমন- এটাই বাস্তবতা। এটাই নির্মম সত্য।

তার মানে কি বিশ্বাস নড়ে না? নড়ে। কখনো কখনো, কারো কারো নড়ে। নড়ে, বদল হয়। পরিবর্তন হয়। তবে সেটা একমাত্র যুক্তির তরবারিতে নয়। কোন নির্দিষ্ট ফর্মুলায় নয়। অনেক কিছু কাজ করে এই বিশ্বাস থেকে সরে আসতে। আর সেটা একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তির ভেতরেই ঘটে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এর প্রকার ভেদ ভিন্ন। বলতে গেলে বিচিত্র। আবারো বলছি, এটা কোন ফর্মুলা না।
সৃস্টিকর্তা, নবী-রসুলদের অবয়ব পোট্রে করা ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। ব্যঙ্গচিত্র তো নয়ই। তাই এমন কিছু কাজ তো সমর্থনযোগ্য নয়। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়! তাই বিশ্বাসী মানুষের খারাপ লাগতেই পারে। ক্ষোভ জাগতেই পারে।
আর এটা জরুরি কোন বিষয় কি? এমনটা করতেই হবে?
ভাল কাজ, মঙ্গললজনক কাজ তো কতই আছে!
হতে পারে কেউ না জেনে, অথবা এতটা না বুঝে এমনটা করেছেন। বেশ! তাহলে যখন বুঝলেন তখন দু:খ প্রকাশ করে সরে আসা উচিত।
পক্ষান্তরে কেউ যদি এহেন কাজ করেন, তার গলা কেটে দিতে হবে- খুন করে ফেলতে হবে- এটাও সমর্থনযোগ্য নয়। নাঙা তলোয়ার কোন সমাধান নয়। এটা প্রতিহিংসার সামিল। প্রতিহিংসা বা হিংস্রতা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। সমাধানযোগ্য নয়। কোন ধর্মেও এটা স্বিকৃতি দেয় না।
একটি মতাদর্শকে পাল্টাতে আরো সুন্দর সুন্দর মতাদর্শ লাগে। একটি মন্দকে বদলাতে হলে অসংখ্য ভাল কিছু করতে হয়। আবার বিশ্বাসকে যেমন বল বা ছল প্রয়োগ করে নড়ানো যায় না, তেমনি একজনের বিশ্বাস আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। আবার আমার বিশ্বাস যেমন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অন্যের বিশ্বাসও আমার কাছে শ্রদ্ধাশীল!
সবার উপরে মানবতা। হিংস্রতা নয়।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধলালপুরে তারুণ্যের অগ্রযাত্রার সাবান ও মাক্স বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধঅপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কমিউনিটি পুলিশিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে