বাগাতিপাড়ার লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ে সভাপতির ছেলে-মেয়ের নিয়োগে নিয়ে তুলকালাম

0
810

সেলিম রেজা,বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি: সভাপতির ছেলে ও মেয়ে কলেজের দুইটি পদে নিয়োগপ্রার্থী। নির্ধারিত দিনে সভাপতির উপস্থিতিতেই লিখিত পরীক্ষার পর নিয়মমত নিয়োগবোর্ড না বসে পরীক্ষাহলেই মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন করলেন ডিজি প্রতিনিধি। এরপর খাতা না দেখেই পরীক্ষার ফলাফলশীটে নিয়োগবোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণ। পরের দিন ফলাফল দেওয়ার কথা। কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষ ফলাফল না পেলেও ফলাফলশীট নিয়ে গেলেন সভাপতি। এরপর এলাকায় ঘোষণা করলেন তার নিজ মেয়ে ও তার অনুসারীর একজনের স্ত্রী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। অধ্যক্ষকে বললেন কলেজে এসে নিয়োগপত্র প্রদানসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলসহ পূণ:পরীক্ষার দাবী তুলেছেন অন্যান্য পরীক্ষার্থী ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একাংশ। ঘটনাটি ঘটেছে বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কলেজ অধ্যক্ষ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ল্যাব সহকারী এবং পদার্থ বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে বিজ্ঞপ্তীর সূত্র ধরে আবেদন করেন ১৩ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর ও মেয়ে নাসরিন এবং সভাপতির অনুসারী একজনের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনও পরীক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৮ মে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে নিয়েগবোর্ডের সদস্য ছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, কলেজের অপর এক প্রফেসর, লোকমানপুর কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ও পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য রফিকুল ইসলাম। পরীক্ষার্থী, বাগাতিপাড়ার মাড়িয়া এলাকার মাছিদুল আলমের মেয়ে নিভা খাতুন একই এলাকার আসাদুজ্জামান মকুলের মেয়ে অনিকা সুলতানা ও স্বরাপপুরের করিমের মেয়ে মৌসুমী আক্তার জানান, লিখিত পরীক্ষা শেষে তাদের একে একে বোর্ডে ডেকে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়নি। বরং পরীক্ষা হলেই এনএস কলেজের অধ্যক্ষ তাদের মৌখিক প্রশ্ন করেছেন। এছাড়া তারা অনেক ভাল পরীক্ষা দিলেও ওই দিন ফলাফল ঘোষণা না করে পরের দিন সভাপতি ফলাফলশীট নিয়ে এসে এলাকায় ঘোষণা করে, তার নিজ মেয়ে ও তার অনুসারী একজনের স্ত্রী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। তারাই নিয়োগ পাবে। তাদের দাবী, ডিজি প্রতিনিধির যোগসাজসে সভাপতি প্রকৃত ফলাফল পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও নিকট আত্মীয়র স্ত্রীকে পরীক্ষায় প্রথম দেখিয়েছে। তারা এই ফলাফল বাতিল ও পূণ:পরীক্ষার দাবী জানিয়ে কলেজ অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম দাবী করেন, সভাপতি তার মেয়ে ও নিকট আত্মীয়ের স্ত্রীকে নির্বাচিত করার জন্যই এমন কাজ করেছেন। তিনি পরীক্ষার্থীদের দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে অনতিবিলম্বে পরীক্ষা বাতিল ও পূণ:স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে ওই দুই পদে নিয়োগের দাবী জানান।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস জানান, লিখিত পরীক্ষা শেষে ওই হলেই ডিজি প্রতিনিধি একাকী মৌখিক প্রশ্ন করলে তিনি প্রতিবাদ করেন । কিন্তু ডিজি প্রতিনিধি তাতে কর্ণপাত করেননি। আবার খাতার দেখার আগেই ফলাফল শীটে তাদের স্বাক্ষর নেন। নিজের শরীর খারাপের কথা বলে পরের দিন সকলকে যেতে বলেন। পরের দিন তিনটার দিকে সকলের সামনে ডিজি প্রতিনিধিকে ফোন করলে তিনি জানান, সভাপতি এসে বাগাতিপাড়া-লালপুরের এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলকে নিয়ে তাকে চাপের মুখে ফলাফলশীটসহ কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ দাবী করেন, এলাকায় নিজ মেয়ে নাসরিন ও ফাতেমা নির্বাচিত হওয়ার কথা প্রচারের পর সভাপতি তাকে ফোনে কলেজে এসে নিয়োগপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে বলেন। কিন্তু তিনি এখনও তা করেননি। তিনি পরীক্ষার্থী ও কমিটির একাংশের আবেদন পেয়েছেন দাবী করে জানান, দ্রুতই এব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সভাপতি শাহাবুদ্দিন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, অধ্যক্ষ নেতৃত্বে কমিটির কিছু সদস্য করিমের মেয়ে মৌসুমী ও মকুলের মেয়ে অনিকাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১৩-১৪লাখ টাকার চুক্তি করেছে। তাদের নিয়োগ দিতে না পেরে এখন এমন কথা বলছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনিকা ও মকুল জানান, তারা কোন টাকা দিয়ে চাকুরীর চুক্তি করেননি। বরং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরীক্ষা চেয়েছেন মাত্র। ঘটনাটি সম্পর্কে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, তিনি এব্যাপারে জড়িত নন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি প্রতিনিধি, নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান জানান, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়ম মেনেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরের দিন অধ্যক্ষ তাকে ফোন করে সভাপতির কাছে ওই সব কাগজ দিতে বলায় তিনি দিয়েছেন। তবে অধ্যক্ষ এমন দাবী অস্বীকার করে জানান, তিনিসহ নিয়োগ বোর্ডের সকলেই পরের দিন যাওয়ার কথা থাকলেও ডিজি প্রতিনিধি শাহাবুদ্দিনকে ডেকে সমস্ত কাগজ দিয়েছেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল জানান, তিনি এখনও অভিযোগ পাননি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের দিনই ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। পরের দিন ফলাফল দেওয়ার বিধান নেই। এধরণের লিখিত অভিযোগ এখনও পাননি দাবী করে তিনি জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁকার বাঁকে বাঁকে – কবি এ কে সরকার শাওন এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধগুরুদাসপুরে মৌসুমী ফল লিচু বেপারী ও চাষীদের মাথায় হাত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে