ভালোবাসার ছলনা -সাহিত্যিক মাহমুদা শিরীন‘এর লেখা গল্প

0
532
Mahmuda Shirin

মাহমুদা শিরীন : সাহিত্যিক জগতে পলির বেশ সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে। যেমনি সে কবিতা লিখে তেমনি গল্প উপন্যাসও। তার ভক্তের কোনো শেষ নেই। প্রতি বছর বই মেলায় তার অনেক ভালো ভালো বই প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন জেলায় দূর দুরান্ত থেকে অনেক ভক্তরা আসে তার বই সংগ্রহ করার জন্য। এবছর বই প্রকাশিত হবে যৌথভাবে তিনজনের। একজন ছেলে ও দুজন মেয়ে।

যার গল্প ভালো হবে সেই পুরস্কৃত হবে। গল্প হতে হবে বেশ রোমান্টিক। কিন্তু পলির হাতে কিছু গল্প থাকলেও তা নিজের কাছে ভালো মনে হচ্ছেনা। আজ দুদিন ধরে পলি ভীষণ অস্থির। বার বার হাতে কাগজ কলম নিয়ে ও কিছুতেই লিখতে পারছে না। লিখতে না পারার কষ্ট কি যে তা বলে বুঝানো যাবে না। পলির বান্ধুবি অবন্তিকে ফোনে বলল – যেন পলির বাসায় আজ বিকালে আসে। বিকেল বেলা অবন্তি পলির বাসায় আসলো।

পলি অবন্তিকে বলল — জানিস আমি লিখতে পারছিনা। কোনো রোমান্টিক লিখাই আসছে না, কি যে করি !!
অবন্তি বলল -বাদ দে তোর লেখালিখি। পলি রেগে গিয়ে বলল — কোথায় ভালো পরামর্শ দিবি আর বলছিস আমি যেন লেখা ছেড়ে দেই। অবন্তি বলল – কি আর বলবো – — আমি কিছু বলতে পারবো না। তুই যা ভালো মনে করিস তাই কর।

পলি বললো — আমি প্রেম করবো চুক্তি। এমন কেউ আছে, যে একমাস পর আমি বলবো আর প্রেম করবো না। তখন সে আমাকে বিরক্ত না করে চলে যাবে। আর এর মাঝে আমার একটা সুন্দর গল্প হয়ে যাবে। কি বলিস অবন্তি। অবন্তি বলল– তোর তো ভক্তের অভাব নেই, প্রেমিকের অভাব নেই, তাদের কারো সাথে শুরু করে দে। তবে একটা জিনিষ মনে রাখিস তুই যে আগুন নিয়ে খেলছিস সেই আগুনে তুই নিজেই পুড়ে একদিন শেষ হয়ে যাবি।

পলি বলল — কি ব্যাপার অবন্তি তুই আমাকে অভিশাপ দিচ্ছিস কেনো ?
অবন্তি বলল — না অভিশাপ না পলি তুই একবার চিন্তা করে দেখ, কতজনকে তুই এই জীবনে ঠকিয়েছিস। কি লাভ এতে বল, কেউ কাঁদবে আর তুই হাসবি। তোর প্রায় প্রতিটি লিখায় কারো চরিত্র হনন করে নানা বর্ণে নানা আঙ্গিকে শুধু তাকে চিত্রায়িত করে সাহিত্যর নামে কি সুখ পাস আমি জানিনা, এটা কি ঠিক।
পলি বলে -হা ঠিক, কেউ আমার জন্য কাঁদলে কষ্ট পেলে খুব ভালো লাগে।

অবন্তি বলে – না পলি এটা ঠিক না আজ তোর অঙ্গের পরতে পরতে যৌবনের যে অফুরন্ত সম্ভার রূপের অনন্ত মহিমা, জীবন যৌবন সুন্দর টাকা পয়সা এই গুলু সব সময় মানুষের এক রকম থাকে না। সব একদিন শেষ হয়ে যায়। শেষ জীবনে তুই কি করবি।

পলি বলে– শেষ বলতে কিছু নেই, কিসের শেষ ! আমি অতীত ভবিষ্যৎ ভাবি না, আমি বর্তমান নিয়ে থাকি ।বর্তমান নিয়েই থাকতে চাই। আর যৌবন শেষ হয়ে যাবে সেটা সেই বিশ্বাসে আমি এখনো বিশ্বাসী না।
অবন্তি বলে– তোর সাথে কথা বলতে আমার ঘৃণা লাগে। তোর কথাবার্তা উদ্ভট আর অসঙ্গতি। সত্যি তুই কেনো যে এমন। তোর বাইরের রূপ অন্য রকম আর ভিতরের রূপটাই অন্য রকম। আসলে তুই একটা বহুরূপী নারী।

পলি বলে– যা যা যা আমি এমনই। যদি পারিস আমাকে ছেড়ে চলে যা। আমি ডাকলেও আসিস না, আসিস কেন?
অবন্তি বলে– হুম পলি এইটাই পারি না। তোকে ছেড়ে আমি থাকতে পারিনা। বার বার কিসের টানে যেনো তোর কাছে আসি।
পলি এবার মুচকি হেসে বলে — শোন অবন্তি আমি প্রেম না করলে লিখতে পারবো না। আমার এক বন্ধু রনি আছে। দেখতে ভীষণ সুন্দর। তাকে নিয়ে কিছুদিন প্রেমের খেলা খেলি। একসাথে ঘুরি খাই, ফোনে কথা বলি।

ওকে একটা মিথ্যে স্বপ্ন দেখাই তারপর আমার লেখাটা হয়ে গেলে ওর হৃদয়ের উপর একটা সাঁকো তৈরি করে তার উপর দিয়ে হেঁটে আমি চলে যাবো আমার সুখের গন্তব্যে। তারপর পিছনে তাকানোর কোনো সময় আমার নেই, তার কি হলো।
অবন্তি পলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

শুরু হলো রনি আর পলির প্রেম। পলি খুব খুশি। রনি এত সুন্দর সুন্দর প্রেমের ডায়লগ বলে। ফোনে এত প্রেমালাপ হয় যে মিষ্টি মিষ্টি মধুর কথায় পলির সুন্দর করে বেশ গুছিয়ে একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প হয়ে গেলো।
কিছুদিন পর বার বার ফোন দিয়ে ও রনিকে পাওয়া যাচ্ছে না। পলি অস্থির হয়ে পরে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তিনদিন হয়ে গেলো রনির কোনো খোঁজ নেই। ফোন ও বন্ধ। রনির বাসার ঠিকানা পর্যন্ত জানে না। কোথায় গিয়ে খুঁজবে।

তিনদিন পর পলির বাসার ঠিকানায় একটা ডায়েরী পাঠালো রনি। ডায়েরীর পাতা খুলে দেখে সেখানে লিখা —-
——— বহুরুপী নারী পলি।তোমার অভিনয়ের পুরো কাহিনী আমি জেনে গিয়ে ছিলাম অনেক আগেই। বন্ধু আবিরকে তুমি যেভাবে ঠকিয়েছো, একটা নয় দুইটা নয় হাজারো প্রেম করে তুমি মানুষকে ধোকা দাও। তাই আমিও সেদিন বন্ধু আবিরের কান্না দেখে কথা দিয়েছিলাম যেভাবেই হোক তোমাকে আমার প্রেমের ফাদেঁ ফেলবো।

বেশি দিন লাগেনি আমার, যখন বুঝতে পারলাম আমাকে ছাড়া তোমার জীবন যখন মুল্যহীন ,আমার জন্য তুমি কাঁদো আমাকে ছাড়া তুমি এক মুহূর্ত থাকতে পারো না তখনি আমি আস্তে আস্তে সরে গেলাম আর একটা কথা শুনলে তুমি অবাক হবে আমি এখন চুটিয়ে প্রেম করছি তোমারী বান্ধুবি অবন্তীর সাথে। কারন সে ভালো মনের মানুষ তোমার মতো নোংরা মনের না।

শেষ একটা কথা বলে যাই, তোমার টাকা পয়সা যৌবন তুমি কতো দিন ধরে রাখতে পারবে বলোতো. এবার থামো ! অনেক হয়েছে ভালো হয়ে যাও। আবেগ বলো, খামখেয়ালীপনা বলো, অভিনয় বলো- তোমার লেখার স্বার্থে বলো ভালো তো বেসেছিলে আমায়। খুব মায়া হয় তোমার জন্য পলি.। শুভ কামনা রইলো, ভালো থেকো। [[রনি]]

— পলি চিঠিটা পড়ে মাথায় আকাশ ভেংগে পরার কথা, না পলি মুচকি মুচকি হেসে বলে আপোদটা নিজে নিজে বিদায় নিয়েছে। আর এটাও জেনে ভালো লাগছে অবন্তীর সাথে তার সম্পর্ক হয়েছে। আসলে অবন্তী একটা ভালো মেয়ে। কয়েক বছর পরে যদি রনিকে ফোনে পাই বা দেখা হয় আমি আমার সেই ডায়লগ বলে যাবো ও কাঁদো কাঁদো গলায় বলবো তুমি বিশ্বাস করো আমি তোমাকেই ভালোবাসতাম এখনো বাসি।

কেনো বলবো জানো—এসব কেতাবী বুলি আউড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল মাত্র। আমি চাই তুমি পুড়ে পুড়ে শেষ হয়ে যাও। মনে মনে ভাববে– আহা কি যে কষ্ট দিয়ে আসলাম এই ভেবে তুমি নিজেই কষ্ট পেয়ে মরবে।

যদিও বোবা কান্নায় বুকের ভিতরটা আছড়ে মরছিল পলির। তবুও সাহসে বলে উঠলো —
হিংসা করবো, জলে ডুবে মরবো, প্রশ্নই উঠে না– আমি তো ভালোবাসি গল্প আর কবিতাকে, ওরাই তো আমার জীবন।।

Advertisement
উৎসMahmuda Shirin
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে আজ দুই স্বাস্থ্যকর্মী ও ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে করোনা রোগী, মানছেনা লকডাউন, প্রশাসন নিশ্চুপ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে