বাঘবন ও ষোলোআনার উপাখ্যান-অমিতকুমার বিশ্বাস

0
348
Aomit

বাঘবন ও ষোলোআনার উপাখ্যান

ll সুন্দরবনের লোকজনে-ভরা দ্বীপগুলি বেশিরভাগই বাঁধে ঘেরা। বাঁধের প্রায় সবটাই মাটির। আইলার পর কংক্রিট-বাঁধের উদ্যোগ চলছে, হয়েছেও কিছু-কিছু, পোশাকি নাম যার ‘ব্লক-পিচিং’। সে তো জমিজটে ফেঁসে আছে ম্যালা। দ্বীপ ডুবে যায় যাক সাগরজলে, এবং পারলে নিশ্চিহ্নও হোক সহজে———-কিন্তু নিজের ‘সূচাগ্র মেদিনী’ দেব না কিছুতেই! ক্যান্সার-সয়াহক উপাদান: বহুপুরোনো রাজনীতি। আবার এইসব বাঁধ দেওয়ার ফলে সম্মুখে সে-এক ভয়ংকর বিপদ! দিনে দু-বার জোয়ারভাটা খেলা পৃথিবীর এই বিরল সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ব-দ্বীপ-দেশে বাঁধের বাধায় পলি ঢোকে না আর। উলটে দ্বীপ সংলগ্ন খাঁড়ি বা নদীতে সেই পলি জমে জমে নাব্যতা কমে আসে রোজ।

অগত্যা নোনাজল-সেনাদের বাঁধ ভাঙার জন্য রোজই বিপুল তোড়জোর। আর, একবার জল ঢুকলেই গ্রামবাসীদের জলের সঙ্গে চলে মাস-খানিকের যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষ হয়েও হয় না শেষ। নোনাজল ঢুকে যাবায় ফসল ফলে না আর সহজে। শেষ দীর্ঘ প্রতীক্ষা। ভারতীয় সুন্দরবনে ১০২টি দ্বীপের মধ্যে ৪৮টি বসতিহীন-বাঁধহীন। প্রকৃতির অমোঘ খেলায় সেখানে রোজ জল ঢোকে, বেরোয়, আর জলের ফেলে যাওয়া পলিতে উচ্চতা বাড়িয়ে দিয়ে যায় রোজ। বিন্দুতে সিন্ধু, টেথিসও একদিন কিনা হিমালয়! অগত্যা ওইসব বাঁধহীন দ্বীপের উচ্চতা বেড়েছে ঢের। কিন্তু বাঁধে-ঘেরা লোকজনে-ভরা বাদবাকি ৫৪টি দ্বীপ কিন্তু পূর্বের উচ্চতাতেই পড়ে আছে। ফলে নোনাজল চোখ রাঙাচ্ছে রোজ। ওঁত পেতে আছে আইলা কিংবা বুলবুলের। “নাচ মেরি বুলবুল পয়সা মিলেগা…!”—–গাইছে বুঝি বেসুরে। মানুষের চোখের নোনাজলের ধার ধারে না সাগরজল।

এদিকে বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, হিমবাহ গলে সাগরের জলও বাড়াচ্ছে রোজ। হাতার খোলের মতো হয়ে-যাওয়া বাঁধে-ঘেরা দ্বীপগুলির ভবিষ্যৎ ভাবলেই আঁতকে উঠতে। এই দ্বীপগুলি হারিয়ে গেলে নোনাজলের পরবর্তী লক্ষ্য কিন্তু কলকাতা ও দুই চব্বিশ পরগনা! বিজ্ঞানীরা বলছেন, আর পঞ্চাশ বছর! তারপর? হয়তো বনগ্রামের ইছামতী চোখ রাঙাবে নোনামস্তান-জলে সেদিন, আর আমাদের এক-একটাকে ধরে ছুঁড়ে মারবে সেই জলে। সেদিনই বুঝি-বা প্রকৃতি দেখবে মানুষের অবাক জলপান! বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইয়ের মতো হয়তো শরীর ও মনে কাঁপ তুলে ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে থাকব তখন মাঝির দিকে——-সাঁতার জানি তো? কান পাতলে এখনই যেন শুনতে পাই ষোলোআনার উপাখ্যান শেষে প্রকৃতি-মাঝির বিদ্রুপাত্মক হাসি!

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“আমি তোমার নই” কবি শাহিনা খাতুন‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধঅসমাপ্ত আত্মজীবনী,– আমার / আমিনুল ইসলাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে