মার্বেল খেলা- চন্দন আনোয়ারের অনুগল্প

0
377
Chandan

মার্বেল খেলা- চন্দন আনোয়ার

উন্মাদের মতো বুঁদ হয়ে থাকতাম মার্বেল খেলায়। মার্বেলের চেয়ে মুল্যবান কিছু পৃথিবীতে আছে জীবনে তখন কল্পনাও করিনি। ঈদের পুরোটা দিনই মার্বেল খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে কতোদিন যে শুধু মার্বেল খেলে ধুলোবালির শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরেছি! যেদিন জিতেছি প্যান্টের দুই পকেট ভরে গেছে বিচিত্র রঙের মার্বেলে, আনন্দে লাফিয়ে বাড়ি ফিরেছি। সেসব মার্বেল কখনো বাঁশের ভেতেরে কখনো মাটির নিচে আবার কখনো ধানের গোলার ভেতরে যক্ষ্ণের ধনের মতো লুকিয়ে রেখেছি যেন কেউ চুরি না করে। আর যেদিন হেরেছি সেদিন শূন্য পকেটে মন ভার করে বাড়ি ফিরেছি বেলাশেষে; কোনোদিন কেঁদে চোখের জল নিয়ে ফিরেছি,। দাদি তখন দাঁত দিয়ে আঁচলের গিঁট খুলে হরিণ মার্কা ১ টাকা হাতে দিয়ে কান্না থামিয়ে না হয় মন ভালো করে গোসলে জন্য কুয়ার ধারে নিতেন। কুয়া থেকে পানিভর্তি বালতি তোলার ফাঁকে না হয় শরীরের পানি ঢালার ফাঁকে অথবা সাবান মাখার ফাঁকে বলতেন, আজ হেরেছিস, কাল জিতবি, কাঁদছিস কেন? আজই শেষ খেলা নাকি রে পাগল! শিশুমন, তবু এটুকু বুঝেছি, খেলার শেষ নেই, তাই কাঁদলে চলবে না, কাল মতলব-ইব্রাহিম-নজরুলদের যে করেই হোক হারাতে হবে। ধুলোবালিতে একাকার প্যান্ট বাংলা সাবান মেখে পরিষ্কার করত দাদি, আর গোসলোত্তর উন্মুক্ত শরীর নিয়ে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট চোখে তাকিয়ে দেখতাম আর ভাবতাম, কাল যে করেই হোক মতলব-ইব্রাহিম-নজরুলদের হারিয়ে প্যান্টের দুই পকেটে ভরে ফেলব। দাদি সেদিন বলেননি বা শেখাননি; বলার বা শেখানোর মতো জীবনদীক্ষা আমার অশিক্ষিত দাদির ছিলও না। হার-জিতের খেলায় কোন খেলোয়াড় শুধু জিততেই খেলে, জিতে গেলে বেলা শেষের অপেক্ষা করে না। (অনুগল্প)

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে সংগৃহীত নমুনা রেজাল্ট পেন্ডিং থাকায় জনমনে শংকা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের সিংড়ায় বাঁশঝাড় থেকে দিনমজুরের মরদেহ উদ্ধার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে