লেখক নাজনীন নাহার‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
1208
Naznin Nahar

নতুন ভোর নতুন জীবন

কতগুলো দুঃস্বপ্নের রাত পেরিয়ে আজকের সূর্য সকাল,
ঠিক যেন এক মুঠো ভালো আছি এর বায়না সমেত আমার দরজায় কড়া নাড়ল।
কড়া নাড়ল ভোরের শীতল পাটি বাতাস।
আমি একটু একটু করে সমর্পিত হলাম,
এই মন ভালোর জন্মদিনে,
আমার চারপাশে সব প্রিয় মানুষের হাত আমারই জন্য প্রার্থনাতে ঊর্ধ্বমুখি।
আমি বেঁচে থাকার বিশুদ্ধ অক্সিজেন টেনে নিয়ে আমার ফুসফুস পরিপূর্ণ করলাম।
আমি আবারও পৃথিবীর তাবৎ রঙ, রূপ, গন্ধের স্পর্শ নিলাম।
নিলাম জন্ম জন্মান্তরের ভালো থাকার সঞ্জিবনী ভালোবাসা।
পৃথিবী জুড়ে শত কোলাহল আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে,
কানে কানে বলছে এসে,
এখনও কত কথা হয়নি বলা।
কত প্রেম, কত প্রণয় তোমার তরে ভীষণ ব্যাকুল,
কত-শত কিশোরী সুখ হয়নি যাপন।
কত কত দেশের রূপ হয়নি দেখা।
কত প্রিয় সান্নিধ্য এখনও অপেক্ষায় তোমার।
জীবনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটি এখনও লেখা হয়নি আমার,
পৃথিবী বিখ্যাত কবিতারা এখনও সৃষ্টি হয়নি আমার লেখনীতে।
পৃথিবীর সব সুগন্ধি অনুরাগে সিক্ত হওয়া হয়নি এখনও আমার।
বলতে না পারা হাজারো মানুষের গল্প গুলো আমি বলব বলে যে মনস্থির করেছি,
তা-ও হয়নি বলা।
আমার এখনও অনেক অনেক কাজ বাকি।
আমার জন্য অপেক্ষায় আমার প্রিয় বন্ধুরা,
এখনও খুশি নিয়ে মুঠো মুঠো।
আমার স্বপ্ন গুলো অপেক্ষায় আছে আমাকে নিয়ে সাফল্যের শিখরে উঠবে বলে।
আমার প্রিয় আত্মজ অপেক্ষায় আছে আমার বুকে আসবে বলে।
মন ভালোর এই জন্মদিনে তাই আবার আমার ঘুম ভাঙ্গল,
আবার স্রষ্টা নতুন ভোরে আমার নতুন জীবনে আনল।
হাজার বছর বাঁচব আমি আমার শত সু-কর্ম মাঝে,
নতুন জন্ম সমর্পিত হবে স্রষ্টার সৃষ্টির সুখ ও কল্যাণে।

যদি না ফিরি

আমি যদি সত্যি সত্যি চলে যাই তোমাদের ছেড়ে,
আমার যদি আর ঘুম না ভাঙ্গে।
না ফেরার দেশে যদি নির্ধারিত হয়েই যায় আমার গন্তব্য।
আমার কিছু স্মৃতিচিহ্ন রয়ে যাবে,
আমার সকল প্রিয় অন্তরে।
খুব করে কাঁদবে কেউ কেউ।
কারও কারও মনে থাকব তার মৃত্যু অবধি।
দের মাসের ব্যাবধানে বাবা মা চলে গেলেন এইতো নিকট সময়ে,
খুব করে দুঃখ পাওয়া কান্না বুকে ধরে রাখার তারাও যে নেই।
আমার চোখ দু’টো কেমন বুজে বুজে আসে,
হাত পা অসার লাগে মাঝে মাঝে।
মনে হয় আমি ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাচ্ছি।
আমি যদি সত্যি চলে যাই,
আমি চলে গেলে,
যার সব কিছু বদলে যাবে আমার অবর্তমানে,
সে আমার সন্তান।
খুব করে দুঃখ বুকে নিয়ে ও বাঁচবে আজীবন।
সৃষ্টিকর্তাকে বলা আছে,
আরও একটু বেশি খেয়াল যেন রাখেন,
আরও একটু বেশি যত্নে যেন রাখেন আমার সন্তানেরে।
কিছুই রেখে যেতে পারলাম না।
আসলাম, খেলাম, চলে গেলাম,
গরু ছাগল কুকুর বিড়ালের জীবন যাপন করে।
এখানেই শেষ আমার সব সব কিছু।
আমার সমাপ্ত সমাধিতে কোন আলোকিত অক্ষর থাকবে না,
থাকবে না কোন সুনির্দিষ্ট সু-কর্ম যা করার খুব ইচ্ছে ছিল আজীবন।
বাবাকে খুশি করতে গিয়ে পছন্দের সাবজেক্টে পড়া হয়নি।
মা’কে খুশি করতে গিয়ে বাবার মতামত মেনে নিয়ে জীবন।
ভাইকে খুশি করতে গিয়ে সময়ের কাছে পরাজিত।
বোনকে খুশি করতে গিয়ে নিরুত্তর অতীত জীবন।
স্বামীকে খুশি করতে গিয়ে পরাধীনতার আনন্দ যাপনে প্রেমোময় সুখেন্দু বর্তমান।
সন্তানকে খুশি করতে গিয়ে সমোঝোতার পরিপূর্ণ পৃথিবী।
বন্ধুদের খুশি করতে গিয়ে ভালোবাসার দেবী তিলোত্তমা।
প্রতিবেশির খুশিতে সানন্দা সুহাসিনী।
শ্বশুর বাড়ির খুশির কেন্দ্রবিন্দুতে সহনশীলতার কাঠপুতলা।
কিছুদিন মনে রাখাবার মতো একটা আদর্শ মূর্তি নিয়ে গেলাম পরিবারের।
একজন ভালো মেয়ে, একজন ভালো বউ,বোন,ননদ,বন্ধু, স্ত্রী, মা আর প্রণয় প্রেয়সী।
ভালো মানুষও বলবে অনেকেই।
এইটুকু নিয়েই চলে যাচ্ছি হয়তো।
হয়তো আর দেখা হবে না।
আর ফেরা হবে না তোমাদের প্রণয় কোলাহলে।
হয়তো ফুসফুস, হৃদপিণ্ড কিংবা মস্তিষ্ক কারণ হবে,
আমার মৃত্যুযজ্ঞের।
হয়তো আমার আর ফেরা হবে না।
আর ভাঙ্গবে না ঘুম।
আমার লিখিত অলিখিত সকল অপরাধ ক্ষমা করো প্রভু।
তোমরাও সকলে ক্ষমা করে দিও আমায়।
ক্ষমা করো আমায় পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকুল।

২৬.০৬.২০২০

নিয়ত নির্বাসন

আমি চাই না।
আমি কখনই চাই না যে,
আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় মানুষ কোন দুঃখ পাক।
তবুও মানুষ আমি। কী জানি কীভাবে কী করে ফেলি।
তুমি কি জানো কাব্য?
তোমার মতো আমারও মাঝে মাঝে,
কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।
কারও কাছে যেতে ইচ্ছে করে না।
কাউকে পেতে ইচ্ছে করে না।
কাউকে নিতে ইচ্ছে করে না।
এভাবে বলে না কবিতা।
এ যে আমার কথাই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো।
তুমি বলেই,
কথাগুলো কত নির্দিধায় আমি তোমাকে বলতে পারি কাব্য।
তোমাকেই যেমন বলতে চাই,
পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর মোহনীয় প্রেমময় কথাগুলো।
ঠিক তেমনি তোমাকেই বলতে চাই,
আমার না বলা সব সব দুঃখ গুলো ঠিক তোমার চোখে চেয়ে।
পৃথিবীর আর কেউ না বুঝলেও তোমার তো আমার এই উপলব্ধিটা,
এই আমিকে বোঝা উচিত কাব্য।
আমি তোমাকে বুঝি কবিতা।
বুঝি বলেই তোমাকে কাছে না পাওয়ার দহন,
আমাকে ভয়ঙ্কর ভাবে পোড়ালেও,
তোমার দরজায় অযাচিত কড়া নাড়ি না কখনও।
তোমার নিরাপদ দূরত্বের ভালোবাসা গুলো বুকে নিয়ে দুঃখ নদী বাই।
এভাবে বলো না কাব্য!
আমি আমার আনন্দ ছাড়া,
আমার দুঃখগুলো কাউকে দিতে চাই না কাব্য।
তোমাকে দিতে না চাওয়া দুঃখ গুলোর দহন,
আমায়ও কী কম পোড়ায়!
তুমি কী বলতে পারো কাব্য?
প্রিয় মানুষের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হয়?
নাকি আড়াল?
ভালোবাসায় একটা গহীন গোপন বেদন থাকে কবিতা।
ঠিক বলেছ।
খুবই ভয়ানক সে বেদন কাব্য!
এ বেদন যে জয় করতে পারে,
সেই তো সাধু।
জানো কাব্য।
এই বেদন জয় করায় যে অন্তর্দহন,
তা কেবল ভুক্তভোগীই জানে।
এটা খুব কঠিন কাজ কবিতা।
শুধুমাত্র প্রজ্ঞাবান বিশুদ্ধ মানুষই পারতে পারে ।
জানি কাব্য।
জীবনের সত্য দহনে পুড়ে পুড়ে আমি আজকের এই কবিতা।
তোমার কী মনে হয় না কাব্য।
এতেও এক ধরনের প্রচ্ছন্ন ভনিতা থাকে!
থাকে একটা সুতীক্ষ্ণ সেফটিপিনের খোঁচার মতো প্রহসন!
যেমন প্রাণের চেয়েও প্রিয়জনের কাছে,
কৌশলে গোপন করতে হয় নিজেকে !
ঈশ্বরও মাঝে মাঝে ভনিতা করেছেন কবিতা।
আর প্রকৃতি!
সেও কী কৌশলে কৌশল পাল্টায় না কখনও কখনও!
জীবনটা অনেক ছোট কবিতা।
জীবনকে আনন্দে যাপন করো।
আনন্দ!
কাকে তুমি আনন্দ বলবে কাব্য!
নিজের ভেতরে নিজেকে গোপন,
প্রিয়জনে দহন গোপন!
মুক্ত হয়ে মুক্তি বিসর্জন!
উপভোগে ভনিতা থাকলে সে উপভোগ কি যথার্থ হয় কাব্য!
এভাবে বলে না কবিতা!
বলি না কাব্য।
গুটিয়ে থাকি লুকিয়ে রাখি।
বুকের জমাট নীলচে রক্তে,
নিজের আমায় লুকিয়ে বাঁচি।
আসলে কী জানো কাব্য।
পৃথিবীতে নিজের বলতে নিজেই আপন!
এটাও সবাই বুঝি না।
সব সময় বুঝি না।
মনেও রাখি না।
তাইতো নিজেকে ছেড়ে বিবাগী সুখে,
অহর্নিশ বিবাগী হয় এ মন।
যার নাম দেই আমি নিয়ত নির্বাসন

কবুল করুন আমার সমর্পণ

হে পৃথিবীর নিয়ন্তা!
আমি আপনার কাছে নতজানু হয়ে মিনতি করছি।
আমি আর নিতে পারছি না এতো মৃত্যু।
আমাকে ক্ষমা করুন।
আমার যাবতীয় ভুল, ত্রুটি, ঔদ্ধত্য।
আমার অতীত, বর্তমান আপনি ক্ষমা করুন নিয়ন্তা।
পৃথিবীর মানচিত্রে আমি আর কোন বীভৎসতা দেখতে পারব না।
এর চেয়েও ভয়ানক ভবিষ্যতের পথে হাঁটতে পারব না আমি আর।
আমি সামিল হতে পারব না,
এভাবে নিয়মিত আমাদের মৃত্যুর মিছিলে।
আমি আর এক মুহূর্তও বাঁচতে পারব না,
আমার আর কোন প্রিয়জনকে হারিয়ে।
আমাকে ক্ষমা করুন মহামান্য।
ক্ষমা করুন সকল অজ্ঞতা আমার।
আর ক্ষমা করুন আমার তাবৎ সীমাবদ্ধতা।
এই আমি আপনার কাছে সমর্পিত হলাম।
আমি অতি ক্ষুদ্র, তুচ্ছ, নগণ্য হে নিয়ন্তা।
এবার আমায় মুক্তি দিন।
আপনার সকল মানব কুলের অপরাধ,
আমার মাথায় তুলে নিলাম।
আপনার প্রতিশোধের আগুনে আমাকে পুড়িয়ে,
সমাপ্ত করুন এ হত্যাযজ্ঞ।
আমাকে গ্রহণ করুন মহামান্য।
নিরাপদ করুন তাবৎ মানুষের জীবন যাপন।
হে প্রিয় মহামান্য!
আমি এ অবধি যতখানি শূন্যতা দেখেছি আমার দু’চোখে।
যথেষ্ট হয়েছে।
প্রিয় সন্তান, স্বামী, ভাই,বোন,প্রিয় জন,প্রিয় বন্ধু,
এদের ছাড়া আমি আর কোন পৃথিবীর রঙ দেখতে চাই না।
যাপন করতে চাই না,
দুঃখের কাফনে মোড়ানো জীবন আমার।
হে প্রিয় সৃষ্টিকর্তা!
আমি জানি আপনার খেয়াল খুশির একটা অনুষঙ্গ,
আমি ও আমরা গোটা মানব জাতি।
আপনার একমাত্র খুশিতেই পৃথিবীতে নাজিল হয় রহমত।
আপনার ইশারায় সকল জন্ম-মৃত্যু।
যখন তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ!
যখন খুশি মহামারী!
আর নিতে পারছি না হে নিয়ন্তা।
এবার মুক্তি দিন।
হে প্রিয় মহামান্য !
একে একে ভেঙ্গে পড়ছে,
পৃথিবীর অর্থনীতি,স্বাস্থ্য ব্যবস্থা,খাদ্য উৎপাদনের মেরুদণ্ড।
একটা ক্ষুদাতিক্ষুদ্র অনুজীবের কাছে সম্পূর্ণ পরাস্ত আজ সৃষ্টি কুল।
আর এদিকে কতটা বোকা আমরা,
হায় রে মানব জাতি !
এখনও কেবল একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে, আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি অপদার্থ সব।
প্রিয় নিয়ন্তা!
আমি তাই সর্বান্তকরণে ক্ষমা চাচ্ছি।
আপনি আমাকে মুক্তি দিন।
আমাকেই বরং পাঠিয়ে দিন এবার মৃত্যুর ওপারে।
সকল প্রতিশোধ একাত্ম করে নিন,
আমার মৃত্যুদণ্ডে।
এরপর আপনার পৃথিবী নিয়ে আপনি মেতে থাকুন আপন প্রতিশোধে।
আমি যে আর কোন মৃত্যু নিতে পারব না মহামান্য।
আমাকে অনুগ্রহ করে জীবন নামক শাস্তি থেকে মুক্তি দিন।
আমাকে গ্রহণ করুন মহামান্য।
কবুল করুন আমার সমর্পণ।
ক্ষমা করুন সকল মানব জাতিকে।
মুক্তি দিন এ ভয়াবহ অভিশাপ থেকে।
কবুল করুন আমার সমর্পণ।

সিঁদুরের দহন তিলক

সিঁথিতে চকচকে সিঁদুরের অহঙ্কারে সেজেও,
অধিকারের প্রহসনে যে নারী জীবন,
বিতণ্ডতায় কাঁদে।
যার পাণ্ডুলিপিতে কখনও কখনও ভেসে উঠে,
কালান্তরের অভিশাপ।
আমি আজ সেই অভিশাপ,
উত্তরণের গল্প বলবো।
আহ্ হা!
দুঃখের কেমন নির্লজ্জ দগদগে ঘা।
যেন অনায়াসে মাছিদের ভনভনানি চারপাশে।
কেমন হৃদয় পুড়ে কর্পূরের ছাই ছাই গন্ধ উড়ে, সিঁদুরের গা ঘেঁষে।
যেন কিছুই করার নেই।
এ যেন নির্মম সত্যটাকে মাটি চাপা দিয়ে
সভ্যতার ইতর নীতিতে অটল থাকার প্রয়াস।
আমি বলি কী!
এ_কে চলো বদলে দেই।
চলো বদলে দাও।
স্বা-অধিকারের সম্মানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে,
ঘটমান বর্তমানকে প্রতিষ্ঠিত করো।
প্রতিষ্ঠিত করো সাঙ্ঘাতিক এক বৈপ্লবিক ভবিষ্যতে।
যেখানে নিঃশ্বাসের প্রতিটি বিন্দু পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ অক্সিজেনে খুঁজে নিবে,
জীবনের পরিতৃপ্ত সায়র।
এভাবেই কেবল নিয়মিত সত্যাতিসত্য সহসের অনুশীলনে,
সভ্যতার পাণ্ডুলিপির বদল হবে।
নারীর সিঁথির সিঁদুর রূপ নিবে,
পুরুষের বিবাহ তিলকে।
কানুনের উলুধ্বনি পরম প্রেমের অনুশাসনে,
প্রিয়তম স্বামীটির গলায় পড়িয়ে দিবে,
বিবাহ নামক সম্মানিত পৈতা।
মর্যাদা রূপ নিবে নব্য আধুনিকতার সুপুরুষ চিত্রকর্মে।
আফসোস আর কান্নাগুলো বণ্টিত হবে সমান অধিকারের বাটখারায়।
পৃথিবীর আর কোন নারী কোন প্রহসনের বৈবাহিক নামকরণে,
একলা কাঁদবে না।
মনুষ্যত্বের আয়নায় ফুটে উঠবে কেবল,
মানবিকতা আর সম পর্যায়ের প্রতিবিম্ব।
পতি, অধিপতিদের চোখের জৌলুস ম্লান হবে।
প্রস্ফুটিত হবে পৃথিবীর মানচিত্রে,
শান্তিময় সভ্যতার সুস্পষ্ট সম্পর্কের,
নবতর এক বায়োগ্রাফি।
প্রতিষ্ঠিত হবে নতুন পরিচয় পত্র।
যেখানে ইচ্ছে-অনিচ্ছে , ভালো-লাগা,
ভালোবাসা, প্রেম ও স্বাধীনতাগুলো,
নারী পুরুষ উভয়ের অস্তিত্বে,
সমান সাহসে সাজবে।
বাঁচবে মুক্তির আনন্দ অনুরাগে,
পৃথিবীর তাবৎ নারী এবং পুরুষ।
তিলক জায়গা করে নিবে,
সিঁদুরের বিকল্প বন্দনায়

আজকাল

আজকাল ভালোবাসা গুলো হাতের মুঠোয় লুটোপুটি খায়,
প্রেমগুলো সংসার পাতে আঙুলের নৃত্য কলায়।
সম্পর্কগুলো ভাসতে থাকে মহাকাশের নক্ষত্রিয় বায়ুমণ্ডলে।
বাবা থেকে মা,স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা
বন্ধু থেকে বান্ধব।
সকলের বৃত্তান্ত গুলো ঘুরপাক খায় ভার্চুয়াল সিল্কী কেমিস্ট্রিতে।
জীবন থেকে জীবনের গল্পগুলো সময়ের শোষণে
প্রাণহীন যৌবনে ঘুমায়।
তারুণ্য আজ রাতের পর রাত জেগে নির্মাণ করে কিছু মেরুদণ্ডহীন ভবিষ্যত।
বয়োসন্ধির বায়োগ্রাফিতে জ্ঞান পলাতক মস্তিষ্ক,
এঁকে ফেলে আস্ত একখানা রঙিন নেশার স্বর্গ।
এ্যাপস, গেমস,সিরিজ থেকে শুরু করে, নিকোটিনের মিশ্র ধুম্রজাল,
একের পর এক নীল নেশায় ডুবিয়ে বিকলাঙ্গ করছে,
জীবনের সব স্বর ও ব্যাঞ্জনবর্ণ।
যেখানে যৌক্তিক সব অ-যুক্তির পাকাপোক্ত বিশ্লেষণে,
প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুখ লুকায় অথর্ব সমাজ সভ্যতায়।
মূল্যবোধের নিয়ত ক্ষত হয়ে নৈতিকতা বন্দি পড়ে থাকে কেবল মাত্র বইয়ের মেঝেতে।
মানবতা ব্যাক পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়,
আধুনিক উত্তর গ্লোবাল সভ্যতার,
সুবিজ্ঞ মহামান্য সমাজ।
আজকাল নিয়মিত বোকা বাক্সেই নির্মিত হয়,
জাতি, ধর্ম, সভ্যতা, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় নীতির নির্ধারণ।
আশার দীপাবলি আজকাল সূর্য গ্রহণের কবলে পড়ে দিন দুপুরে ঘুমায়,
নিয়ন আলোর বিষণ্ণ বারান্দায় ব্যর্থতারা হুটোপুটি লুটোপুটি রাত নামায়।
তবুও,
নিভু নিভু প্রাণস্পন্দন বাঁচিয়ে রাখে আগামীর স্বপ্ন মশালের প্রজ্জ্বলন।
তথাপি,
দিশেহারা অস্থির সম্পর্কের বর্তমান,
কত সহজে গিলে খায় আমাদের বিশ্বাসের মানচিত্র।
যুগের পর যুগ সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র স্বার্থ নেশার ঘুমঘোরে পরিচালনা করে,
অর্থ, শিক্ষা, রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্র বিধান।
তারই ফলশ্রুতিতে,
ক্ষয় কাশে ভুগে ভুগে নুয়ে পড়ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পরাধীনতার ক্যানভাসে।
এডিসের অনিয়মিত কামড়ে পুরো জাতি যেমন নিয়মিত মৃত্যুর অসুখে ঝিমায়,
তেমনি বিষাক্ত মরীচিকা হয়ে চোরাবালির পাঠশালায় গনিতের ক্লাস নেয় বিবেকের ভুল সংবিধান।
প্রতিনিয়ত হিসেবের গোড়ায় গণ্ডগোল বাঁধিয়ে, সাফল্যের ফিতা কাটে প্রহসনের কাঁচিতে।
আমাদের সম্পর্ক থেকে সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসে বিকলাঙ্গ মানবতা।
এভাবেই আজকাল জীবন পাড়ায় নিয়মিত ঢুকে পড়ে সুনামির নোনা জল,
এক এক করে ডুবে যায় আমাদের নানাবিধ সম্পর্কের আধুনিক উত্তর নগরায়ন।
স্থবির হয়ে পড়ে থাকে,
জাতির ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদণ্ডের শেষ খণ্ডত!
আজকাল এভাবেই,
নিয়মিত অনিবার্য অনিয়মের অনুশীলনে,
আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি যান্ত্রিক সভ্যতার মখমলি প্রাচুর্যে !

Advertisement
উৎসNaznin Nahar
পূর্ববর্তী নিবন্ধরজনী -কবি আজাদুর রহমান‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে ডিজিটাল মেলা উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের অনলাইন সেমিনার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে